দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এবার আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়ায় পা রাখছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প। দেশের অন্যতম তৈরি পোশাক রপ্তানিরকারক প্রতিষ্ঠান দুলাল ব্রাদার্স লিমিটেড বা ডিবিএল গ্রুপ ইথিওপিয়ায় পোশাক কারখানা স্থাপনে বিনিয়োগ করেছে। কম উৎপাদন খরচ, বিদ্যুৎসহ টেকসই অবকাঠামোর নিশ্চয়তার কারণে প্রতিষ্ঠানটির এই বিনিয়োগ বলে জানা গেছে। আর বিনিয়োগকৃত এসব কারখানা থেকে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি হবে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশে।
জানা যায়, ইতিমধ্যে কারখানা তৈরি অবকাঠামোসহ অন্যান্য কাজও তারা শুরু করেছে। ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে কারখানার নির্মাণকাজ শেষ হয়ে যাবে। আর নির্মাণাধীন এসব কারখানায় প্রায় চার হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে বলে প্রত্যাশা করছেন প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তবে বেশির ভাগ শ্রমিক সেই দেশ থেকে নেওয়া হলেও মধ্যম সারির কিছু কর্মকর্তা যাবেন বাংলাদেশ থেকে।
প্রতিষ্ঠানটির আশা, ২০১৭ সালের মার্চ বা এপ্রিলের মধ্যে তাদের তিনটি কারখানা তৈরি হবে। এগুলোর মধ্যে পোশাক কারখানা ছাড়াও আরো দুটি প্রতিষ্ঠান হবে অ্যাকসেসরিজ এবং প্রিন্টিং কারখানা। এসব প্রতিষ্ঠানও নির্ধারিত সময়েই উৎপাদন শুরু করবে।
সম্প্রতি কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ভাইস চেয়ারম্যান এম এ রহিম বলেন, পোশাক আমদানিকারকদের সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখেই তাঁর প্রতিষ্ঠান প্রায় তিন কোটি ডলার (৩০ মিলিয়ন ডলার) বিনিয়োগ করছে ইথিওপিয়ায়।
প্রতিষ্ঠানটির ভাইস চেয়ারম্যান আরো বলেন, ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবার পাশের শহর মেকেলে ৭৫ হেক্টর জমির ওপর গড়ে উঠেছে ডিবিএলের পোশাক কারখানা। ইতিমধ্যে কারখানা ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে।
এম এ রহিম বলেন, সুইডেনভিত্তিক খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান এইচঅ্যান্ডএম তাদের প্রথম পরামর্শ দেয় ইথিওপিয়ায় বিনিয়োগে। এ ছাড়া দেশটির সরকার খুব কম টাকায় জমি দিচ্ছে। শ্রমিকের মজুরিও বাংলাদেশ থেকে কম। আর ইথিওপিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রেও শুল্কমুক্ত সুবিধায় পোশাক রপ্তানি সুবিধা পাওয়া যাবে বলে মন্তব্য করেন এম এ রহিম।
বাংলাদেশ থেকে বিদেশে সরাসরি বিনিয়োগে বাধা থাকলেও বিডিএল কিভাবে বিনিয়োগ করছে জানতে চাইলে এম এ রহিম বলেন, ইথিওপিয়ায় পোশাক কারখানা স্থাপনের জন্য তিন কোটি মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ করছে ডিবিএল। এর মধ্যে রপ্তানি প্রত্যাবাসন কোটার (এক্সপোর্ট রিটেনশন কোটা) মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ইথিওপিয়ায় টাকা নেওয়ার অনুমতি পেয়েছে তার প্রতিষ্ঠান।
আয়ের মুনাফা দেশে আনা যাবে কি না জানতে চাইলে এম এ রহিম বলেন, ইথিওপিয়ায় স্থাপিত কারখানা থেকে অর্জিত মুনাফার একটি অংশ দেশে আসবে। আরেকটি অংশ সেখানেই পুনর্বিনিয়োগ করা হবে।
ইথিওপিয়ায় ডিবিএলের বিনিয়োগের এই উদ্যোগের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সহসভাপতি মোহাম্মদ নাসির কালের কণ্ঠকে বলেন, বিশ্বের তৃতীয় কোনো দেশ থেকে পোশাক খাতের কোনো প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ ব্যবস্থা থাকলে ক্রেতাদের আস্থা বেশি থাকে। কারণ তারা জানে কোনো দেশে সমস্যা হলে অন্য দেশ থেকে তারা পণ্য পাবে। সে জন্য সরকারের উচিত দেখেশুনে এ ধরনের বিনিয়োগকে উৎসাহ দেওয়া।
ডিবিএল গ্রুপ ১৯৯১ সালে ব্যবসা শুরু করে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ১৬ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান। ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির টার্নওভার ছিল ২৪ কোটি ২০ লাখ ডলার। ২০১৬ সালে তাদের টার্নওভার প্রক্ষেপণ ৫৫ কোটি ডলার। প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে সেরা রপ্তানিকারক হিসেবে ২০০৯. ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে এইচএসবিসি এক্সপোর্ট এক্সিলেন্স পদকও পেয়েছে।
সৌজন্যে : দৈনিক কালের কণ্ঠ
মতামত লিখুন :