Logo

বিদেশ ফেরত নারী শ্রমিকের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পুনর্বাসনে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান

RMG Times
রবিবার, ডিসেম্বর ২৬, ২০২১
  • শেয়ার করুন

ডেস্ক রিপোর্ট: পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতার স্বপ্ন নিয়ে নারী শ্রমিকেরা বিদেশে গেলেও অল্প কিছুদিনের মধ্যে অধিকাংশের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। তাদের উপর নেমে আসে নানারকম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরেও নানা রকম হয়রানির শিকার হতে হয় এসব নারী শ্রমিকদের। তাই বিদেশ ফেরত নারী শ্রমিকের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পুনর্বাসনের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা।

আজ ২৬ ডিসেম্বর ২০২১ রাজধানীর ডেইলি স্টার সেন্টারের আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে বাংলাদেশ  ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ- বিলস্ আয়োজিত “দেশে ফিরে আসা অভিবাসী নারী শ্রমিকদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা ও উন্নয়নে করণীয়” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ আহ্বান জানান।

বিলস্ উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য শাহ্ মোহাম্মদ আবু জাফর এর সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম মহাসচিব ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খানের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য শামসুন্নাহার ভূঁইয়া, এমপি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হচ্ছে।পুরুষের সাথে সমানতালে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ যেমন বাড়ছে তেমনি নারীর ক্ষমতায়নে ও বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে। কিন্তু বিদেশ থেকে নারী শ্রমিকরা নির্যাতিত হয়ে দেশে ফেরত আসছে এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। তিনি প্রশিক্ষণের উপর জোর দিয়ে তৃনমূল পর্যায়ে নারী শ্রমিকদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পুনর্বাসনে সকলের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর আহ্বান জানান।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) উপ-পরিচালক যোহরা মনসুর বলেন, আমাদের ব্যর্থতার ইতিহাস যেমন আছে তেমনি সাফল্যের ইতিহাসও আছে। ব্যর্থতার পাশাপাশি সফলতার ইতিহাসগুলোও গবেষণায় তুলে আনতে হবে। বিদেশ ফেরত নারী শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন নারী শ্রমিকরা একটি কর্মহীন জায়গা থেকে বিদেশ যায় কাজেই সেখান থেকে ফেরত আসার পর কর্মহীন থাকাই স্বাভাবিক। এসময় তিনি নারী শ্রমিকদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।

মর্যাদাপূর্ণ জীবন শ্রমিকদের অন্যতম একটি দাবি উল্লেখ করে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) এর যুগ্ম সমন্বয়কারী কামরূল আহসান বলেন, বিদেশে ফেরত নারী শ্রমিকদের অবস্থা মর্যাদাপূর্ণ জীবন দাবির ঠিক উল্টো।

যারা একসময় পরিবারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম ছিলেন তারা বিদেশ থেকে ফিরে সমাজের একদম প্রান্তিক জায়গায় চলে যাচ্ছেন। এ থেকে উত্তরণে তিনি সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি  শ্রমিকদের ডাটাবেস তৈরির উপর গুরুত্বারোপ করেন।

গোলটেবিল বৈঠকে বিলস্ পরিচালিত গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপনায় বিলস্ উপ-পরিচালক (গবেষণা) মোঃ মনিরুল ইসলাম উল্লেখ করেন পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতার স্বপ্ন নিয়ে নারী শ্রমিকেরা বিদেশে গেলেও অল্প কিছুদিনের মধ্যে অধিকাংশের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। তাদের উপর নেমে আসে নানারকম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, যেমন নামমাত্র খাবার, অতিরিক্ত কাজের চাপ, নিয়মিত মারধর, যৌন হয়রানি, ধর্ষণ ইত্যাদি। নির্যাতনের শিকার হয়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফিরে আসা অভিবাসী নারী শ্রমিকেদের অধিকাংশই দেশে ফিরছেন একেবারে খালি হাতে, অনেকে ফিরছেন মানসিক রোগী হয়ে, আবার অনেকে ফিরছেন শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে। প্রবাসী নারী শ্রমিক ইস্যুতে সামাজিকভাবে একটি নেতিবাচক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। ফলে দেশে ফিরে আসার পর, নির্যাতিত হোক আর না হোক, প্রত্যেক অভিবাসী নারী শ্রমিককে সমাজে নানা প্রতিকূল প্ররিস্থিতির মুখোমুখী হতে হয়। সামাজিক ও পারিবারিকভাবে তাদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়, এমনকি অনেকের সংসার ভেঙ্গে যায়। এই পরিস্থিতি দেশে ফিরে আসা একজন নারী শ্রমিকের জন্য খুবই পীড়াদায়ক, যা তাদের স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় ব্যাঘাত ঘটায় এবং তাদেরকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।

বৈঠকে বক্তারা বলেন, প্রত্যাবাসী নারী শ্রমিকের ক্ষেত্রে বিশেষ লক্ষ্য দেওয়া প্রয়োজন। বিদেশ ফেরত নারী শ্রমিকদের প্রকৃত তথ্য এবং এর ধারাবাহিক পর্যালোচনা করা দরকার। এসময় বক্তারা প্রত্যাবাসী নারী অভিবাসন শ্রমিকদের জন্য উপযুক্ত সামজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন এবং গ্রহণ করা; উপযুক্ত দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির উপর জোর দেওয়া; সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের পাশাপাশি উপযুক্ত বানিজ্যিক পরামর্শ দেওয়া; মনো-সামাজিক পরামর্শসহ উপযুক্ত স্বাস্থ্য সহায়তা প্রদান; শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মত প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়, সমাজ সেবা মন্ত্রণালয়’সহ অন্যান্য দপ্তরগুলোর শ্রমিক নিবন্ধন, সচেতনতা বৃদ্ধি ও পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়ায় ট্রেড ইউনিয়নের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

বৈঠকে আরো বক্তব্য রাখেন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের উপ পরিচালক মোঃ জাহিদ আনোয়ার, বাংলাদেশ ওভারসিস এমপ্লয়মেন্ট এন্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল) উপ ব্যবস্থাপক ইঞ্জিনিয়ার এম আলম হোসাইন, অভিবাসী মহিলা শ্রমিক অ্যাসোসিশেনের সাধারণ সম্পাদক শেখ রোমানা, স্পেসালিস্ট অন ওয়ার্কার্স এ্যাকটিভিটিস, ডিসেন্ট ওয়ার্ক টেকনিক্যাল টিম, আইএলও-সাউথ এশিয়া সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ, আইএলও ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার রেহনুমা সালাম খান, বিলস্ উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য নইমুল আহসান জুয়েল প্রমুখ।