Logo

সার্কুলার ইকোনমির কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশের পোশাক খাত

RMG Times
বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৩
  • শেয়ার করুন

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ, বাংলাদেশ তার শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সার্কুলারিটি মডেলে রূপান্তরের যাত্রা শুরুর জন্য প্রস্তুত করছে। বর্তমানে ‘সার্কুলারিটি’ বাংলাদেশে পরিবেশগত প্রভাব হ্রাস, অর্থনৈতিক কর্মদক্ষতা উন্নয়ন এবং সামাজিক সুবিধা তৈরি প্রভৃতি ক্ষেত্রগুলোতে উল্লেখযোগ্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে সার্কুলারিটি গ্রহণের ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও আছে, যেগুলো সম্মিলিতভাবে বিবেচনা করা এবং সমাধান করা আবশ্যক।

এ বিষয়টি সমাধানের জন্য গতকাল রবিবার ঢাকার একটি হোটেলে শিল্প নেতা, নীতিনির্ধারক এবং সার্কুলার অর্থনীতির বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল ‘আপস্ট্রিম সার্কুলারিটি ডায়ালগ : বাংলাদেশে প্রাক-ভোক্তা টেক্সটাইল বর্জ্য’ শীর্ষক এক সংলাপে বসেন। সংলাপের মূল বিষয়গুলো ছিল বাংলাদেশে একটি সমৃদ্ধ সার্কুলার ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় কৌশল, নীতি, অবকাঠামো, সহযোগিতা এবং উদ্ভাবনী পন্থা গ্রহণ করা ইত্যাদি ।

এই ইভেন্টটি ‘সুইচ টু সার্কুলার ইকোনমি ভ্যালু চেইনস প্রজেক্ট’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে আয়োজন করা হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ফিনল্যান্ড সরকারের অর্থায়নে ইউনিডোর নেতৃত্বে চ্যাথাম হাউজ, সার্কল ইকোনমি, ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক এবং গ্লোবাল ভ্যালু চেইনের সার্কুলারিটি সমর্থনকারীদের সহযোগিতায় প্রকল্পটির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। অনুষ্ঠানে ব্র্যান্ড, প্রস্তুতকারক, নীতিনির্ধারক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন গ্রুপে অংশ নেন।

ইভেন্টে দুটি প্যানেল আলোচনা করে। উভয় প্যানেলের আলোচনার কেন্দ্রে ছিল বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল ইস্যু, যেমন – বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রস্তুতকারকদের সার্কুলার ইকোসিস্টেমে সক্রিয়ভাবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য ব্যবসায়িক মডেল ও প্রণোদনা, দেশে মূল্য ধরে রাখার জন্য টেক্সটাইল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার মানদণ্ড এবং সমগ্র প্রক্রিয়ায় কীভাবে বর্তমান ব্যবসায়ীদের সম্পৃক্ত করে অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা যায় প্রভৃতি। সংলাপে বেস্টসেলারের মুখ্য ভূমিকা পালন এবং সার্কুলারিটি ও পুনর্ব্যবহৃত উপকরণ গ্রহণে প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে বেস্টসেলারের সহযোগিতার বিষয়টিও গুরুত্ব পায়।

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘আমরা এখন এমন একটি বিশ্বে বাস করছি, যেখানে জলবায়ু সবচেয়ে বেশি হুমকির সম্মুখীন, স্বাভাবিকভাবেই পরিবেশের মূল্যে ব্যবসা এখন আর কোনো বিকল্প নয়। শূন্য কার্বন নির্গমন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের দৌড়ে সার্কুলারিটি “পরবর্তী স্বাভাবিক” (ধারণা) হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যা ব্যবসা এবং টেকসই উন্নয়নকে সংযুক্ত করেছে। বিজিএমইএর জন্য, সার্কুলারিটি আমাদের মূল্যবোধ, লক্ষ্য এবং রূপকল্পের কেন্দ্রবিন্দু। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, বৃহত্তর সামাজিক ও অর্থনৈতিক মূল্যবোধ তৈরি করার সঙ্গে সঙ্গে একটি রৈখিক (লিনিয়ার) থেকে সার্কুলার সিস্টেমে অর্থনৈতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র (ইকোসিস্টেম) সংরক্ষণে সহায়তা করা।’

বেস্টসেলারের সিনিয়র প্রজেক্ট স্পেশালিস্ট আলেকজান্ডার গ্রানবার্গ বলেন, ‘দীর্ঘদিনের অনেক ব্যবসায়িক অংশীদারসহ বাংলাদেশ হচ্ছে বেস্টসেলারের জন্য একটি প্রধান সোর্সিং দেশ, আর এ কারণেই বর্জ্য পৃথকীকরণের ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশ সুস্পষ্টভাবে সূচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়েছে। সমগ্র শিল্পের জন্য কার্যকর এবং উপকারী সমাধানগুলো খুঁজে পাওয়ার জন্য মূল স্টেকহোল্ডারদের একত্র করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

গ্লোবাল ফ্যাশন এজেন্ডার সিইও ফেদেরিকা মার্চিয়ননি বলেছেন, ‘একটি সার্কুলার অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য পৃথক এজেন্ট বা কোম্পানির সামর্থ্যরে বাইরে সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন রয়েছে। সত্যিকারের সার্কুলারিটি শুধু উৎপাদন অঞ্চলে সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমেই অর্জন করা যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বে পুনর্ব্যবহৃত পণ্য উৎপাদনে (রিসাইক্লিং) নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত, যদি দেশটি শিল্পোত্তর বর্জ্যরে সব সম্ভাবনাকে কার্যকরভাবে কাজে লাগাতে পারে। বিশ্বব্যাপী পুনর্ব্যবহৃত পণ্যের জন্য ব্র্যান্ডের চাহিদা বৃদ্ধি এবং আইন বাস্তবায়িত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ এই সুযোগটি ত্বরান্বিত করতে একটি ইকোসিস্টেম তৈরি করতে পারে।’

রিভার্স রিসোর্সেসের চিফ প্রোগ্রাম অফিসার-সহ-প্রতিষ্ঠাতা নিন ক্যাসল বলেন, ‘অভ্যন্তরীণভাবে রিসাইক্লিং সক্ষমতা বৃদ্ধি বাংলাদেশের পোশাক খাতের জন্য উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি করবে। এই সম্প্রসারণটি শিল্পকে পুনর্ব্যবহৃত পণ্যগুলোর ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করতে, ফাইবার আমদানির ওপর নির্ভরতা হ্রাস এবং পরিবেশগত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সহায়তা করবে।’

কৃতজ্ঞতাঃ দেশ রূপান্তর