শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির কথা জানিয়ে পোশাকের মূল্য বাড়াতে বিদেশি ক্রেতাদের চিঠি দিয়েছে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। যেসব পোশাক আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে জাহাজিকরণ করা হবে, ওই পোশাকের দাম যৌক্তিকভাবে বৃদ্ধির অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বিদেশি ক্রেতাদের প্রতিনিধি ও ব্র্যান্ডগুলোর উদ্দেশে এক চিঠিতে এসব কথা বলেছেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, করোনা মহামারির ক্ষত এখনো পুনরুদ্ধার করা যায়নি। এরপরও শিল্পকে স্বচ্ছ এবং টেকসই করতে বেশি বিনিয়োগ করা হয়েছে। এখন মূল্যস্ফীতি এবং গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবহণ এবং অন্যান্য খরচসহ উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি শিল্পের শ্বাস-প্রশ্বাসের জায়গাকে চাপ দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, পোশাকে দামের স্তরও কিছুটা বেড়েছে, কিন্তু খরচের উর্ধ্বগতি মোকাবেলা করার জন্য সবেমাত্র যথেষ্ট। এ শিল্পের লাইফলাইন শ্রমিকরা মূল্যস্ফীতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ অবস্থায় সরকার মজুরি বাড়াতে মজুরি বোর্ড গঠন করেছে। ন্যূনতম মজুরি বোর্ড একটি স্বাধীন সংস্থা- যেখানে শ্রমিক, মালিক এবং স্বাধীন গোষ্ঠীর সমান প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। মজুরি বোর্ড বর্তমান ন্যূনতম মজুরি পর্যালোচনা করার জন্য কাজ করছে। বোর্ড ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি সভা করেছে এবং বর্তমানে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে পরামর্শ করছে। তারা কারখানা পরিদর্শন করে শ্রমিক ও মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। মজুরি বোর্ড স্বাধীনভাবে কাজ করে, তাই মজুরি বৃদ্ধি সম্পর্কে অনুমান করা কঠিন। ধারণা করা হচ্ছে, এ বছরের শেষের আগে একটি নতুন ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হবে। পূর্ববর্তী পর্যালোচনা ও সেইসঙ্গে বিগত পাঁচ বছরের সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতির দিকে তাকাই তবে বেশ উল্লেখযোগ্য মজুরি বৃদ্ধি হবে।
চিঠিতে বৈশ্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে ফারুক হাসান বলেন, পণ্য উৎপাদনকারী থেকে শুরু করে ক্রেতা—সবাই এখন কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। মূল্যস্ফীতির হার অভূতপূর্ব উচ্চতায় উঠে যাওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে। এতে সমাজে অর্থের প্রবাহ কমে যাচ্ছে, কমছে পণ্যের চাহিদা। একদিকে খুচরা বিক্রয়ের পর্যায়ে সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে, অন্যদিকে উৎপাদকেরা একেবারে ‘দুঃস্বপ্নের’ মতো পরিস্থিতিতে পড়ে গেছেন। এতে তাদের পক্ষে নিজেদের সক্ষমতা, সরবরাহ, পরিকল্পনা ও পূর্বাভাস—সবকিছু ব্যবস্থাপনা কঠিন হয়ে পড়েছে।
ক্রেতাদের উদ্দেশে ফারুক হাসান চিঠিতে উল্লেখ করেন, শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান, ব্যয় এবং মুদ্রাস্ফীতি বিবেচনা করে আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে উত্পাদিত অর্ডারগুলোর জন্য বর্তমান মূল্য আলোচনায় যুক্তিসঙ্গত মূল্যবৃদ্ধি বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। এটি একটি নতুন মজুরি স্কেলে একটি মসৃণ রূপান্তরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
মতামত লিখুন :