Logo

পোশাক শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরিতে পরিবর্তন নেই, গ্রেড একটি কমেছে

RMG Times
সোমবার, নভেম্বর ২৭, ২০২৩
  • শেয়ার করুন

পোশাকশ্রমিকের জন্য প্রস্তাবিত ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা পুনর্বিবেচনার জন্য বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন যে দাবি জানিয়েছিল, তা বিবেচনায় নেয়নি নিম্নতম মজুরি বোর্ড। শেষ পর্যন্ত ন্যূনতম মজুরি অপরিবর্তিত রেখেই নতুন মজুরিকাঠামো চূড়ান্ত করেছে বোর্ড। এ ছাড়া গ্রেড সংখ্যা পাঁচ থেকে কমিয়ে চারটি করা হয়েছে।

বর্তমানে পোশাকশ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি আট হাজার টাকা। সেই হিসাবে মজুরি বাড়ছে ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। চূড়ান্ত হওয়া এই মজুরিকাঠামো যাচাই-বাছাই শেষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করবে। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে নতুন এই মজুরি কার্যকর হওয়ার কথা। জানুয়ারিতে নতুন কাঠামো অনুযায়ী মজুরি পাবেন শ্রমিকেরা।

বাংলাদেশ সচিবালয়ের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে গতকাল রোববার বিকেলে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সপ্তম সভায় খসড়া মজুরিকাঠামো চূড়ান্ত করা হয়। মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মোল্লার সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন মালিকপক্ষের প্রতিনিধি সিদ্দিকুর রহমান, শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলামসহ অন্যরা।

সভা শেষে মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মোল্লা সাংবাদিকদের জানান, খসড়া মজুরিকাঠামোর ওপর মালিকপক্ষ থেকে ১৭৩টি এবং ২৫টি শ্রমিক সংগঠন থেকে আপত্তি ও সুপারিশ আসে। সেগুলো পর্যালোচনা করে খসড়ায় পরিবর্তন আনা হয়েছে।

বোর্ডে সর্বসম্মতিক্রমে মজুরিকাঠামো চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানান মালিকপক্ষের প্রতিনিধি সিদ্দিকুর রহমান।

মজুরি যতটুকু বেড়েছে, বর্তমান বাজারদর বিবেচনায় তা কি যথেষ্ট—এমন প্রশ্নের জবাবে শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাজারদর অনুযায়ী হয়নি। বাস্তবতার নিরিখে এবং কারখানাগুলোর সক্ষমতা বিবেচনায় মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে।

কোন গ্রেডে কত মজুরি

চূড়ান্ত মজুরিকাঠামোতে ন্যূনতম গ্রেডটি হচ্ছে ৪। সহকারী অপারেটরসহ বিভিন্ন পদের জন্য এই গ্রেডের মোট মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা। এর মধ্যে মূল মজুরি বা বেসিক ৬ হাজার ৭০০ টাকা, বাড়ি ভাড়া ৩ হাজার ৩৫০ টাকা এবং চিকিৎসা, যাতায়াত ও খাদ্য ভাতা ২ হাজার ৪৫০ টাকা। এই ৪ নম্বর গ্রেডটি প্রস্তাবিত কাঠামোতে ছিল ৫ নম্বরে।

প্রস্তাবিত মজুরিকাঠামোতে সাধারণ অপারেটরদের জন্য ৪ নম্বর গ্রেড নির্ধারণ করা হয়েছিল। চূড়ান্ত কাঠামোতে এটি বিলুপ্ত করে ৩ নম্বর গ্রেডের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। ফলে সহকারী অপারেটর থেকে এখন সরাসরি জুনিয়র অপারেটর পদে পদোন্নতি পাবেন শ্রমিকেরা। এই গ্রেডের মোট মজুরি ১৩ হাজার ৫৫০ টাকা।

