Logo

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে ‘অমিক্রন’ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে

RMG Times
শুক্রবার, জানুয়ারি ১৪, ২০২২
  • শেয়ার করুন

আরিফুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২২ সালের প্রথম সপ্তাহে ইউরোপজুড়ে ৭০ লাখ মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ইউরোপে দুই সপ্তাহের মধ্যে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি হয়ে গেছে।

আগামী ছয় থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে ইউরোপের অর্ধেক মানুষ করোনার নতুন ধরন অমিক্রনে সংক্রমিত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।

ডব্লিউএইচওর ইউরোপ অঞ্চলের পরিচালক হ্যানস ক্লুগ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এখন পশ্চিম থেকে পূর্বে ইউরোপে করোনা শনাক্তের যে জলোচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে, তার মূলে রয়েছে অমিক্রন। এই অঞ্চলজুড়ে সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষেত্রে ডেলটার প্রকোপকে ছাড়িয়ে গেছে অমিক্রন।

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দেশের তৈরি পোশাক শিল্পে। এ শিল্পের উদ্যোক্তাদের দাবি, গেল বছরের অক্টোবর ও নভেম্বরের তুলনায় একই বছরের ডিসেম্বরে রফতানি অর্ডার কমেছে। ২০ ডিসেম্বর থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত নতুন করে খুব বেশি অর্ডারও আসেনি।

শুধু তাই নয়, অর্ডার দেওয়া পণ্য নিতে বিলম্ব করছেন ইউরোপ-আমেরিকার বায়াররা। ফলে দুশ্চিন্তায় পোশাক কারখানার মালিকরা। কারণ বিলম্ব হলে তারা নির্ধারিত সময়ে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন না।

ইপিবির তথ্য মতে, ২০২১-২২ অর্থবছরের আগস্টে ১১ দশমিক ৫৬, সেপ্টেম্বরে ৪১ দশমিক ৬৬, অক্টোবরে ৫৩ দশমিক ২৮, নভেম্বরে ৩২ দশমিক ৩৪ ও ডিসেম্বরে ৫২ দশমিক ৫৭ শতাংশ পোশাক রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়। বর্তমানে চার বিলিয়ন ডলার পোশাক রফতানি করছে। মালিকদের টার্গেট আট বিলিয়ন ডলার রফতানি করার।

পোশাক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানসহ ইউরোপে অমিক্রন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। উন্নত দেশগুলোতে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট মোকাবিলায় ব্যপক কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। অনেক স্থানে পোশাক বিক্রির দোকান ও আউটলেট বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে বায়াররা এই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তারা পোশাক পণ্য গ্রহণে ধীরে চলা নীতি অবলম্বন করেছেন।

অন্যদিকে, কারখানা মালিকরা বায়ারদের অর্ডার নেওয়ার পর কাঁচামাল কিনে ফেলেছেন বা কিনতে শুরু করেছেন। ফলে বায়ারদের অর্ডার দুশ্চিন্তায় রয়েছেন মালিকরা। তারা বলছেন, অর্ডার নিলেই তো হবে না, রফতানিও তো করতে হবে।

এবিসি নিটিং ডাইং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলের চেয়ারম্যান ও এমডি, মাহতাব উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সংবাদ মাধ্যমকে জানান, “করোনার সঙ্গেই আমাদের বসবাস করতে হবে। বর্তমানে যে অবস্থা তাতে খুব বেশি সমস্যা হবে না। কিন্তু এটি যদি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে তাহলে পোশাক খাতের অনেক ক্ষতি হবে। আমরা সেই শঙ্কায় আছি।”

শঙ্কার কথা জানিয়েছেন এ কে জে ফ্যাশনস ফেব্রিকস লিমিটেডর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতিয়ার রহমান । তিনি বলেন, “অমিক্রনের কারণে অর্ডার দেওয়া পোশাক পণ্য রফতানিতে অন্তত চার-পাঁচ দিন করে দেরি হচ্ছে। নতুন অর্ডারও কম আসছে।”

এদিকে কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশে নতুন করে করোনা রোগীর মৃত্যু ও শনাক্তের হার বাড়ছে। করোনার ডেলটা ধরনের দাপটে গত বছরের মাঝামাঝি দেশে করোনায় মৃত্যু, রোগী শনাক্ত ও শনাক্তের হার বেড়েছিল। তবে আগস্টে দেশব্যাপী করোনার গণটিকা দেওয়ার পর সংক্রমণ কমতে থাকে।

গত ডিসেম্বরের প্রথম দিকেও দেশে করোনা শনাক্তের হার ১ শতাংশের ঘরেই ছিল। তবে ডিসেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধে এসে সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যায়। গত মাসের শেষ দিকে যেখানে দৈনিক রোগী শনাক্ত ৫০০ এর ঘরে ছিল, সেখানে ধারাবাহিকভাবে বেড়ে এই সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়ে যায় গত সোমবার।