বিশ্বে ১৯৯০ সাল থেকে প্রতিবছর ১১ জুলাই বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালিত হচ্ছে। জনসংখ্যা ইস্যুতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং এ-সংক্রান্ত পরিবেশ ও উন্নয়নের সম্পর্ককে মাথায় রেখে জাতিসংঘ ও সদস্যদেশগুলো দিবসটি পালন করে আসছে। কারণ, বছর বছর বিশ্বে জনসংখ্যা বাড়ছে। বিপুল এই জনসংখ্যাকে দক্ষ করে গড়ে তোলা না গেলে, তাদের অধিকার নিশ্চিত করা না গেলে বিশ্বে অসাম্য আরও প্রকট হবে।
জাতিসংঘের ২০২২ সালের বিশ্ব জনসংখ্যা সম্ভাবনা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৮৭ সালের ১১ জুলাই বিশ্বে জনসংখ্যা ছিল ৫০০ কোটি। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালে ৭০০ কোটি আর ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর ৮০০ কোটিতে পৌঁছায়। আর চলতি বছর জাতিসংঘের স্টেট অব ওয়ার্ল্ড পপুলেশন প্রতিবেদন অনুযায়ী, পৃথিবীর জনসংখ্যা পৌঁছে গেছে ৮০০ কোটি ৪৫ লাখে।
গত বছরের জাতিসংঘের বিশ্ব জনসংখ্যা সম্ভাবনা রিভিশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বিশ্বে ৮ কোটি ৩০ লাখ মানুষ নতুন করে যোগ হচ্ছে। বিশ্বে মোট প্রজনন হার (টিএফআর) ক্রমাগত কমতে থাকলেও বৈশ্বিক জনসংখ্যার আকার বাড়ছে। বর্তমানে বিশ্বে মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকেই ৪৯ দশমিক ৭ শতাংশ নারী। সংখ্যায় ও অনুপাতে অর্ধেক হলেও নারীদের জীবন, পরিবার ও কর্মজীবন প্রায়ই জনমিতিক আলোচনায় উপেক্ষিত এবং জনসংখ্যা নীতিতে তাঁদের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। এ অবস্থায় তাঁরা অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের বাইরে থেকে যাচ্ছেন।
এমন এক প্রেক্ষাপটে এবার বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে ‘জেন্ডার সমতাই শক্তি: নারী ও কন্যাশিশুর মুক্ত উচ্চারণে হোক পৃথিবীর অবারিত সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন’। বিশ্বে জেন্ডার সমতার অসীম সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে নারী ও মেয়েদের নিয়ন্ত্রণমুক্ত রেখে তাঁদের কণ্ঠস্বরকে ওপরে তুলে ধরতে হবে।
জনসংখ্যা ও উন্নয়ন চিন্তার পালাবদল: আইসিপিডি ১৯৯৪
১৯৯৪ সালের সেপ্টেম্বরে মিসরের রাজধানী কায়রোতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক জনসংখ্যা ও উন্নয়ন সম্মেলনে (আইসিপিডি) বাংলাদেশসহ পৃথিবীর ১৭৯টি দেশে জনসংখ্যা ও উন্নয়ন-সংক্রান্ত যে কর্মসূচি চূড়ান্ত করেছে, তার কেন্দ্রে ছিল অধিকার ও উন্নয়ন। তখন থেকেই জনসংখ্যা ও উন্নয়ন এক নতুন ‘প্যারাডাইম’(চালচিত্র) হয়ে ওঠে।
এতে জনসংখ্যার পরিমাণগত দিকের চেয়ে গুণগত দিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, যেখানে ব্যক্তির অধিকার ও পছন্দই হচ্ছে মুখ্য। এ ক্ষেত্রে জেন্ডার সমতা, প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন, পরিবার পরিকল্পনার মতো বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এসব বিষয় জনসংখ্যা ও উন্নয়নের দেশীয় ও বৈশ্বিক নীতি পরিকল্পনায় যুক্ত হয়।
