ডেস্ক রিপোর্ট: বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলস্ আয়োজিত “অতিমারী লকডাউনে ঢাকা শহরের রিকশা চালকদের জীবন ও জীবিকা: কার্যকর সুরক্ষায় ভবিষ্যৎ করণীয়” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে ঢাকা শহরের রিকশা শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা এবং জীবন মান উন্নয়নে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
২৮ ডিসেম্বর ২০২১ (মঙ্গলবার) রাজধানীর সিরডাপ অডিটরিয়ামে এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। যেখানে বক্তারা করোনা মহামারীকালে ঢাকা শহরের রিকশা শ্রমিকদের অসহায় জীবনযাপন এবং পর্যাপ্ত সাহায্য সহযোগিতা না পাওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রত্যেককে তার সামাজিক দায়বদ্ধতার থেকে অসহায় শ্রমিকদের পাশে দাড়ানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য শিরীন আখতার (এমপি) বলেন, এ বছর আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছি। এ সময়ে এসে কারো জীবন মান উন্নয়নের বিষয় নিয়ে কথা বলা আমাদের জন্য দূর্ভাগ্যজনক। তিনি আরও বলেন, রিকশা চালকদেরকে বাদ দিয়ে ঢাকা শহরের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তিনি রিকশা চালকদের হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধে রিকশা চালকদের তালিকা তৈরির করা এবং তাদের জীবন মান উন্নয়নে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ রেজাউল করিম উল্লেখ করেন, দেশের ৮৭ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের মধ্যে রিকশা ভ্যান শ্রমিক অন্যতম। বিলস্ এর গবেষণা অনুযায়ী ঢাকা শহরে প্রায় ১১ লাখ রিকশা রয়েছে এবং প্রায় ২২ লাখ রিকশা চালক ও তাদের পরিবার রিকশা খাতের উপর রির্ভরশীল। এরমধ্যে করোনাকালীণ সময়ে আরো অনেকে মানুষ রিকশা চালক পেশায় জড়িত হয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন, দেশে দুই দফা লকডাউনে রিকশা চালকদের আয় প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গিয়েছিল। যেখানে আগে দৈনিক আয় ছিল ৫০০ টাকা সেটা লকডাউনে কমে ২৫০ টাকায় নেমে গিয়েছিল। লকডাউনে রিকশা চালকদের আয় কমে যাওয়ায় অনেকে ঋণ করে পরিবারের খরচ বহন করেছেন।
মর্যাদাপূর্ণ এবং সমতার রাষ্ট্র বিনির্মাণে রিকশা চালকদের অন্তর্ভূক্ত করার কথা উল্লেখ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, রিকশা সাধারণ মানুষের বাহন, রিক্সা চালকদের সম্মান করতে হবে। বিকল্প কর্মসংস্থান না করে রিকশা বন্ধ করা কোন সমাধান নয়। তাদের উৎখাত না করে মূলধারায় নিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, ঢাকা শহরের কোন এলাকায় কত রিকশা চলবে এটা নির্ধারণ করার পাশাপাশি কারা সেখানে রিকশা চালাবে তারও পরিকল্পনা থাকা দরকার।
শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের (স্কপ) যুগ্ম সমন্বয়কারী কামরূল আহসান বলেন, করোনাকালীন সময়ে সরকার সারা দেশে ২৩ টি ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটি গঠন করেছেন। সেগুলোর দায়িত্ব ছিল করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের তালিকা তৈরি করা। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার কোন কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। শ্রমিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে তালিকা দেওয়া হলেও অনেক শ্রমিক কোন সাহায্য সহযোগিতা পাননি। তিনি বলেন, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের (স্কপ) পক্ষ থেকেও নয় দফা দাবি জানানো হয়েছে, কিন্তু সেগুলো নিয়ে তেমন কোন আলোচনা হয়নি।
বিলস্ ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন এর সভাপতিত্বে এবং সম্পাদক আবুল কালাম আজাদের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যায়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো: সাইফুন নেওয়াজ, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের (স্কপ) যুগ্ম সমন্বয়কারী মেসবাহউদ্দীন আহমেদ, বাংলাদেশ রিক্সা ভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি মো: হারুন অর রশিদ, বাংলাদেশ রিক্সা-ভ্যান শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: ইনসুর আলী, বিলস্ উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য বাদল খান, জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশের সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা প্রমুখ।
মতামত লিখুন :