Logo

মজুরি নিয়ে পোশাক শ্রমিকদের মনে ‘অসন্তোষ’

RMG Times
বৃহস্পতিবার, মে ৪, ২০২৩
  • শেয়ার করুন

দেশের রপ্তানি আয়ের সিংহভাগই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। শুধু রপ্তানি আয় নয়, একই সঙ্গে পোশাক শিল্প নিশ্চিত করেছে ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান। এর মধ্যে নারীর অংশগ্রহণ রয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ ভাগ। কর্মসংস্থান ও রপ্তানি আয়ে পোশাক খাত বড় ভূমিকা রাখলেও ন্যূনতম মজুরি নিয়ে শ্রমিকদের মনে রয়েছে অসন্তোষ।

দফায় দফায় নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে বর্তমান মজুরি দিয়ে জীবন চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন পোশাক শ্রমিকরা। ২০১৮ সালের মজুরি কাঠামোতে একজন শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয় আট হাজার টাকা (সপ্তম গ্রেড)। আর এই মজুরি দিয়ে সংসার চালাতে না পেরে অধিকাংশ শ্রমিকই কষ্টে দিন পার করছেন। অনেক সময় কম খেয়ে, না খেয়ে বা ধারদেনা করে চলতে হয় তাদের। তাই এবারের মে দিবসে প্রতিটি পোশাক শ্রমিক সংগঠনের একটাই স্লোগান বা দাবি- ‘বাঁচার মতো মজুরি চাই’।

মজুরি এবং মূল্যস্ফীতি- কীভাবে এই দুইয়ের সমন্বয় করছেন পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা? এ বিষয়ে কথা হয় সাভারের আশুলিয়ায় পোশাক কারখানার শ্রমিক শিবলির সঙ্গে। তিনি বলেন, বর্তমানে যে মজুরি পাই, তা দিয়ে চলতে কষ্ট হয়। আমার চারজনের সংসার। চাকরি করি আট হাজার টাকা বেতনে। এই বেতন দিয়ে এই বাজারে চলা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। দরকার বেতন বৃদ্ধির, সেটা আজ থেকেই হওয়া উচিত। কারখানায় ওভারটাইম কাজ করলে ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ টাকা পাওয়া যায়। তবে সব সময় ওভারটাইম করা যায় না, মন বা শরীরে কুলায় না। কোনো মাসেই ধার করা ছাড়া চলতে পারি না।

১৯৯৪ সালে পোশাক শিল্পে একজন শ্রমিকের সর্বনিম্ন মজুরি ছিল ৯৩০ টাকা। ২০০৬ সালে যা ১ হাজার ৬৬২ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়। ২০১০ সালের মজুরি বোর্ডে শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ৩ হাজার টাকা করা হয়। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে যা বৃদ্ধি করে ৫ হাজার ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ ২০১৮ সালে বেতন কাঠামোতে শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণ হয় ৮ হাজার টাকা।

নতুন করে তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণের জন্য গত ১১ এপ্রিল মজুরি বোর্ড গঠন করেছে সরকার। এই মজুরি বোর্ডে কারখানা মালিকদের প্রতিনিধিত্ব করবেন তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। আর শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্ব করবেন বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি।

নতুন মজুরি বোর্ডের কার্যক্রম কবে নাগাদ শুরু হবে এবং কী পদ্ধতিতে মজুরি নির্ধারণ হবে? বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনির সঙ্গে। তিনি বলেন, নতুন মজুরি বোর্ডের কার্যক্রম মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হবে। বিজ্ঞানসম্মতভাবে শ্রমিকের মজুরি নির্ধারণ করা হবে।

বর্তমানে একজন শ্রমিকের কত ক্যালরি খাদ্য দরকার বা তার স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে কী পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন; সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই মজুরি নির্ধারণ করা হবে। আমরা প্রথম গ্রেড থেকে সপ্তম গ্রেড- সকল শ্রেণির শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলব, তাদের মতামত নিয়েই কাজ করব। এ ছাড়া যেসব শ্রমিক সংগঠন রয়েছে, তাদের সঙ্গে কথা বলে মতামত নেওয়া হবে। আশা করছি, একটি সুন্দর মজুরি কাঠামো নির্ধারণ হবে। ছয় মাসের মধ্যেই কার্যক্রম শেষ হবে।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তৌহিদুর রহমান বলেন, বর্তমানে করখানাগুলোতে ওভারটাইম করালেও ন্যায্য মজুরি পরিশোধ করছেন না মালিকরা। কারখানার মালিকরা তো চাইবেনই ন্যায্য মজুরি না দিতে। এজন্য সরকারের নীতিনির্ধারকরা দায়ী। এ ক্ষেত্রে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নীরব ভূমিকা পালন করছে। তাদের দায়িত্বে গাফিলতি রয়েছে। তারা সব সময় শ্রমিকের স্বার্থ না দেখে মালিকপক্ষের স্বার্থ দেখে আসছে।

তৌহিদুর রহমান আরও বলেন, মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছে শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে কোনো কথা না বলেই। ৫০টিরও বেশি শ্রমিক সংগঠন রয়েছে, তাদের মতামত না নিয়েই এই বোর্ড গঠন করা হয়েছে।

বর্তমানে একজন শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি কত হওয়া উচিত? এমন প্রশ্নের জবাবে তৌহিদুর রহমান বলেন, চড়া মূল্যস্ফীতির কারণে শ্রমিকরা ভালোভাবে চলতে পারছেন না। আট হাজার টাকায় একজন শ্রমিকের সংসার ১০ থেকে ১২ দিন চলে। বাকি দিনগুলো যাচ্ছে আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধার করে। সঞ্চয় ভেঙেও খাচ্ছেন অনেক শ্রমিক। এ অবস্থায় যে মজুরি এখন আট হাজার টাকা রয়েছে, তা ২২ হাজার টাকা করার দাবি করছি।

শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ নিয়ে বিজিএমইএর সহসভাপতি রকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, নতুন মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে যে সিদ্ধান্ত আসবে, আমরা সেটাই মেনে নেব। আমরা শ্রমিকদের বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট নিয়মিত দিচ্ছি। নতুন মজুরি হার নির্ধারণ হলে যেসব কারখানা মালিকদের পোষাবে তারা ব্যবসা চালিয়ে যাবেন, যাদের পোষাবে না তারা বন্ধ রাখবেন। এখন এমনিতেই ক্রয়াদেশ বেশ কম। একই সঙ্গে কারখানার সংখ্যাও কমে আসছে। গত এক বছর ধরে কারখানার অবস্থা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে যেটা ভালো হবে সেটাই করা হোক।