আইসিপিডির গৃহীত কর্মসূচিতে বলা হয়, জনসংখ্যা বাড়ানো বা কমানো নয়, বরং সবার সুযোগ গ্রহণে সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দূর করা, প্রান্তিক বা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, যেমন নারী, যুব, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ও অভিবাসী জনগোষ্ঠীর দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। জনমিতিক সহনশীলতা নিশ্চিত করতে সবার মানবাধিকার, ব্যক্তির প্রজনন স্বাস্থ্যের অধিকার ও পছন্দকে গুরুত্ব দিতে হবে।
জনসংখ্যা ও জেন্ডার অসমতার চিত্র: প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ
বাংলাদেশের জনসংখ্যার আকার যেমন একদিকে বড় ও চ্যালেঞ্জিং, অন্যদিকে রয়েছে বড় সম্ভাবনাও। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমলেও বাংলাদেশ এখনো অষ্টম জনবহুল দেশ। গত বছরের জনশুমারি ও গৃহগণনার তথ্য অনুযায়ী, জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ। নারীর হার ৫০ দশমিক ৪৩। তবে চলতি বছরের জাতিসংঘের স্টেট অব ওয়ার্ল্ড পপুলেশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জনসংখ্যা ১৭ কোটি ৩০ লাখ।
জনসংখ্যা ও উন্নয়ন পটভূমিতে দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক সাফল্য রয়েছে। যেমন জাতিসংঘের স্টেট অব ওয়ার্ল্ড পপুলেশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শিক্ষা ক্ষেত্রে নিম্ন মাধ্যমিক শিক্ষায় এনরলমেন্ট ৯০ শতাংশ। আবার গত বছর প্রকাশিত বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে নারীর প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল ৭৪ দশমিক ২ বছর এবং পুরুষের ৭০ দশমিক ৮ বছর। এসব সাফল্যের পরও এখনো সব ক্ষেত্রে জেন্ডার সমতা ও অধিকার নিশ্চিত হয়নি।
ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০-২৪ বছর বয়সী বিবাহিত নারীদের ১৫ বছর কিংবা ১৮ বছর বয়সের আগে বিয়ে হয়েছে। এই হার ২০২১ থেকে ২০২২ সালে উভয় ক্ষেত্রেই বেড়েছে। তবে ১৮ বছরের আগে এক বছরের ব্যবধানে বিয়ে বেড়েছে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। গত বছর প্রকাশিত বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে (বিডিএইচএস) অনুযায়ী, দেশে ১৬ বছরের আগে বিয়ে হয় ২৬ দশমিক ৭ শতাংশ আর ১৮ বছরের আগে ৫০ দশমিক ১ শতাংশ মেয়ের। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা নেই বা দরিদ্র পরিবারেই বাল্যবিয়ে বেশি। বাল্যবিয়ের সঙ্গে জড়িত রয়েছে কিশোরী মাতৃত্ব (২৩ দশমিক ৭ শতাংশ)।
জাতিসংঘের স্টেট অব ওয়ার্ল্ড পপুলেশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৫-১৯ বছর বয়সী বিবাহিত কিশোরীর প্রতি ১০০০ জনে প্রজনন বা জন্ম ৭৪, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। বিডিএইচএসের তথ্যমতে, পরিবার পরিকল্পনায় অপূর্ণ চাহিদা ১৫-৪৯ বয়সী বিবাহিত কিশোরীদের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ হলেও ১৫-১৯ বছর বয়সী বিবাহিত কিশোরীদের ক্ষেত্রে তা ১২ শতাংশ। ২০৩০ সালের মধ্যে এই অপূর্ণ চাহিদা শূন্যতে নিয়ে যাওয়ার আইসিপিডি +২৫ প্রতিশ্রুতি আমাদের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ।
বিডিএইচএসের তথ্য বলছে, দেশে বর্তমানে জন্মনিরোধক পদ্ধতি ব্যবহারের হার ৬৪ শতাংশ। ১৫-১৯ বছর বয়সী কিশোরীদের ক্ষেত্রে তা অপেক্ষাকৃত কম। জন্মনিরোধের আধুনিক পদ্ধতির ক্ষেত্রে চাহিদা সন্তুষ্টি রয়েছে ৭৪ শতাংশ নারীর (স্টেট অব ওয়ার্ল্ড পপুলেশন ২০২৩)। বাল্যবিয়ে ও কিশোরী মাতৃত্ব মেয়েদের অধিকার লঙ্ঘন করে। জেন্ডার বৈষম্য তৈরি করে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়।
