ডেস্ক রিপোর্ট: ইতোমধ্যে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে দেশের তৈরি পোশাক শিল্প বিশ্ববাজারে পূর্বের অবস্থায় ফিরে এসেছে। গত তিন মাসে এক বছর আগের একই সময়ের তুলনায় এই খাতের রপ্তানি আয় বেড়েছে যথাক্রমে ৪২, ৫৩ ও ৩২ শতাংশ। তবে বিশ্বের বড় বড় ক্রেতারা যখন বাংলাদেশে উৎপন্ন পোশাক পণ্যের দিকে ঝুঁকছেন, তখন পোশাক নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ধুঁকছে শ্রমিক সংকটে।
মূলত করোনাকালে অর্ডারের অভাবে যেসব কারখানা শ্রমিক ছাঁটাই করেছে, বর্তমানে সেসব প্রতিষ্ঠানই শ্রমিক সংকটে পরেছে। যে কারণে তাঁরা অনেক ক্রয়াদেশ ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানান এই খাতের উদ্যোক্তারা। এ অবস্থায় শ্রমিক সংকটের প্রকৃত কারণ বের করে এর সমাধানে উদ্যোগী হওয়ার তাগিদ অর্থনীতি বিশ্লেষকদের।
এ বিষয়ে মাসকো গ্রুপের জ্যেষ্ঠ মহা-ব্যবস্থাপক (মানবসম্পদ, প্রশাসন ও কমপ্লায়ান্স) শাহিন মোহাম্মদ বলেছেন, মেশিনগুলো প্রস্তুত। অন্যান্য অবকাঠামোগুলো প্রস্তুত। সুপারভাইজারসহ সবকিছু প্রস্তুত রয়েছে। অর্ডারগুলোও রয়েছে। তবে আমরা অপারেটর পাচ্ছি না।
ফকির ফ্যাশন লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফকির কে. নাহিদ বলেছেন, শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা বেগ পাচ্ছি। এতে প্রায় ১০ শতাংশের মতো আমাদের উৎপাদনের লোকসান হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে এই খাত থেকে রপ্তানি আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, আয় এসেছে তার চেয়ে প্রায় দুই বিলিয়ন বেশি। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে অর্থাৎ জুলাই থেকে নভেম্বর মাসে তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪ বিলিয়ন ১২ কোটি ডলার। তবে এ সময়ে অর্জন হয়েছে ১৫ বিলিয়ন ৮৬ কোটি ডলার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা থেকে আয় বেশি হয়েছে ১২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। করোনার শুরুর দিকে ক্রয়াদেশের অভাবে যেখানে অনেক শ্রমিক ছাঁটাই করেন উদ্যোক্তারা। ঘুরে দাঁড়ানোর প্রেক্ষাপটে শ্রমিক সংকটে এবার ক্রয়াদেশ ছেড়ে দিতে হচ্ছে বলে জানান তারা।
শ্রমিক সংকট নিয়ে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেছেন, ২০ থেকে ২৫ শতাংশ শ্রমিকের ঘাটতি রয়েছে। সেজন্য আমরা সময়মতো অনেক অর্ডারই করতে পারছি না। যে পরিমাণ অর্ডার আমি নিতে পারতাম আমার কারখানার জন্য, আমি সে পরিমাণ অর্ডার আগামী জুন পর্যন্ত শ্রমিক ঘাটতির জন্য নিইনি।
এ দিকে তথ্য বলছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ। পরের অর্থবছরে এসেছে ৩০ বিলিয়ন ডলার। এরপর এক বছরেই ৪ বিলিয়ন ডলার আয় বেড়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা দাঁড়ায় ৩৪ বিলিয়ন ডলারে। করোনার কারণে গত দুই অর্থবছরে কমে গেলেও আবার দ্রুতগতিতে বাড়ছে এই খাতের রপ্তানি আয়।
উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে এই খাতে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৫ বিলিয়ন ডলার।
করোনার আগে ক্রমবর্ধমান ক্রয়াদেশের সঙ্গে দরকার মতো শ্রমিকও পেয়েছেন উদ্যোক্তারা। তাহলে বর্তমানে কেন এই সংকট তৈরি হয়েছে? তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ অর্থনীতি বিশ্লেষকদের। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মোহাম্মাত হেলাল উদ্দিন বলেছেন, প্রাথমিকভাবে আমাদের চিহ্নিত করতে হবে কোন জায়গা থেকে সমস্যা টি হয়েছে। শ্রমিক আসতে চাচ্ছে না, যারা আগে এখানে ছিল। নাকি নতুন করে শ্রমিকের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে।
মতামত লিখুন :