Logo

পরিবেশবান্ধব উৎপাদনে নীতি সহায়তা দরকার

RMG Times
বুধবার, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৩
  • শেয়ার করুন

জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতায় পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ব্যবস্থায় মনোযোগ বাড়ছে বিশ্বব্যাপী। পোশাক খাতের ভোক্তা থেকে ব্র্যান্ড এবং ক্রেতা প্রতিষ্ঠান– সব পক্ষই এ বিষয়ে বিশেষ সতর্ক। পণ্য উৎপাদনে রিসাইকেল বা পুনরায় ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কোনো কোনো ব্র্যান্ড ২০৩০ সালের মধ্যে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তিতে উৎপাদিত পোশাক চায়। এ বাস্তবতায় শিল্পের টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রথাগত উৎপাদন ব্যবস্থাকে সার্কুলারিটিতে রূপান্তর করতে হবে। লক্ষ্য অর্জনে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেগুলো মোকাবিলায় সরবরাহ চেইনের সব পক্ষের অংশীদারিত্ব প্রয়োজন। আর সরকারের পক্ষ থেকে দিতে হবে প্রণোদনামূলক নীতি সহায়তা।

গতকাল রোববার রাজধানীর গুলশানে হোটেল আমারিতে ‘সুইস টু আপস্ট্রিম সার্কুলারিটি ডায়ালগ’ অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। এতে সরকারের নীতিনির্ধারক, উন্নয়ন সহযোগী, বিশেষজ্ঞ, পোশাক খাতের ব্র্যান্ড প্রতিনিধি, উদ্যোক্তারা তাদের মতামত তুলে ধরেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), জাতিসংঘের শিল্প উন্নয়নবিষয়ক অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইউনিডো, পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ যৌথভাবে এ সংলাপের আয়োজন করে। উদ্বোধন অধিবেশন ছাড়াও দিনব্যাপী সংলাপে দুটি অধিবেশনে সার্কুলারিটির সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ নিয়ে মতামত তুলে ধরা হয়।

পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ব্যবস্থার মাধ্যমে সম্পদের চক্রাকার ব্যবহারই হচ্ছে সার্কুলার ইকোনমি। এটি এমন একটি অর্থনৈতিক মডেল, যার মাধ্যমে সম্পদের সর্বোত্তম, সাশ্রয়ী ও টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়। এতে বর্জ্য উৎপাদন কম হয়। উৎপাদিত এই বর্জ্য এবং অন্যান্য সেবাকেও ফের ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হয়।

সংলাপে উদ্বোধন অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবিলার উদ্বেগ থেকে সার্কুলারিটি এখন বৈশ্বিক উদ্যোগে পরিণত হয়েছে। সার্কুলারিটির মাধ্যমে উৎপাদিত পোশাক একে তো পরিবেশ সহায়ক আবার এতে বাড়তি মূল্যও পাওয়া যায়।

তিনি বলেন, প্রাকৃতিক সম্পদের পরিবেশগত ব্যবহার ও জ্বালানির সাশ্রয়ী ব্যয়ে দক্ষতার মাধ্যমে সার্কুলারিটিরও প্রধান কেন্দ্র হতে পারে বাংলাদেশ। তবে সার্কুলারিটির জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ ক্ষেত্রে সফল দেশগুলো থেকে শিক্ষা নেওয়া যায়। উদ্ভাবন, গবেষণা ও প্রযুক্তির মধ্যেই এর সব সম্ভাবনা। এ বিষয়গুলোতে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সংলাপে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, শুরু থেকে এ পর্যন্ত গত চার দশকে এক সরলরৈখিক ব্যবসা মডেলে চলছে তৈরি পোশাক শিল্প। শিল্পের টেকসই উন্নয়নের জন্য এ ধারা বদলাতে হবে। পোশাক পণ্যের ক্রেতা-ভোক্তাদের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের ভাবনা রয়েছে। ফলে পরিবেশের বিনিময়ে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার কথা এখন আর ভাবা যায় না। টেকসই উন্নয়নের জন্য পোশাক খাতের সরবরাহ চেইনে শূন্য কার্বন নির্গমন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারকে গুরুত্ব দিতেই হবে। এ বিবেচনায় সার্কুলারিটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে। এ ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ সফল হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

ইইউ ঢাকা অফিসের ডেপুটি হেড অব মিশন ড. ব্র্যান্ড স্পাইনার বলেন, ইইউর কৌশল হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ইইউতে প্রবেশের ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ পণ্যকে রিসাইকেল প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত হতে হবে। পরিবেশসংক্রান্ত অন্যান্য ডিউ ডিলিজেন্স পরিপালনে কোনো আপস হবে না। ফলে ইইউ বাজারের জন্য বাংলাদেশের পণ্যকে এসব শর্ত বিধি পরিপালন করতে হবে। শুধু তৈরি পোশাক নয়, প্লাস্টিক পণ্য, তথ্যপ্রযুক্তিসহ সব পণ্যকে এসব শর্তের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। প্রথাগত ব্যবহার থেকে সার্কুলারিটিতে রূপান্তরিত হতে হবে। তিনি বলেন, এখানে বাংলাদেশের ব্যর্থ হওয়ার কোনো কারণ নেই । তবে সমন্বিত প্রক্রিয়ার জন্য সব পক্ষকে দায়িত্ব নিতে হবে।

পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ বলেন, সার্কুলারিটি নিয়ে জাতীয় লক্ষ্য এখনও সুস্পষ্ট নয়। বর্জ্য সংগ্রহ হচ্ছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। আছে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা। এ বাস্তবতায় অর্থবহ সার্কুলারিটির জন্য সবার আগে জাতীয় লক্ষ্য নির্ধারণ এবং সে অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক চেইনে বর্জ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা নিতে হবে। সার্কুলারিটির সম্প্রসারণে সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনামূলক নীতিকাঠামো প্রয়োজন।

কৃতজ্ঞতাঃ সমকাল