দেশে বর্তমানে ১৫ বছর ও তার বেশি বয়সী জনসংখ্যার সাক্ষরতার হারে পুরুষের তুলনায় নারীরা ৫ দশমিক ৯ শতাংশ পিছিয়ে আছে। তবে ৭ বছর ও তার বেশি বয়সী জনসংখ্যার হিসাবে এই ব্যবধান ৪ দশমিক ৩ শতাংশ (বাংলাদেশে স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস)।
জেন্ডার অসমতার সঙ্গে জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা জড়িত। স্টেট অব ওয়ার্ল্ড পপুলেশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে এক বছরে এক-চতুর্থাংশের ন্যায় (২৩ শতাংশ) নারী স্বামীর সহিংসতার শিকার হন। আর ৩৬ শতাংশ নারী যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। ২৩ শতাংশ নারী নিজের স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। এই বাস্তবতায় ২০৩০ সালের মধ্যে জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা শূন্যে নামানো আইসিপিডির +২৫ প্রতিশ্রুতি পূরণ বড় চ্যালেঞ্জ।
নানাভাবে সমাজে জেন্ডার অসমতা তৈরি হয়। উদাহরণ হিসাবে গত বছরের বাংলাদেশের শ্রম জরিপে দেখা যায়, এখনো শ্রমবাজারে নারী-পুরুষের অংশগ্রহণের হারে ব্যাপক ব্যবধান রয়েছে। এখন শ্রমবাজারে নারী ৪২ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং পুরুষ ৭৯ দশমিক ৭১ শতাংশ। আর রাজনৈতিক বিষয় বিবেচনায় নিলে দেখা যায়, বিশ্বে মাত্র ছয়টি দেশে সংসদে ৫০ শতাংশ বা ততোধিক নারী সংসদ সদস্য রয়েছেন (ইউএনউইমেন)। আমাদের সংসদে ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনসহ নারীর প্রতিনিধিত্ব রয়েছে মাত্র ২১ শতাংশ।
জেন্ডার অসমতার কারণ ও জনমিতি
জেন্ডার অসমতার মূলে জনমিতি (লিঙ্গভিত্তিক বিভাজন) কাজ করলেও নারী-পুরুষের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, মনস্তাত্ত্বিক, জৈবিক ইত্যাদি নানা কারণ জড়িত। জনসংখ্যার জনমিতিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী লিঙ্গভিত্তিক, বয়সভিত্তিক মানদণ্ডে রয়েছে বিভাজন। আবার সমতা আনয়নে রয়েছে প্রতিবন্ধকতা।
এ ক্ষেত্রে প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার প্রাধান্য পেলে কাঙ্ক্ষিত সমাধান মিলবে। অন্যথায় সেবাপ্রাপ্তি, চলাচলে বাধাসহ নানা কারণে নারীরা তাঁদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হতেই থাকবে।
পরিবার পরিকল্পনা সেবা মূলত নারীকেন্দ্রিক। এ ক্ষেত্রে পুরুষদের অন্তর্ভুক্ত করাটা চ্যালেঞ্জ বটে। পরিবার পরিকল্পনায় পুরুষদের অংশগ্রহণ ও সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জেন্ডার অসমতা পরিবর্তনে পুরুষদের অংশগ্রহণে কার্যকর কৌশলপত্রের ঘাটতি রয়েছে। নারীর শিক্ষা, অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হলে প্রজনন স্বাস্থ্যে তাঁদের পছন্দ ও অধিকার নিশ্চিত হবে।
লক্ষণীয়, নিম্ন প্রজনন হারের দেশে সহজে জন্মহার বাড়ানো যাচ্ছে না। কোনো কোনো দেশে আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেও জন্মহার বাড়ানো যাচ্ছে না। এটি কোনো টেকসই সমাধানও নয়। এ ক্ষেত্রে জনমিতিক পরিবর্তন, যেমন পরিবারে পারস্পরিক সহযোগিতা, শিশুযত্ন নিশ্চিত করা, সম্পত্তির মালিকানা, উচ্চমাত্রায় জেন্ডার সমতা বজায় রাখা—এসব বিষয় কী কী সম্ভাবনা নিয়ে আসতে পারে, সেদিকে লক্ষ রেখে সামগ্রিকভাবে চিন্তাভাবনা করতে হবে।
