পোশাক শ্রমিকরা বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। বিজিএমই-এর তথ্য অনুযায়ী দেশের মোট রফতানি আয়ের প্রায় ৮৩ শতাংশ এবং বর্তমানে ১১ শতাংশের বেশি অবদান রাখে পোশাক খাত। এ শ্রমিকরা বাংলাদেশকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করছেন। কিন্তু বছরের পর বছর স্বল্প মজুরিতে কাজ করে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের সন্তানরা আয় সংকুলানের অংশ হিসেবে স্কুল ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। একইসঙ্গে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ থেকেও তারা বঞ্চিত হচ্ছে। মৌলিক প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর খরচ বহন করতে আর্থিক ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছেন শ্রমিকরা।
এ পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের এমন একটি ন্যূনতম মজুরি প্রয়োজন, যা মূল্যস্ফীতি এবং অন্যান্য সংকট বিবেচনায় রেখে তার মৌলিক চাহিদার পাশাপাশি পরিবারের চাহিদা পূরণ করতে পারেন।
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) আয়োজিত পোশাক খাতে ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি বিষয়ে গোল টেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন উপস্থিত বক্তারা।
বিএনপিএস-এর নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর বলেন, নারীরা যখন মা হয় তখন তাদের সঠিক খাবার দেওয়া হয় না। তাই তাদের পুষ্টির অভাব হয়। একইভাবে নারীদের মজুরিও কম দেওয়া হয়। কিন্তু নারীরা পুরুষদের মতো বাইরে কাজ করেন আবার ঘরেও কাজ করেন। তাই তাদের সমান অধিকার প্রয়োজন। কিন্তু পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র তাদের যোগ্য সম্মান দিতে ব্যর্থ হচ্ছে।
তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে কৃষক এবং শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দিতে হবে। গার্মেন্টসে শ্রমিকরা যে শ্রম দেয় তাদের সে শ্রমের ন্যায্য অংশ দিতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, বেঁচে থাকার মতো মজুরি না দিলে গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার মজুরি কিন্তু আপেক্ষিক। আমেরিকার এক রকম আর আমাদের আরেক রকম। আমার মতে, একজন শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ২০-২১ হাজার টাকা হতে হবে।
তিনি বলেন, শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি মানেই মালিকের মুনাফা কমে যাওয়া। কেউই কিন্তু তার আয় কমাবে না। তাই যদি মুনাফা ঠিক রেখে মজুরি বাড়াতে হয়, তাহলে সেটা করতে হবে আন্তর্জাতিকভাবে। বাইরের ক্রেতাদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্য আদায় করতে হবে। শ্রমিকের বাঁচার মতো মজুরি দিতে হবে। ২০ হাজার টাকার কম মজুরি দিলে একজন শ্রমিক পরিবার নিয়ে বাঁচতে পারেন না। একইসঙ্গে তিনি বলেন, নারী ও পুরুষের মজুরি আলাদা করা যাবে না, এটা এক হতে হবে।
জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি ও মজুরি বোর্ডের শ্রমিক প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, আমাদের মজুরি ৩৭০ টাকা থেকে ৮ হাজার টাকায় এসেছে, এটা কিন্তু এতো সহজে আসেনি। এর জন্য আমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। এখন আমাদের মজুরি বৃদ্ধির জন্য গ্লোবাল ভয়েস তোলা উচিত। কারণ সারা পৃথিবীতে আমরা কেন কম মজুরিতে কাজ করব? ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়াতো কম মজুরিতে কাজ করে না। তাহলে আমরা কেন করব?
এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ অ্যালায়েন্স বাংলাদেশের সভাপতি কাজী রহিমা আক্তার সাথী বলেন, পাঁচ বছর হয়ে গেলেও আমাদের মজুরি বাড়ানো হচ্ছে না। এদিকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। কিন্তু আমাদের মজুরি বাড়াচ্ছে না। এসময় তিনি বলেন, মজুরি বৃদ্ধির কারণে কোনো শ্রমিককে যেন ছাঁটাই করা না হয় সেটাও লক্ষ্য রাখতে হবে। আমাদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ না করা পর্যন্ত আমরা মাঠ ছেড়ে যাব না।
বিএনপিএস-এর নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীরের সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রফেসর নাবিলা ফারহিনসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা।
কৃতজ্ঞতাঃ ঢাকাপোস্ট
মতামত লিখুন :