গত মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:৩০ মিনিটে রাজধানীর দ্যা ডেইলি স্টার সেন্টারের এ এস মাহমুদ সেমিনার হলে বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশন (বিএলএফ) এবং জেন্ডার প্লাটফর্ম বাংলাদেশ এর যৌথ উদ্যোগে ‘কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন প্রণয়ন এবং আইএলও কনভেনশন ১৯০ অনুসমর্থনের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক গোল টেবিল আলোচনার আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এডভোকেট সালমা আলী, সভাপতি, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব শাম্মিন সুলতানা, জেন্ডার স্পেসালিস্ট, আইএলও; জনাব ইসরাত জাহান উর্মি, জার্নালিস্ট, ডিবিসি এবং জনাব কুতুব উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক, ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিল (আইবিসি)
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কর্মজীবী নারী, বিএফএলএলএফইএ, বিজিটিএলডব্লিওএফ, ট্যানারি ওয়ার্কার্স, বিটিজিডব্লিওএল, ব্লাস্ট, ফেয়ার ওয়্যার ফাউন্ডেশন, আওয়াজ ফাউন্ডেশন, মনডিয়াল এফএনভি, ফুলকি, নারী মৈত্রী, সবুজের অভিযান, ইটিআই, এলএফএমইএবি, পংক্তি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, জাতীয় শ্রমিক জোট, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, বিলস্, সলিডারিটি সেন্টার, উইমেন এন্ড ই-কমার্স এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিবৃন্দ।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক জনাব এ কে এম আশরাফ উদ্দিন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জনাব সানজিদা সুলতানা, অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক, কর্মজীবী নারী।
প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে এডভোকেট সালমা আলী উল্লেখ করেন যে গোপনীয়তা রক্ষা করে তদন্ত কমিটি কাজ করছে কিনা সে ব্যাপারে নজরদারি করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে নারীদের সাহস দিতে হবে যাতে তারা GBV নিয়ে স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারে। মিডিয়াতে পৃথকভাবে GBV বিষয়ক কর্ণার খোলার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে আইএলও’র জেন্ডার স্পেসালিস্ট জনাব শাম্মিন সুলতানা বলেন কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ সুন্দর রাখার ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ে আইন গুলোকে হালনাগাদ করতে হবে। ডিবিসির জার্নালিস্ট জনাব ইসরাত জাহান উর্মি বলেন জাতীয় পর্যায়ে কাজ করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধির প্রয়াস চালাতে হবে, গণমাধ্যম কর্মীসহ সবাই মিলে একসাথে কাজ করতে হবে। এছাড়াও প্রতিটি কারখানায় এন্টি হ্যারেজমেন্ট কমিটি থাকা বাধ্যতামূলক এবং আইন প্রয়োগের প্রতি জোর দিতে বলেন জনাব কুতুব উদ্দিন আহমেদ।
নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করার জন্য পাঠ্যপুস্তকে এ বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। আলোচনার পাশাপাশি মাঠে নামতে হবে এবং বিষয়টি প্রচারের মাধ্যমে প্রসার ঘটাতে হবে। বিষয়টিকে তৃণমূলে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন ন্যাশনাল ফেডারেশন এর সাথে সংলাপ করতে হবে মর্মে জাতীয় শ্রমিক জোটের জেনারেল সেক্রেটারি জনাব নাঈমুল আহসান জুয়েল জানান। কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি যাতে না ঘটে তার জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সম্বলিত একটি পৃথক আইন করা দরকার মর্মে উল্লেখ করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিনিধি। বিএফএলএলএফইএ এর সচিব জনাব জয়নাল আবেদীন প্রচলিত আইনটির প্রয়োগের উপর জোর দিতে এবং কেবল আইন প্রয়োগে সীমাবদ্ধ না থেকে মানসিকতার পরিবর্তন আনতে আহবান জানান। কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানীর বিষয়ে যে মামলাগুলো ইতিমধ্যে হয়েছে তার হাল অবস্থা জানতে হবে মর্মে জান্নাত ফেরদৌস পান্না বেগম উল্লেখ করেন। এন্টি হ্যারেজমেন্ট কমিটির পূর্ণ স্বাধীনতায় কাজ করার জায়গা তৈরি করতে হবে, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির তদন্ত কমিটি কিভাবে কাজ করে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকতে হবে। গণপরিবহন এবং রাস্তাঘাটের নারীরা যে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয় সে বিষয়ে আরো বেশি নজর দিতে হবে মর্মে আলোচনায় ফুটে ওঠে।
শিক্ষাব্যবস্থা বা উচ্চশিক্ষায় ট্রেড ইউনিয়ন বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন মর্মে জনান জনাব শাহিনুর, কনসালটেন্ট, মনডিয়াল এফএনভি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এন্টি হ্যারেজমেন্ট কমিটি আছে কিনা এবং কমিটির মিটিং হয় কিনা সে বিষয়ে তদারকি করতে হবে এবং কমিটি কার্যকর করার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে মর্মে সাংবাদিক আতাউর রহমান জানান। কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ কমে না যাওয়ার জন্য নারীদের পুরুষের সমান মজুরি নিশ্চিত করতে হবে মর্মে ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের প্রতিনিধি জানান।
কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধের আইনটি যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং এর জন্য সম্মিলিত প্রয়াস জরুরী। কেবল শ্রমিক কেন্দ্রিক কর্মক্ষেত্র নয় বরং সকল কর্মক্ষেত্রে GBV নিয়ে কাজ করতে হবে এবং সামাজিকভাবে একটি ‘প্রেশার গ্রুপ’ তৈরি করতে হবে মর্মে উল্লেখ করেন বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক জনাব এ কে এম আশরাফ উদ্দিন।
মতামত লিখুন :