Logo

পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন ১২,৫০০ টাকা নির্ধারণ

RMG Times
বুধবার, নভেম্বর ৮, ২০২৩
  • শেয়ার করুন

RMG Times

দেশের সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান তৈরি হওয়া পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য অবশেষে সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণ করে দিলো শ্রম মন্ত্রণালয়। পাঁচ বছর পর নির্ধারণ হওয়া ন্যূনতম মজুরি শতকরা হিসাবে বেড়েছে ৫৬ শতাংশ। এর আগে ২০১৮ সালে নির্ধারণ হওয়া সর্বনিম্ন মজুরি ছিলো ৮

মঙ্গলবার মজুরি বোর্ড থেকে শ্রম মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চূড়ান্ত প্রস্তাবে ১২ হাজার ৫০০ টাকা সর্বনিম্ন মজুরি করার কথা বলা হয়। অর্থাৎ এখন থেকে তৈরি পোশাক খাতে কোনো শ্রমিক কাজে নিয়োগ হলেই তাকে অন্তত সাড়ে ১২ হাজার টাকা দিতে হবে। অভিজ্ঞতা থাকা সাপেক্ষে এই বেতন আরও বাড়বে।

পোশাক শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি নিয়ে এর আগে জল ঘোলা হয়েছে বেশ। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধির বাস্তবতায় শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া, মিরপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে রাস্তায় নামে।

অবশেষে তাদের জন্য যে মজুরি নির্ধারণ করা হলো তাতে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না শ্রমিক প্রতিনিধিরা। অন্যদিকে মালিকদের অনেকে বলছেন, ডিসেম্বর থেকেই এটা কার্যকর হলে তা দেয়া তাদের জন্য কঠিন হবে।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ন্যূনতম মজুরি বোর্ড কার্যালয়ে মঙ্গলবার দুপুরে ষষ্ঠ সভা শুরু হয়। তাতে উপস্থিত ছিলেন মালিক ও শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধিরা।

সভায় মালিক পক্ষ তাদের পুরনো প্রস্তাব ১০ হাজার ৪০০ টাকা থেকে সরে এসে ১২ হাজার ৫০০ টাকার ন্যূনতম মজুরির প্রস্তাব করে। পরে মজুরি বোর্ড সেটিকেই চূড়ান্ত করে শ্রম মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।

বিকেল ৩টার পর সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মোল্লা, বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, বিকেএমইএ সভাপতি একেএম সেলিম ওসমান, বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, আরেক সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, মজুরি বোর্ডে শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলামসহ অন্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

মন্নুজান সুফিয়ান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার থেকে সাড়ে ১২ হাজার টাকা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। উপরের নির্দেশনা অনুযায়ী আমি এটা ঘোষণা করছি। মজুরির সঙ্গে প্রতি বছর পাঁচ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট যোগ হবে।’

তিনি জানান, শ্রমিকদের মজুরি কাঠামোতে এবার পাঁচটি গ্রেড থাকবে। মোট মজুরির মধ্যে মূল বেতন হবে ৬৩ শতাংশ। তার মানে ১২ হাজার ৫০০ টাকা মোট মজুরির মধ্যে মূল বেতন হবে ৭ হাজার ৮৭৫ টাকা। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে নতুন মজুরি অনুযায়ী বেতন পাবেন শ্রমিকরা। অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে যখন শ্রমিকরা ডিসেম্বরের মজুরি পাবেন তখন ন্যূনতম মজুরির এই কাঠামো কার্যকর হবে।

সচিবালয় থেকে বের হয়ে মালিক পক্ষের প্রতিনিধি সিদ্দিকুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই সাড়ে ১২ হাজার টাকায় আমরা রাজি হয়েছি। পোশাক খাতের বর্তমান পরিস্থিতি চিন্তা করলে এত বেশি মজুরি দেয়ার সক্ষমতা অনেক মালিকের নেই।’

শ্রমিকরা মানবে কিনা- এমন প্রশ্নে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘শুধু মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা। এর সঙ্গে ওভার টাইমসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা যোগ করলে প্রায় ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা পাবে একজন শ্রমিক।’

শ্রমিকদের আন্দোলন নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এরপরও কোনো আন্দোলন হলে কারখানা বন্ধ করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।’

একইসঙ্গে তিনি দাবি করেন, নতুন মজুরি কাঠামো প্রায় সবাই পছন্দ করেছে।

এর আগে শ্রমিকদের দাবির মুখে, ২০১৩ সালে তৈরি পোশাক খাতের ন্যূনতম মজুরি ৭৬ শতাংশ বাড়ানো হয়। সে বছর ন্যূনতম মজুরি ধরা হয় ৫ হাজার ৩০০ টাকা। নিয়ম অনুযায়ী পাঁচ বছর পর ২০১৮ সালে আবারও মজুরি বোর্ডের মাধ্যমে সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণ করে সরকার। সে বছর তা ৫১ শতাংশ বাড়িয়ে সর্বনিম্ন মজুরি ৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। যদিও প্রতি বছরই মালিকরা তাদের সক্ষমতার অজুহাতে শ্রমিকদের দাবির চেয়ে অনেকটা কম মজুরি নির্ধারণ করতে সরকারকে অনুরোধ করেন।

চলতি বছরেও বৈশ্বিক নানা প্রেক্ষাপটে বেড়ে যাওয়া মূল্যস্ফীতির চাপে পড়েছে শ্রমিকরা। তাদের পাপ্য মজুরিতে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রতিটি শ্রমিককে। সব মহলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত এপ্রিলে সরকার ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠন করে। এর চেয়ারম্যান করা হয় লিয়াকত আলী মোল্লাকে। সেখানে ২২ অক্টোবর বোর্ডের চতুর্থ সভায় শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা ন্যূনতম মজুরি দাবি করে। তার বিপরীতে মালিক পক্ষ প্রায় অর্ধেক বা ১০ হাজার ৪০০ টাকা মজুরির প্রস্তাব দেয়।