Logo

মার্কিন তুলায় উৎপাদিত গার্মেন্টস পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা চেয়েছে বাংলাদেশ

RMG Times
রবিবার, মে ২৮, ২০২৩
  • শেয়ার করুন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা তুলা দিয়ে তৈরি পোশাক রফতানিতে সে বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা চেয়েছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে বাধাহীনভাবে বাংলাদেশি পণ্য রফতানিরও সুযোগ চাওয়া হয়েছে দেশটির কাছে।

রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ঢাকা সফররত যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) কার্যালয়ের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে এসব দাবি তোলা হয়। বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ।

বাণিজ্য সচিব বলেন, গত ৬ ও ৭ ডিসেম্বর ওয়াশিংটনে যে টিকফা বৈঠক হয়েছিল, সে বিষয়গুলোর ফলোআপ আলোচনা হয়েছে। এখন থেকে ইউএস কটনের ফিউমিগেশন লাগবে না। এটা সেটেল হয়ে গেছে, সে জন্য তারা আমাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। পাশাপাশি আমরা বলেছি, এর ফলে তোমাদের কটন এক্সপোর্ট বাংলাদেশে বাড়বে। সুতরাং আমরা আগেও প্রস্তাব দিয়েছি ওই কটন থেকে প্রসেস করে আমরা রেডিমেট গার্মেন্টস আমেরিকায় এক্সপোর্ট করব, সেই পণ্যের ওপর যেন ডিউটি ফ্রি সুবিধা দেওয়া হয়। তারা বলেছেন, এটা তারা দেখবেন, তবে এটা তাদের কংগ্রেসেই সিদ্ধান্ত হয়। সেখানে কোনো একটি পার্টিকুলার কান্ট্রিকে সাধারণত তারা এ সুবিধা দিতে চান না। তবে তারা বিষয়টি নোট নিয়েছেন।

‘এ ছাড়া আইপিআর (ইন্টেলেকচ্যুয়াল প্রপার্টি রাইটস) নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিছু কিছু আইপিআর ভায়োলেশন করে কিছু প্রোডাক্ট এক্সপোর্ট হয়েছে বলে তারা অভিযোগ তুলেছেন। আমরা জোরালোভাবে বলেছি, বাংলাদেশ থেকে কোনো কাউন্টারট্রেড প্রোডাক্ট এক্সপোর্ট হয় না।

বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আমেরিকায় সেটি হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ সেখানে আমাদের যারা ইম্পোর্টার, তাদের একটি প্রসেস আছে। সেখানে কোয়ালিটি ইন্সপেকশন হয়, প্রত্যেকটি ধাপে ইন্সপেকশন হয় এবং সোশ্যাল অডিটও হয়। অনেক ক্ষেত্রে একাধিক অডিটও হয়। দেখা যায় একজন সাপ্লায়ার দুই-তিনটা ইম্পোর্টারকে সাপ্লাই দিলে তিন রকম কোয়ালিটি ইন্সপেকশন হয়। এখানে কাউন্টারট্রেড প্রোডাক্টের সুযোগ নেই। অনেক ক্ষেত্রে অন্য কোনো দেশ তাদের ওয়েবসাইটে যদি আমাদের কোনো প্রোডাক্ট দেখায় যে, ইটস ফ্রম বাংলাদেশ এবং কেউ যদি বলে এটা কাউন্টারট্রেড, সেই দায়িত্ব তো আমরা নিতে পারি না। যদি কোনো অভিযোগ আসে, সেটি আমাদের জানালে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারব।’ যোগ করেন সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ।

তিনি আরও বলেন, আরেকটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, সেটি হলো আমাদের বিনিয়োগের পরিবেশটা আরও উন্নত করা বিষয়ে। আমরা বলেছি, এটি একটি কন্টিনিউয়াস প্রসেস, আমরা চেষ্টা করছি। এরই মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে প্রতি বছর যে লাইসেন্স নবায়ন করতে হতো এগুলো আমরা সহজীকরণ করেছি, পাঁচ বছর পর্যন্ত নবায়ন করা যায়। আমরা ব্যবসার পরিবেশ এবং প্রক্রিয়া সহজীকরণে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছি। তারা বলছে, এটি হলে তাদের বিনিয়োগটা বাড়বে। কোনো কোনো মার্কিন কোম্পানির পেমেন্টের ক্ষেত্রে একটু বিলম্ব হচ্ছে, আগামীকাল তাদের বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে মিটিং আছে, সেখানে এটি তোলার জন্য আমরা বলেছি।

