Logo

আশুলিয়ায় অন্তঃসত্তা হওয়ার অপরাধে পোশাককর্মী চাকরীচ্যুত

Fazlul Haque
বুধবার, এপ্রিল ১৩, ২০১৬
  • শেয়ার করুন

ফজলুল হক, নিজস্ব প্রতিবেদক: অন্তঃসত্তা হওয়ায় এক নারী পোশাক কর্মীকে জোরপূর্বক চাকরীচ্যুত করা হয়েছে। গত ৪ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে আশুলিয়ার ছয়তলা এলাকায় অবস্থিত ফ্যাশন ক্রাফটস লিমিটেডে রত্না (২০) নামের তিন মাসের অন্তঃসত্তা এক গার্মেন্টসকন্যা এ ঘটনার শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি ঐ কারখানায় সুইং অপারেটর হিসেবে চার মাস কর্মরত ছিল। তার কার্ড নাম্বার ১২০৬৩।

সম্প্রতি ফেসবুকে রত্নাকে নিয়ে একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেছে। ফেসবুক ভিডিও থেকে জানা যায়, রত্না অন্তঃসত্তা হওয়ার পরে তাকে হয়রানী ও মারধর করে জোরপূর্বক রিজাইন পেপারে সাইন করিয়ে চাকরীচ্যুত করেছে।


এ ভিডিও’র বিপরীতে আরএমজি টাইমস টীম সরেজমিনে গেলে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক রত্নার এক নারী সহকর্মী জানান, রত্না অন্তঃসত্তা হওয়ার পরে খুশির সংবাদটি তার সহকর্মীদের বলেন। পরে সুপারভাইজার জাহাঙ্গীর আলম তা জানতে পারলে তাকে গালমন্দ করেন এবং বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান। এরপর থেকে রত্নাকে নানাভাবে হয়রানী ও জুলুম করতে থাকে সুপারভাইজার। সকালে এক লাইন তো বিকেলে আরেক লাইন, এভাবে সারাদিন তাকে দিয়ে অমানসিক পরিশ্রম করাতে থাকে। এবং চাকরী থেকে স্ব-ইচ্ছায় অব্যাহতি নিতে চাপ প্রয়োগ করে। কিন্তু তাতেও কাজ না হলে সুপারভাইজার তাকে একদিন মারধরও করেছে বলে অভিযোগ করে রত্না।

রত্না আরএমজি টাইমসকে অভিযোগ করে জানায়, অন্তঃসত্তা হওয়ার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার আগ পর্যন্ত খুব সুন্দরভাবে কারখানায় কাজ করেছি। মাঝে মাঝেই রাত দশটা পর্যন্ত ওভারটাইম করেছি। কিন্তু বিষয়টা জানার পরেই সবাই পাল্টে যায়। সুপারভাইজারসহ বড় স্যাররা বকাঝকা শুরু করে। অস্বাভাবিক কাজের চাপ দিয়ে রাখে। একদিন গালাগালি করার সময় মুখ ফুটে প্রতিবাদ করেছি বলে সুপারভাইজার আমাকে থাপ্পড় মারে। আমার স্বামী সুমন এই কারখানাতেই কাঞ্চাই মেশিন অপারেটর হিসেবে চাকরী করতো। সে এটা দেখে এগিয়ে আসলে তাকেও মারধর করে। পরে আমাদের দুজনকেই এডমিন স্যারের রুমে নিয়ে আমাদেরকে জোরপূর্বক রিজাইন দিতে বাধ্য করায়। এডমিন ম্যানেজার স্যার, এজিএম টিপু স্যারসহ, তখন অনেকেই উপস্থিত ছিল। সবাই মিলে আমাদেরকে গালমন্দ করে রিজাইন পেপারে সাইন করিয়ে বের করে দিয়েছে।

রত্না আরো বলেন, অন্তঃসত্তা হয়েছি জানার পরে আমরা স্বামী স্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে এই মাসটা আমি কাজ করবো। পরে বাসায় থাকবো। কিন্তু এখন দুজনই চাকরী হারালাম। গত মাসের বেতনও পাইনি এখনো। ওই কারখানার সহকর্মীরা বলে, আমাদের নাকি বেতন দিবেই না। আমি মা হবো এটা জেনে যেখানে আমি আনন্দ করবো, সেখানে আজ আমরা দুজন মানুষ চাকরীহীন বেকার জীবনযাপন করছি। অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছি।

এসময় তিনি আরএমজি টাইমসের প্রতিবেদককে প্রশ্ন করে বলেন, আচ্ছা ভাই বলেন তো!!! অন্তঃসত্তা হওয়াটা কি আমাদের জন্য অপরাধ??? যদি অপরাধ না হয়ে থাকে তাহলে অন্যায়ভাবে আমাদের যারা চাকরীচ্যুত করেছে, আমরা তাদের বিচার চাই।

এ বিষয়ে ফ্যাশন ক্রাফটস লিমিটেড এর এমডি রাজিব আরএমজি টাইমসকে বলেন, এ ঘটনাটি পুরো মিথ্যা।কাউকে মারধর কিংবা হয়রানী করে চাকরীচ্যুত করা হয়নি, ওরা দুজন নিজেদের ইচ্ছেয় চাকরী থেকে  অব্যাহতি নিয়েছে। আর মেয়েটা গর্ভবতি ছিল কিনা সেটাও আমাদের জানা নেই।

তিনি আরো বলেন, ওদের সবগুলো অভিযোগ মিথ্যা। যদি অভিযোগগুলো সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে আমি বলছি, ওরা লেবার কোর্টে মামলা করুক। আমরা তা লড়তে প্রস্তুত আছি।

বেতন না দেয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজিব সাহেব বলেন, সাধারণত চাকরী থেকে অব্যাহতি নেয়া শ্রমিকদের চলতি বেতন দেয়ার দুতিন দিন পরে দেয়া হয়। আমাদের কারখানায় এখনো চলতি বেতন চলছে। সবাইকে দেয়া শেষ হলে পরে তাদের বেতন পরিশোধ করা হবে।