Logo

নভেম্বরের মধ্যে নতুন মজুরিকাঠামো চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত

RMG Times
শনিবার, আগস্ট ১২, ২০২৩
  • শেয়ার করুন

তৈরি পোশাকশিল্পে খাতের শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির লক্ষ্যে গঠিত নিম্নতম মজুরি বোর্ডের দ্বিতীয় সভায় শ্রমিক ও মালিকপক্ষের প্রতিনিধিরা অনেকটা খালি হাতেই যেন অংশ নিয়েছেন। কারণ, আড়াই মাস সময় পেয়েও কোনো পক্ষই মজুরি প্রস্তাব চূড়ান্ত করতে পারেনি। ফলে ঢাকার সেগুনবাগিচায় নিম্নতম মজুরি বোর্ডের কার্যালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত মজুরিবিষয়ক আলোচনায় তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।

তবে সভায় তিনটি সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান নিম্নতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান (সিনিয়র জেলা জজ) লিয়াকত আলী মোল্লা। সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে তৃতীয় সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেই সভায় মালিক ও শ্রমিক উভয় পক্ষই তাদের মজুরি প্রস্তাব দেবে। আর তৃতীয় সভার আগে মজুরি বোর্ডের সদস্যরা ছোট, মাঝারি ও বড় কারখানা সরেজমিনে পরিদর্শন করে বাস্তব পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবেন। নভেম্বরের মধ্যে নতুন মজুরিকাঠামো চূড়ান্ত করা হবে।

এদিকে প্রতিযোগী দেশগুলোয় কীভাবে মজুরি নির্ধারিত হয়, সেটি পর্যবেক্ষণ করতে বিদেশ ভ্রমণের বিষয়ে গতকালের সভায় আলোচনা হয়। এ বিষয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) যদি সহযোগিতা করে, তাহলে আমরা বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করব।’

নিম্নতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মোল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় অংশ নেন মালিকপক্ষের প্রতিনিধি সিদ্দিকুর রহমান ও স্থায়ী প্রতিনিধি মকসুদ বেলাল সিদ্দিকী; শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম ও স্থায়ী প্রতিনিধি সুলতান আহম্মদ এবং নিরপেক্ষ প্রতিনিধি কামাল উদ্দিন।

গত এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় মজুরি বোর্ড গঠন করে। গত ২৪ মে অনুষ্ঠিত মজুরি বোর্ডের প্রথম সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, দ্বিতীয় সভায় শ্রমিক ও মালিকপক্ষ তাদের মজুরি প্রস্তাব জমা দেবে।

আড়াই মাস সময় পেয়েও মজুরি প্রস্তাব কেন দিতে পারলেন না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শ্রমিক প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘তৈরি পোশাক খাতে শতাধিক শ্রমিক সংগঠন রয়েছে। আমরা অধিকাংশ সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বসেছি। কিন্তু ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারিনি। তা ছাড়া আমরা শ্রমিকদের সঙ্গেও কথা বলে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছি।’ পরবর্তী সভায় যৌক্তিক একটি মজুরি প্রস্তাব দেবেন বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে মালিকপক্ষের প্রতিনিধি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক অবস্থা ভালো না। তা ছাড়া আগস্ট-সেপ্টেম্বরে পোশাক খাতে ক্রয়াদেশ কম থাকে। আপনারা জানেন, অনেক কারখানাতেই কাজ নেই। তাই আমরা পরিস্থিতি আরেকটু পর্যবেক্ষণ করে মজুরি প্রস্তাব করতে চাই।’

এদিকে ২৫ হাজার টাকা মজুরির দাবিতে কয়েকটি শ্রমিক সংগঠনের জোট ‘মজুরি বৃদ্ধিতে গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলন’-এর নেতারা গতকাল মজুরি বোর্ডের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন। একই সঙ্গে তাঁরা মজুরি বোর্ডের কার্যবিবরণী প্রকাশ, স্বচ্ছতা-জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ এবং ৬৫ শতাংশ মূল মজুরি, ১০ শতাংশ বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট এবং মজুরিকাঠামো ৭টি গ্রেড থেকে ৫টি গ্রেডে নামিয়ে আনার দাবি জানান।

গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতারের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহসভাপতি জলি তালুকদার, বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান ইসমাইল প্রমুখ।

তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের জন্য ১৯৯৪ সালে প্রথমবার নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করে সরকার। সেই বোর্ড ৯৩০ টাকা নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ করে। ২০০৬ সালে সেটি বাড়িয়ে করা হয় ১ হাজার ৬৬২ টাকা ৫০ পয়সা। ২০১০ সালের মজুরি বোর্ড শ্রমিকের নিম্নতম মজুরি ৩ হাজার টাকায় নির্ধারণ করে।

২০১৩ সালের মজুরি বোর্ড নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ করে ৫ হাজার ৩০০ টাকা। সর্বশেষ ২০১৮ সালের মজুরি বোর্ড পোশাকশ্রমিকদের জন্য ৮ হাজার টাকা নিম্নতম মজুরি চূড়ান্ত করে। এর মধ্যে মূল মজুরি ৪ হাজার ১০০ টাকা।

কৃতজ্ঞতাঃ প্রথম আলো