ইউএসটিআর কার্যালয়ের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হলেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক পরিচালক ব্রিয়ান লুটি, ইউএসটিআরের উপসহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেনডন এলভিনচ, দক্ষিণ এশিয়ায় ইউএসটিআরের পরিচালক মাহনাজ খান, রিজিওনাল আইপি অ্যাটাচে জন ক্যাবেকা, দক্ষিণ এশিয়ায় সিনিয়র লিগ্যাল আইপি কাউন্সেল শিল্পি ঝা, ইউএস প্যাটেন্ট অ্যান্ড ট্রেডমার্ক অফিসের প্যাটেন্ট বিশেষজ্ঞ রাহুল দাস, ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের ইকোনমিক ইউনিটের প্রধান যোসেফ গিবলিন, অর্থনৈতিক/বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ শীলা আহমেদ এবং পলিটিক্যাল/ইকোনমিক সামার অ্যাসিস্ট্যান্ট এমা ফেহরম্যান।

বাংলাদেশ থেকে নকল পণ্য রফতানি হয় না : এদিকে গতকালের বৈঠকে মার্কিন প্রতিনিধি দলকে সুস্পষ্টভাকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, বাংলাদেশ থেকে কোনো নকল পণ্য রফতানি হয় না। এ ধরনের কোনো পণ্য বাংলাদেশ থেকে রফতানির সুযোগই নেই। বৈঠকের পরে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ এ বিষয়ে বলেন, বাংলাদেশ থেকে কোনো নকল পণ্য রফতানি হয় না। যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের কোনো পণ্য রফতানির সুযোগই নেই। কারণ রফতানির সময় পণ্য নিয়ে মানসম্পন্ন পরীক্ষা হয়, নিরীক্ষা হয়।

তিনি বলেন, তিনি ইউএসটিআরের দলকে বলেছেন, ‘অন্য কোনো দেশের কোনো কোম্পানি যদি তাদের ওয়েবসাইটে কোনো পণ্যকে বাংলাদেশি পণ্য হিসেবে দেখায়, সেই দায়িত্ব তো আমরা নিতে পারি না। তারপরও যদি তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) কাছে কোনো অভিযোগ থাকে এবং সেটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানায়, তা হলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড পণ্যের একটি সংগঠন ও ফ্রান্সের একটি শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নকল পণ্য রফতানির অভিযোগ তুলে গত জানুয়ারিতে ইউএসটিআরের কাছে আলাদা দুটি আবেদন জমা দেয়। তাদের অভিযোগ ছিল, বাংলাদেশের কিছু কারখানা বিশ^খ্যাত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোশাক ও জুতা নকল করে থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রের সংগঠনটির নাম আমেরিকান অ্যাপারেলস অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন (এএএফএ)। সংগঠনটি ইউএসটিআরে আবেদন করেছে গত ৩০ জানুয়ারি। আর ফ্রান্সের সংগঠনটির নাম ইউনিয়ন ডেস ফেব্রিকস (ইউনিফ্যাব)। সেটি ইউএসটিআরে আবেদন করেছে গত ২৬ জানুয়ারি।
উভয় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সত্যতা যাচাইয়ে ‘বিশেষ ৩০১ পর্যালোচনা’ শিরোনামে পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেয় ইউএসটিআর। এই পর্যালোচনা বৈশ্বিক মেধাস্বত্ব অধিকার রক্ষা ও তা কার্যকরের সঙ্গে সম্পর্কিত। বাংলাদেশ এখনও স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি)। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম কোনো এলডিসির বিরুদ্ধে নেওয়া এ ধরনের পর্যালোচনার পদক্ষেপ।

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ১০ ফেব্রুয়ারি চিঠি পাঠিয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মতামত জানতে চায়। বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও উইং যথাসময়েই ইউএসটিআরকে প্রাথমিক মতামত জানায়। এতে প্রমাণ ছাড়া অভিযোগকে ‘অন্যায্য ও ক্ষতিকর’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং নকল পণ্য উৎপাদন প্রতিরোধে বাংলাদেশে অন্তত ১০টি আইন রয়েছে বলে জানিয়ে দিয়েছে।

এরপর বাংলাদেশ বিশদ আকারে চূড়ান্ত মতামত পাঠায়। তার আগে তৈরি পোশাক ও নিট পোশাক খাতের দুই সমিতি বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), শিল্প মন্ত্রণালয়, এফবিসিসিআইসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মত নেওয়া হয়।

কৃতজ্ঞতাঃ সময়ের আলো