ডেস্ক রিপোর্ট: করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) মহামারীর কবলে বিপর্যস্ত নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে পোশাক শ্রমিকদের অবস্থা সবচেয়ে গুরুতর। দেশের ১৫ শতাংশ পোশাক শ্রমিকের হাতে সংসার চালাবার মতো অর্থ নেই বলে এক জরিপে উঠে এসেছে।
বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের জীবনে কোভিড-১৯ এর প্রভাব নিয়ে সম্প্রতি জরিপ চালিয়েছে কনসালটেন্সি ফার্ম ‘ইনোভিশন কনসালটিং’। জরিপের সার্বিক সমন্বয়ে তাদের সহযোগিতা করেছে ওয়েবএবল ইমপ্যাক্ট।
দেশের পোশাক শিল্পের কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহের ৭টি কারখানার মোট ৮৮ জন শ্রমিক `কোভিড-১৯ এর প্রভাব’ শীর্ষক এই জরিপে অংশ নেন।
এই মহামারীর কবলে বিপর্যস্ত নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে পোশাক শ্রমিকদের অবস্থা সবচেয়ে গুরুতর। ১৫ শতাংশ পোশাক শ্রমিকের হাতে সংসার চালাবার মতো অর্থ নেই। যাদের আছে, তারা বড়জোর আর মাত্র ১৬ দিন সংসার চালাতে পারবেন।
এদের মাঝে ৫৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারীর পরিবারে আরো একজন উপার্জনক্ষম ব্যক্তি রয়েছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে ৯২ শতাংশেরই সেই আয়ের উৎসটি আর নেই।
২৭ শতাংশ শ্রমিক খাবার খরচ কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছেন। ফলে এসব শ্রমিক এবং তাদের সন্তানদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি এখন হুমকির মুখে।
২০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী নিত্যপ্রয়োজনীয় আমিস কেনা বন্ধ করে ফেলেছেন। মে মাসের বেতন না পেলে এমন মানুষের হার ২৯ শতাংশে গিয়েও ঠেকতে পারে।
জরিপে উঠে এসেছে, পুরুষদের (২১%) তুলনায় নারীরা (৩৩%) নিজেদের খাবার খরচের সঙ্গে বেশি আপোষ করেছেন।
এই মহামারীর আঘাতে কেবল শ্রমিকেরাই দিশেহারা নন; ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন গ্রামেগঞ্জে থাকা তাদের আত্মীয়স্বজনও।
জরিপ অনুসারে, ৬৯ শতাংশ শ্রমিক নিজের গ্রামের বাড়িতে আর টাকা পাঠাতে পারছেন না। এক্ষেত্রেও নারীদের ভোগান্তিটা পুরুষদের চেয়ে বেশি। এই দুর্ভোগ সামাল দিতে ৫৭ শতাংশ নারী অন্যের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন, যেখানে কিনা মাত্র ৪০ শতাংশ পুরুষকে এই কাজ করতে হয়েছে।
অংশগ্রহণকারীদের মাঝে ৪৩ শতাংশ পোশাকশ্রমিক মোবাইল ফোনের খরচ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। এবং মে মাসের বেতন না পেলে এই হার বেড়ে ৬৮ শতাংশ হবে।
জরিপ অনুযায়ী, ৮০ শতাংশ শ্রমিকের কোন সঞ্চয়ই নেই। অবশিষ্টদের মাসিক সঞ্চয় ১ হাজার ৯১৮ টাকা। ফলে ৭৪ শতাংশ অংশগ্রহণকারীই আত্মীয়, প্রতিবেশী কিংবা পরিচিতজনের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার কথা ভাবছেন। এই ঋণের বোঝা ভবিষ্যতে তাদের খাদ্য নিরাপত্তা এবং জীবনযাত্রার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
ইতোমধ্যেই পোশাকশ্রমিকদের ঘাড়ে ঋণের পাহাড় জমতে শুরু করেছে। ৭৬ শতাংশ শ্রমিক এখনো ঋণ পরিশোধ করেননি এবং ৭৪ শতাংশ বাড়ি ভাড়া দিতে পারেননি।
মতামত লিখুন :