পোশাক শিল্প কারখানায় অগ্নি দুর্ঘটনার কারণে জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি রোধে অগ্নি প্রতিরোধ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ)।
রোববার (১৬ এপ্রিল) বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এ অনুরোধ জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ঢাকা শহরের বেশি কয়েকটি মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নি দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়। এছাড়াও, বর্তমানে গ্রীষ্ম মৌসুমে আবহাওয়ার উষ্ণতা ও অত্যাধিক তাপমাত্রার কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘটিত অগ্নি দুর্ঘটনাসহ বেশি কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় বিজিএমইএর দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে।
এসব দুর্ঘটনা বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট অথবা অন্য কোনো বৈদ্যুতিক ত্রুটি থেকে হওয়ার আশঙ্কা করে বিজিএমইএ বলছে, যেহেতু পোশাক শিল্প কারখানায় বিভিন্ন ধরনের মেশিনারিজ এবং বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার হয়, তাই অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে অধিক সচেতনতার আহ্বান জানিয়ে সংগঠনটি বিশ্বাস করে, কারখানায় পর্যাপ্ত অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হলে এ ধরণের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।
বিজিএমইএ বলছে, কারখানার বয়লার, জেনারেটর, বৈদ্যুতিক মেইন সুইচ বোর্ড, বিভিন্ন বৈদ্যুতিক মেশিনারিজ এবং যন্ত্রাংশ অতিরিক্তি উত্তপ্ত হয়ে যে কোনো সময়ে বড় ধরনের অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। পাশাপাশি ঝড় ও বৃষ্টির মৌসুমে বিদ্যুতের তারের সংযোগস্থল লুজ হলে সেখানে পানি লেগে স্পার্ক করে আগুন লেগে যেতে পারে। কারখানায় পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হলে অগ্নি দুর্ঘটনা এড়ানো যাবে এবং শ্রমিক/কর্মচারী হতাহতের মতো অপ্রত্যাশিত ঘটনা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
তাই সব পোশাক শিল্প কারখানায় জরুরি ভিত্তিতে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছে ব্যবসায়িক সংগঠনটি। সেগুলো হলো:
১. রাতে কারখানা বন্ধ করার আগে একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে সব মেশিনারিজ, লাইট, ফ্যান, আয়রণ ইত্যাদি বন্ধ করার বিষয়টি নিশ্চিত করা এবং বৈদ্যুতিক মেইন সুইচ, বয়লার বন্ধ করা।
২. কারখানার সব বৈদ্যুতিক তার এবং অন্যান্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি (মেইন সুইচবোর্ড, সাব-মেইনসুইচ বোর্ড, ডিষ্ট্রিবিউশন বোর্ড, জাংশন বোর্ড), কারখানায় ব্যবহৃত বয়লার ও বিভিন্ন ধরনের মেশিন ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দক্ষ একজন ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে নিয়মিত পরীক্ষা করানো।
৩. কারখানার সিঁড়ি এবং চলাচলের পথ বাধামুক্ত রাখা এবং কর্মকালীন সার্বক্ষণিক ফ্লোরের গেট, মেইন গেট এবং সমস্ত সিঁড়ির গেট খোলা রাখা।
৪. জরুরি অবস্থা (অগ্নি দুর্ঘটনা বা যে কোনো দুর্ঘটনা) মোকাবিলা করার জন্য কারখানায় প্রশিক্ষিত লোকের ব্যবস্থা রাখা এবং পুরো কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা তত্ত্বাবধায়নের জন্য সার্বক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ ও একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এবং অগ্নি নির্বাপন বিষয়ে প্রশিক্ষিত সিকিউরিটি গার্ড নিযুক্ত রাখা।
৫. তাৎক্ষণিকভাবে আগুন নির্বাপন করার জন্য কারখানায় প্রয়োজনীয় অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র, পানি ভর্তি ড্রাম ও বালতি এবং হোজ রিল/হাইড্রেন্ট রাখা এবং এগুলো সার্বক্ষণিক কার্যকরি রাখা।
৬. কারখানার সব বৈদ্যুতিক চ্যানেলগুলো সব সময় পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং কোথাও কোনো ঝুট বা ময়লা জমিয়ে না রাখা। সকল মালামাল বৈদ্যুতিক স্থাপনা থেকে দূরে সরিয়ে রাখা।
৭. কোনো অবস্থাতেই কারখানার ফ্লোরে কেমিক্যাল, প্লাষ্টিক বা অন্য কোনো অতি দাহ্যবস্তু সংরক্ষণ না করা।
৮. শত্রুতামূলক আগুন প্রতিরোধের জন্য কারখানার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় রাখা এবং সেগুলো সার্বক্ষণিকভাবে চালু রাখার ব্যবস্থা করা। প্রয়োজনে গোপন ক্যামেরা স্থাপন করা।
৯. কারখানার ফ্লোরে এবং সিঁড়িতে অবশ্যই বিকল্প জরুরি বাতি (আইপিএস/চার্জার/ব্যাটারিচালিত বাতি) এবং ফায়ার এ্যালার্মের ব্যবস্থা রাখা এবং এগুলো কাজের উপযোগী আছে কি না, তা নিয়মিত পরীক্ষা করা।
১০. দুর্ঘটনায় যাতে পদদলিত হয়ে কোনো শ্রমিক/কর্মচারী হতাহত না হন, সে জন্য কারখানায় নিয়মিত বহির্গমন মহড়া পরিচালনাপূর্বক রেকর্ড সংরক্ষণ করা।
১১. কারখানায় অগ্নি দুর্ঘটনা সংঘটিত হলে সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিস (০২-২২৩৩৫৫৫৫৫) এবং বিজিএমইএর ‘ফায়ার ইমার্জেন্সি পুল’ এর জরুরি নম্বর- ০১৯১৩-৫২৯৮৬৭- এ ফোন করে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা নেয়া।
এছাড়া অগ্নি দুর্ঘটনা রোধে সবাইকে ব্যক্তিগতভাবে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছে বিজিএমইএ।
কৃতজ্ঞতাঃ সময় সংবাদ
মতামত লিখুন :