Logo

অধিকাংশ কারখানায় বোনাস পরিশোধ, বেতন নিয়ে শঙ্কা

Fazlul Haque
বুধবার, জুন ২৯, ২০১৬
  • শেয়ার করুন

ফজলুল হক, নিজস্ব প্রতিবেদক : আর মাত্র ৭ দিন পরেই সারা মাস সিয়াম সাধনার পর মুসলিম দুনিয়া পালন করবে পবিত্র ঈদ উল ফিতর। সকলের মত পোশাক শ্রমিকের ঈদ আনন্দও একই রকম হবার কথা থাকলেও অতিরিক্ত আনন্দে প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত অর্থের যোগান আসবে যে বোনাস থেকে সেই বোনাস সময়মত না পাওয়ার আশঙ্কাতেই থাকতে হয় শ্রমিকদের। রমজানের প্রথম সপ্তাহেই রাজধানীর বড় বড় বিপনি বিতানে পা ফেলার জায়গা থাকেনা, আর শেষ সপ্তাহে যেন তিল ধারনের ঠাঁই নেই। উঁচু তলার লোকেরা যখন ঈদ উদযাপনের সকল প্রস্তুতি শেষ করে ঈদের বাঁকা চাঁদ দেখার অপেক্ষায় সেখানে আমাদের পোশাক শ্রমিকরা মালিকের দয়ার দিকে তাকিয়ে। কবে হবে বোনাস, কত হবে বোনাস, ঈদের আগে বেতন হবে কিনা এই প্রশ্ন যেন কারখানার বাতাসে ভাসছে।

চলতি বছরের মোট রপ্তানির ৮২ শতাংশ এসেছে যেই খাত থেকে, আমাদের সেই পোশাক খাতের শ্রমিকদের ঈদের আনন্দ যেন অনেকটা আশঙ্কার চাদরেই ঢাকা থাকে অধিকাংশ সময়। সরকারি আশ্বাস থাকে, থাকে বিজিএমইএ এর কথাও কিন্তু শেষ মুহূর্তে গিয়ে ফল আর ঘরে উঠে না কিছু কিছু কারখানার ব্যর্থতার জন্য। আনন্দের সাথে যেন শ্রমিকরা ঈদ উদযাপন করতে পারেন সেই লক্ষে এবারও উদ্যোগ আছে বিজিএমইএ এর। অনেক আগেই তালিকা করেছিলেন ঝুঁকিপূর্ণ কারখানার। একইভাবে, তালিকা হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকেও। সেই তালিকা এখন অনেক ছোট হয়ে আসলেও শঙ্কা পুরোপুরি কাটেনি।

সরকারের মন্ত্রীর আশ্বাসের ২১ জুন পার হয়ে আজ ২৯ জুন চলছে। কিন্তু অনেক কারখানা এখনও বেতন বোনাস পরিশোধ করেনি বা করতে পারেনি। সরকারি কর্তারা বেতন বোনাস তুলে জুলাই এর ১ তারিখ থেকেই আনন্দে মেতে উঠার প্রস্তুতি নিচ্ছেন আর দেশের অর্থনীতির চালক এই শ্রমিকরা ঈদের আগের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কারখানার জন্য কাজ করতে প্রস্তুত থাকলেও এখনও জোটেনি বেতন-বোনাস। তাঁর মানে সরকার ঘোষিত ২১ জুনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন ওই সব পোশাক কারখানা মালিক। ইতিমধ্যেই গত দুই সপ্তাহে বেতন-বোনাসের দাবিতে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রামের অনেক কারখানা শ্রমিকদের রাস্তায় নেমে আসার ঘটনা ঘটেছে।

তবে আশার কথা হলো, ২১ জুনের মধ্যে সকল কারখানা না হলেও ইতিমধ্যে অনেক কারখানা তাদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করেছেন। তবে বেতন ও বোনাস দুটোই পরিশোধ করা কারখানার সংখ্যা কম। এ ব্যাপারে বিভিন্ন এলাকার ১০ টি কারখানার সাথে যোগাযোগ করা হলে ৬ টি কারখানা শুধু বোনাস পরিশোধ করেছে, ১ টি কারখানা বেতন ও বোনাস পরিশোধ করেছে, ৩ টি কারখানা এখনও বেতন বা বোনাস কোনটিই পরিশোধ করেননি যার মধ্যে একটি কারখানা জানিয়েছেন যে, কারখানা শ্রমিকদের সম্মতিক্রমে বেতন ও বোনাস এক সাথে ৩ জুলাই তারিখ প্রদান করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্কয়ার গ্রুপের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, গাজিপুর এলাকায় বেতন বোনাস নিয়ে এবার কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নাই। কারন গাজিপুর এলাকার অধিকাংশ কারখানা ইতিমধ্যে বোনাস পরিশোধ করেছে এবং ছুটির আগেই চলতি মাসের বেতন পরিশোধ করবে।

বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ী এলাকাস্থ গ্লোরি ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অলক কুমার সাহা আরএমজি টাইমসকে জানান, আগামীকাল কারখানা শ্রমিকদের বোনাস দেয়া হবে এবং ছুটির আগেই বেতন পরিশোধ করা হবে।

এপেক্স হোল্ডিং গার্মেন্টস লিমিটেড এর শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন (সিবিএ) এর যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা আরএমজি টাইমসকে জানান, গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকায় অবস্থিত অধিকাংশ পোশাক কারখানায়ই বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে বলে খবর পেয়েছি।

বেতন বোনাস সমন্ধে জানতে চাইলে সমন্বিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন এর সভাপতি ও গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা রফিকুল ইসলাম পথিক জানান, একেক কারখানা একেক নিয়মে বোনাস প্রদান করছে। সামান্য কিছু কারখানা মুল বেতনের সমান হারে বোনাস প্রদান করেছে।

তিনি আরও জানান, আজ দুপুর এক টার দিকে গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের পক্ষ থেকে ১২ সংগঠনের প্রতিনিধিরা বিজিএমইএ সভাপতি জনাব সিদ্দিকুর রহমানের সাথে দেখা করে বিভিন্ন এলাকার কারখানাগুলির পরিস্থিতি তুলে ধরে পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানালে সভাপতি মহোদয় অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে সকল সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলে আশ্বাস দেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিজিএমইএ এর শ্রম সচিব জনাব রফিকুল ইসলাম বলেন, এবারের ঈদে বেতন বোনাস নিয়ে বড় ধরনের কোন সমস্যার আশঙ্কা নেই। হাতে গোনা কয়েকটি সাব-কন্ত্রাক্ট কারখানা নিয়ে আমরা আশঙ্কা করছি। তাদের নিয়ে আমরা সমস্যা সমাধানে চেস্টা করা হচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন ৯৯ শতাংশ কারখানা সময়মত তাদের বেতন বোনাস পরিশোধ করবেন বলে ইতিমধ্যে নিশ্চিত হয়েছেন এবং বাকিগুলো নিয়ে আলোচনা চলছে।

পোশাক মালিকদের শীর্ষ সংগঠন- বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, হাতে গোনা দু’একটি কারখানা বাদে, ৪ জুলাইয়ের মধ্যে সব পোশাক কারখানাই বোনাস বা উৎসব ভাতা পরিশোধ করবে।