ডেস্ক রিপোর্ট: সাভারের আশুলিয়ায় ইয়াগি বাংলাদেশ গার্মেন্টস লিমিটেডের এক নারী পোশাক শ্রমিককে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে মানবন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত এবং দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত কারার দাবী জানান।
গতকাল শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকাল ৪টায় আশুলিয়ার জামগড়ায় ফ্যান্টাসি কিংডমের সামনে সংগঠনটির আশুলিয়া থানা শাখার উদ্যোগে এ কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়।
আশুলিয়া থানা শাখার সভাপ্রধান বাবুল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বিক্ষোভ কর্মসূচীতে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সভাপ্রধান তাসলিাম আখ্তার, সাধারণ সম্পাদক জুলহাসনাইন বাবু, আশুলিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক জিয়াদুল ইসলাম, আশুলিয়া শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক বিল্লাল হোসেন, সাভার শাখার সংগঠক রূপালী আক্তার প্রমুখ।
তাসলিমা আখ্তার বলেন, ইয়াগি কারখানার নারী শ্রমিককে কারখানার স্টাফ রেজাউলের নেতৃত্বে গণধর্ষণ করা হয়েছে। ভুক্তভোগী নারীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে ধর্ষণের ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। একজন ধর্ষককে গ্রেফতার করা হলেও ঘটনা প্রকাশ করা ও সুষ্ঠ তদন্ত করে সব দোষীকে বিচারের আওতায় আনতে গড়িমসি চলছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের নিরাপত্তা দিতে না পারলে তাদেরও দায়-দায়িত্ব নিতে হবে।
মানববন্ধন কর্মসূচীতে তাসলিমা আখ্তার আরও বলেন, পোশাক শ্রমিকরা বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শ্রক্তি। কিন্তু এই শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মালিক, সরকার বা বিজিএমইএ’র উদ্যোগ কোথায়? হাইকোর্টের সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া আছে, সব কারখানায়, সব প্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়ন বিরোধী নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে এবং যৌন নীপিড়ন বিরোধী অভিযোগ সেল গঠন করতে হবে, যাতে যেকোনো যৌন নিপীড়নের ঘটনায় শ্রমিকরা নির্ভয়ে অভিযোগ জানাতে পারেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত বিজিএমইএ বা মালিকদের উদ্যোগে কারখানার ফ্লোরে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় নাই। এর আগেও পোশাক শ্রমিক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো ঘটনারই বিচার সম্পন্ন হয় নাই। ফলে এই ধরনের ঘটনা একের পর ঘটছে।
এই ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির উদ্যোগে প্রতিবাদ কর্মসূচি গ্রহণে পর থেকেই পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে দফায় দফায় বাধা দেওয়া ও হুমকি-ধামকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।
এর আগে আশুলিয়া থানার পরিদর্শক জামাল সিকদার নিশ্চিত করেছেন যে, গত মঙ্গলবার এক নারী পোশাক শ্রমিক ইয়াগি বাংলাদেশ গার্মেন্টস লিমিটেডের কর্মকর্তা (প্রশাসন) জাহাঙ্গীর আলমসহ অজ্ঞাতনামা দুই জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেন। পরে জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ১৮ ডিসেম্বর ওই নারী হেলপার পদে কারখানাটিতে যোগ দেন। ২১ ডিসেম্বর তার রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করার কথা বলে কারখানায় নমুনা নেওয়া হয়। এর দুই দিন পর রক্তের প্রয়োজনের কথা বলে তাকে কারখানার নিচতলার একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম ও তার এক সহযোগী ওই নারীকে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে অচেতন করে ধর্ষণ করেন। প্রায় দুই ঘণ্টা পর চেতন পেয়ে ওই নারী বাসায় তার বাবা-মাকে ধর্ষণের কথা জানান। বাবা-মাকে নিয়ে অভিযোগ জানাতে পরে কারখানায় গেলে তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
এক পর্যায়ে কারখানার শ্রমিকরা অভিযোগের ব্যাপারে জানতে পেরে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভের মুখে কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। পরে ওই দিন রাতে আশুলিয়া থানায় মামলা করেন ওই নারী।
মতামত লিখুন :