প্রস্তাবিত কাঠামোতে অপারেটর পদের শ্রমিকদের জন্য ২ নম্বর গ্রেডের মোট মজুরি ছিল ১৪ হাজার ১৫০ টাকা। চূড়ান্ত কাঠামোতে এই গ্রেডের মোট মজুরি ১২৩ টাকা বাড়িয়ে ১৪ হাজার ২৭৩ টাকা করা হয়েছে। সিনিয়র অপারেটর পদে নির্ধারিত ১ নম্বর গ্রেডের মোট মজুরি প্রস্তাবিত কাঠামোতে ছিল ১৪ হাজার ৭৫০ টাকা। এখন ২৮৫ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৫ হাজার ৩৫ টাকার।

৭ নভেম্বর মজুরি বোর্ডের ষষ্ঠ সভায় খসড়া মজুরিকাঠামো চূড়ান্ত হয়। তারপর দুই সপ্তাহে খসড়া মজুরির ওপর বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন আপত্তি ও সুপারিশ জানায়। তাদের মূল দাবি ছিল, ন্যূনতম মজুরি বাড়ানো, প্রতি গ্রেডের মধ্যে মজুরি পার্থক্য ২ হাজার টাকা, মোট মজুরির মধ্যে মূল বেতন ৬৫ শতাংশ, প্রতিবছর মজুরি ১০ শতাংশ বাড়ানো ইত্যাদি।

অবশ্য চূড়ান্ত হওয়া মজুরিকাঠামোতে চতুর্থ ও তৃতীয় গ্রেডের মধ্যে ১ হাজার ৫০ টাকা, তৃতীয় ও দ্বিতীয় গ্রেডের মধ্যে ৭২৩ টাকা এবং দ্বিতীয় ও প্রথম গ্রেডের মধ্যে ৭৬২ টাকা পার্থক্য রয়েছে। তবে মূল মজুরি কিংবা ইনক্রিমেন্ট বাড়ানোর দাবি বিবেচনা করেনি বোর্ড।

চূড়ান্ত মজুরিকাঠামোর ওপর গতকাল তাৎক্ষণিকভাবে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র এক বিবৃতিতে বলেছে, এটি গ্রহণযোগ্য হয়নি। পোশাকশ্রমিকেরা বর্তমান বাজারদরে বাঁচার মতো মজুরি পাননি।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতার প্রথম আলোকে বলেন, চূড়ান্ত হওয়া মজুরিকাঠামোতে শ্রমিকদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি। অনেক কারখানায় শ্রমিকদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিতে পারে। একটি গ্রেড কমানোর বিষয়ে তিনি বলেন, এটি মন্দের ভালো। বর্তমান কাঠামোর ১ ও ২ এবং খসড়া কাঠামোর ৪ নম্বর গ্রেড বাদ দেওয়ায় অনেক পদের শ্রমিক মজুরিকাঠামোর বাইরে থেকে যাচ্ছেন। তাঁরা কোন গ্রেড যুক্ত হবেন অথবা তাঁদের সুযোগ-সুবিধা কী হবে, তা মজুরিকাঠামোতে উল্লেখ না থাকলে তাঁদের বঞ্চিত করার সুযোগ তৈরি হবে।

পোশাকশ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণের জন্য গঠিত নিম্নতম মজুরি বোর্ডের চতুর্থ সভায় ২২ অক্টোবর শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা ন্যূনতম মজুরির প্রস্তাব দেন। তার বিপরীতে মালিকপক্ষ প্রায় অর্ধেক বা ১০ হাজার ৪০০ টাকার মজুরি প্রস্তাব দেয়। মালিকপক্ষের এই প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ হয়ে শ্রমিকেরা পরদিন আন্দোলনে নামেন। প্রথমে গাজীপুরে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন শুরু হলেও পরে তা অন্য এলাকায় ছড়ায়। এই আন্দোলনে গাজীপুরের চারজন শ্রমিক মারা যান।

কৃতজ্ঞতাঃ প্রথম আলো