Logo

“পরিকল্পিত শিল্পনগরীতে কারখানা স্থাপন করুন”-এফবিসিসিআইর সেমিনারে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর আহ্বান

RMG Times
সোমবার, আগস্ট ৭, ২০২৩
  • শেয়ার করুন

শিল্পে বিদ্যমান জ্বালানি সংকট থেকে দ্রুত উত্তরণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সে লক্ষ্য সামনে রেখে বহুমুখী জ্বালানি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যার আওতায় রয়েছে নতুন নতুন কূপ খনন, বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদন, তেল আমদানির জন্য সিঙ্গেল মুরিং পাইপলাইন স্থাপনসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন বৃদ্ধি।

শনিবার সকালে এফবিসিসিআই আয়োজিত ‘বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার: বঙ্গবন্ধুর দর্শন’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এফবিসিসিআইর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এটি জানানো হয়।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালের নির্বাচনে বর্তমান সরকারের ইশতেহার ছিল ২০২১ সালের মধ্যে প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া। এটি অর্জনের পর এখন সরকারের অন্যতম লক্ষ্য জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। গৃহস্থালি ও শিল্পের জন্য সুলভ মূল্যে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

সরকারের এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে উদ্যোক্তাদের পরিকল্পিত শিল্পনগরীতে কলকারখানা ও শিল্প স্থাপনের আহ্বান জানান নসরুল হামিদ। যত্রতত্র শিল্প স্থাপনের কারণে দেশে গ্যাসের প্রচুর অপব্যবহার হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা সরকারের পরিকল্পিত শিল্পনগরীতে কলকারখানা স্থাপন করুন। সেখানে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহের দায়িত্ব আমাদের।’

আগে দেশে তেল সংরক্ষণ সক্ষমতা মাত্র ৩০ দিন থাকলেও বর্তমানে তা বাড়িয়ে ৪৫ দিনে উন্নীত করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অল্প কিছুদিনের মধ্যে বাংলাদেশের তেল সংরক্ষণ সক্ষমতা ৯০ দিনে উন্নীত করা হবে। বায়োগ্যাস উৎপাদনে বাংলাদেশের বড় সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বেসরকারি খাত বায়োগ্যাস উৎপাদনে আগ্রহ দেখালে সব ধরনের সহযোগিতা করবে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, চলমান বৈশ্বিক সংকটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জ্বালানি খাত, যা মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। জ্বালানির দাম বাড়ায় বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় পিছিয়ে পড়ছেন স্থানীয় উদ্যোক্তারা। এমন পরিস্থিতিতে জ্বালানির আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে স্থানীয় গ্যাস, কয়লা ও খনিজ সম্পদ উত্তোলনে সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।

সরকারের প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছর নাগাদ প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা দাঁড়াবে দৈনিক ৫ হাজার ৭৯ মিলিয়ন ঘনফুট; যা বর্তমান চাহিদার চেয়ে প্রায় ৬ শতাংশ বেশি। দেশে গ্যাসের মজুত কমে আসা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম সম্প্রসারণের সঙ্গে এর বর্ধিত চাহিদা মেটানোর জন্য ইতোমধ্যে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। তবে বর্তমানের মতো শুধু আমদানিনির্ভর থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ জ্বালানি আমদানিতেই ব্যয় হবে ২৪ থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলার। এ অবস্থায় তেল-গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে বিকল্প হিসেবে কয়লা ও নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে তৎপর হতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এফবিসিসিআই সভাপতি।

তিনি বলেন, ভিন্ন ভিন্ন উৎস বিশেষ করে জল ও স্থলভাগ থেকে অভ্যন্তরীণ জ্বালানি প্রাপ্তির সম্ভাব্যতা বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। এ বিষয়ে আমরা ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও কম্বোডিয়ার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পারি।
এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, রংপুর অঞ্চলে যেসব কয়লা খনির সন্ধান মিলেছে, সেগুলো থেকে কয়লা উত্তোলনে সরকারকে রাজনৈতিকভাবে সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রয়োজনে খনিসংলগ্ন এলাকার জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে সেখানে বৃহৎ আকারে কয়লা উত্তোলনে যেতে হবে। এতে দেশের জ্বালানি সংকটের চাপ কিছুটা কমবে।

সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার এবং বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শোয়েব। সেমিনারে বাংলাদেশের জ্বালানি সম্ভাবনা ও করণীয় বিষয়ে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. বদরুল ঈমাম। এফবিসিসিআই সহসভাপতি মো. আমিন হেলালীসহ অন্যান্য পরিচালক, ডিসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার সামির সাত্তার, বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল আজিজ পাটোয়ারী এবং জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

কৃতজ্ঞতাঃ সমকাল