সদ্যোবিদায়ি অর্থবছরে (২০২২-২৩) রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হলেও অর্জিত হয়নি লক্ষ্যমাত্রা। এর পরও একক পণ্য পোশাক খাতের ওপর ভর করে পার করল পুরো অর্থবছর। এর ফলে বৈদেশিক আয়ের বড় খাত দেশের রপ্তানি আয় যেকোনো সময় ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণে রপ্তানি বহুমুখীকরণসহ সরকারকে এখনই ক্রাশ প্রগ্রাম বা একটি দ্রুত এবং নিবিড় শিল্পোৎপাদনের জন্য কর্মসূচি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
এ ছাড়া স্থানীয় বড় বড় বিনিয়োগের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।
গতকাল সোমবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) যে রপ্তানি পরিসংখ্যান দিয়েছে এতে দেখা যায়, গত অর্থবছরে দেশের রপ্তানি আয় হয়েছে পাঁচ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলারের, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। যদিও বিদায়ি অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল পাঁচ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। সেই লক্ষ্যের চেয়ে রপ্তানি কম হয়েছে ৪.২১ শতাংশ বা ২৪৪ কোটি ডলার।
এতে দেখা যায়, শুধু গত জুনে ৫০৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের জুনের তুলনায় এই রপ্তানি ২.৫১ শতাংশ বেশি। এ সময় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৫৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এই আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯.৬১ শতাংশ কম।
এ প্রসঙ্গে অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ও পিআরআই বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সার্বিকভাবে টেকসই রপ্তানির জন্য একসঙ্গে অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি বিনিয়োগে গুরুত্ব দিতে হবে। এ ছাড়া পণ্যের বহুমুখীকরণসহ প্রযুক্তিগত জ্ঞান বিনিময় ও পরিপালনীয় মানদণ্ড বা কমপ্লাইয়েন্স নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘রপ্তানিতে একক খাত নির্ভরতার কারণে যেকোনো সময় ঝুঁকিতে পড়বে দেশের রপ্তানি আয়। এ জন্য সরকারকে এখনই ক্রাশ প্রগ্রাম বা একটি দ্রুত এবং উৎপাদনের জন্য একটি নিবিড় কর্মসূচি হাতে নিতে হবে।’
ইপিবির তথ্য মতে, সদ্যোবিদায়ি অর্থবছরে শীর্ষ খাত তৈরি পোশাকে চার হাজার ৬৯৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে।
এই রপ্তানি গত ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ১০.২৭ শতাংশ বেশি। এ সময় নিট পোশাক থেকে আয় হয়েছে দুই হাজার ৫৭৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই হাজার ৫৬০ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০.৮৭ শতাংশ। ওভেন পোশাক থেকে আয় এসেছে দুই হাজার ১২৫ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯.৫৬ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই হাজার ১২০ কোটি ডলার।
বিজিএমইএ সভাপতি মো. ফারুক হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বৈশ্বিক মন্দায় দেশের রপ্তানি আয়ে পোশাকখাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। মোট রপ্তানি আয়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও পোশাক খাতে ১০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এটা লক্ষ্যণীয়। তবে সংকটকালীন এই সময় সরকারের অব্যাহত নীতি সহায়তার পাশাপাশি এনবিআর ও কাস্টমস নীতি সহজ করা না গেলে এই মন্দায় টিকে থাকা কঠিন হবে। কারণ রপ্তানি আয়ের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিতে ছয় মাস ধরে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে পোশাক খাতের।’
তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে দেশের পোশাক খাতের রপ্তানি ক্রয়াদেশ কমেছে ৩০ শতাংশ। যদিও পোশাকের একক মূল্য বেড়েছে ১০-১৫ শতাংশ। এ ছাড়া প্রচলিত বাজারের বাইরে নতুন বাজারগুলোতে ৩৪ শতাংশ আয় বেড়েছে।’
কৃতজ্ঞতাঃ কালের কণ্ঠ
মতামত লিখুন :