সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশীয় কাঁচামালভিত্তিক শিল্পায়নের ধারা জোরদার করে কৃষি ও শিল্প খাতের যুগপৎ উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপায়ণের লক্ষ্যে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে শিল্পসমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ গড়ার পথে অগ্রসর হচ্ছেন। এ লক্ষ্যে তিনি ‘রূপকল্প ২০৪১’ ঘোষণা করে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছানোর নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের উন্নয়নের চলমান ধারা অব্যাহত রেখে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত রূপকল্পের বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে আমার বিশ্বাস।
দেশে শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বস্ত্র খাত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বস্ত্র খাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত বিশেষ প্রণোদনার ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটেও এ খাত জাতীয় রফতানির ধারাকে করোনার ক্ষতিকর প্রভাবমুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় বর্তমানে দেশের মোট রফতানি আয়ের সিংহভাগ বস্ত্র শিল্প থেকে অর্জিত হচ্ছে। বাংলাদেশের বস্ত্র খাতকে যুগোপযোগীকরণ, পরিবেশবান্ধব, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা অর্জনে সহায়তাকরণ, টেকসই উন্নয়ন, বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণ এবং এ-সংক্রান্ত অন্যান্য কার্য সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ‘বস্ত্রনীতি, ২০১৭’, ‘বস্ত্র আইন, ২০১৮’ এবং ‘বস্ত্র শিল্প (নিবন্ধন ও ওয়ানস্টপ সার্ভিস কেন্দ্র) বিধিমালা, ২০২১’ প্রণয়ন করেছে।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বস্ত্র খাতের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে সরকারি পর্যায়ে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট, তাঁত প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এবং ফ্যাশন ডিজাইন ইনস্টিটিউট পরিচালিত হচ্ছে। এ ধরনের আরো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে।
দেশের প্রধান রফতানি খাত বস্ত্র শিল্পে বিদেশী জনবলের নির্ভরতা কমিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করতে চাচ্ছে সরকার। এ শিল্পে ফ্লোর, মধ্যম ও নির্বাহী পর্যায়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উপযুক্ত দক্ষ জনবল তৈরির লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের বস্ত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে সারা দেশে। বস্ত্র অধিদপ্তর সরকারি পর্যায়ে ৪১টি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট, ১১টি টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট এবং ৯টি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের মাধ্যমে স্বল্প খরচে বস্ত্র খাতের জন্য দক্ষ শ্রমিক, সুপারভাইজার, ডিপ্লোমা প্রযুক্তিবিদ সর্বোপরি স্নাতক পর্যায়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার তৈরি করে চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনশক্তি বস্ত্র শিল্প খাতে সরবরাহ করছে। এছাড়া কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনবলের বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
শিল্পায়নের মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলায় ১২০ একর জমির ওপর ‘শেখ হাসিনা তাঁত পল্লী’ স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া পুনরুদ্ধারকৃত বাংলাদেশের সোনালি ঐতিহ্য ও বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ড ঢাকাই মসলিন বৃহৎ পরিসরে বাণিজ্যিক রূপদানের জন্য ‘ঢাকাই মসলিন হাউজ’ স্থাপন করা হচ্ছে।
অর্থনৈতিক অবদান বিবেচনায় ‘বস্ত্র খাত’ দেশের প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত। বস্ত্র খাতের অংশীজনরা ২০৩০ সাল নাগাদ ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যমানের পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ লক্ষ্য অর্জনে বস্ত্র খাতের অংশীজনদের সব ধরনের নীতিগত সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।
দেশের বস্ত্র খাতে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের উন্নয়নে সরকার কাজ করছে। নিবন্ধিত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক Textile Grade Pet chips উৎপাদনের লক্ষ্যে উপকরণ আমদানিতে আগাম কর অব্যাহতি প্রদান করায় নতুন বিনিয়োগ যেমন উৎসাহিত হচ্ছে, তেমনি স্থানীয়ভাবে টেক্সটাইল খাতের কাঁচামাল তৈরির মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়। পর্যায়ক্রমে বস্ত্র খাতে আমদানি কমিয়ে এনে দেশের অভ্যন্তরে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ বাড়ানোর মাধ্যমে পণ্যের মূল্য সংযোজনের ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। এতে একদিকে আমদানি ব্যয় হ্রাস পাবে, অন্যদিকে রফতানি আয় বাড়বে।
বর্তমান সরকার দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য উন্নয়নের নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বন্দর ও যোগাযোগ ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নয়ন এ সরকারের আমলেই সম্পন্ন হয়েছে। সরকার গৃহীত নীতিমালা ও পরিকল্পনাকে কাজে লাগিয়ে টেকসই ও যুগোপযোগী শিল্প খাত তৈরির মাধ্যমে দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করতে বর্তমান সরকারের ভূমিকা সর্বদা অব্যাহত থাকবে।
কৃতজ্ঞতাঃ বনিক বার্তা
মতামত লিখুন :