জনসংখ্যা দিবসে আমাদের করণীয়
বর্তমান বাস্তবতায় সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে জেন্ডার সমতা নিশ্চিত করতে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল কিছু করণীয় নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে—
প্রথমত: অধিকতর সঠিক, সহনশীল ও অসীম সম্ভাবনার টেকসই বিশ্বে আমাদের অবশ্যই জেন্ডার সমতাকে এগিয়ে নিতে হবে। নারী ও মায়েরা তাঁদের পছন্দ ও ইচ্ছার ভিত্তিতে পরিবার গঠনের ক্ষমতা পেলে সমাজও স্বাস্থ্যবান এবং শক্তিশালী হবে।
দ্বিতীয়ত: জেন্ডার অসমতা ক্ষতিকারক এবং নারী-মেয়েদের অধিকার ও পছন্দকে খর্ব করে। মেয়েরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ে, কর্মক্ষেত্র ও নেতৃত্বের অবস্থান থেকে পিছিয়ে যায়। ফলে বিদ্যমান জেন্ডার অসমতা নারী ও মেয়েদের স্বাস্থ্য ও প্রজনন ক্ষেত্র যেমন কাঙ্ক্ষিত ও বাস্তবিক প্রজনন হারে ভূমিকা রাখে। এতে নারী ও মেয়েদের প্রতি সহিংসতা ও ক্ষতিকর চর্চা যেমন বাল্যবিয়ে ও মাতৃমৃত্যুতে প্রভাব পড়ে।
তৃতীয়ত: স্বাভাবিক উন্নয়ন ও মানবিক সংকটে নারী ও মায়েরা সব ক্ষেত্রেই যা চায়, সেখানে তার প্রভাব থাকে। নারী ও মেয়ে এবং সুরক্ষাহীন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর শুনতে হবে। সরকারকে অবশ্যই নারী ও মেয়েদের অধিকার রক্ষা ও তাঁদের পছন্দ বাস্তবায়নে আইন ও নীতির প্রয়োগে কাজ করতে হবে।
চতুর্থত: জেন্ডার সমতায় বিনিয়োগ মানে আমাদের বিশ্ব অংশীদারত্বের বিনিয়োগ। নারী ও মেয়েদের ক্ষমতায়নের অর্থ তাঁদের অধিকার নিশ্চিত করা ও সিদ্ধান্ত প্রণয়নে তাঁদের শারীরিক বা দৈহিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। এতে অধিকতর সহিংসতা থেকে তাদের মুক্তি মিলবে এবং লক্ষ্য অর্জিত হবে। নারী অধিকারের আরেক অর্থ মানবাধিকার। ফলে জেন্ডার সমতা আনতে অতীতের চেয়ে অবশ্যই বেশি নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। শ্রমবাজার বা চাকরির ক্ষেত্রে জেন্ডার বৈষম্য কিছুটা দূর হওয়ায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উদাহরণ এখানে উল্লেখ করা যায়।
শেষ কথা
সবশেষে বলতে পারি, আমাদের দরকার জনসংখ্যার পেছনের দিকে তাকানো। আমাদের সংখ্যার চেয়ে অধিকার ও পছন্দকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। জনসংখ্যা কম বা বেশি নয়; বরং সবার ক্ষেত্রে সমান সুযোগ ও সমান সম্ভাবনা রয়েছে কি না, এ ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা আছে, তা নির্মূল করতে হবে। প্রান্তিক বা সুবিধাবঞ্চিত জনসংখ্যাকে (যেমন নারী ও মেয়ে, তরুণ ও যুব গোষ্ঠী, বয়স্ক জনগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী ও অভিবাসী জনগোষ্ঠী) বিবেচনায় নিতে হবে।
এ ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে জেন্ডার, নৃতাত্ত্বিক, শ্রেণি, ধর্ম, প্রতিবন্ধিতা এবং আরও অন্যান্য কারণভিত্তিক গুণগত মানসম্পন্ন উপাত্ত তৈরি করতে হবে, যার ভিত্তিতে প্রণীত হবে নীতিকৌশল। জনসংখ্যাকে উন্নয়নের কেন্দ্রে রেখে মানবপুঁজিতে বিনিয়োগ, জেন্ডার সমতায় বিনিয়োগ ও একই সঙ্গে সবার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
লেখক: অধ্যাপক ও সাবেক চেয়ারম্যান
পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মতামত লিখুন :