ওয়ালিদুর রহমান
ভ্রান্তি ১: এইচআর হল খরচের খাত এবং ”না থাকলেও চলে” টাইপ ডিপার্টমেন্ট।
-প্রথম ভুলটা এখানেই ঘটে।
ভ্রান্তি ২: প্রোডাকশন বা মার্কেটিং সব থেকে জরুরী বা একমাত্র জরুরী বিভাগ। এইচআরকে মনে করেন গতানুগতিক একটি বিভাগ যেখানে তেমন মেধাবীর দরকার পড়বেনা।
-ওয়েল! সেই সবথেকে “এসেনশিয়াল” বা “পশ” বিভাগগুলোর ভিআইপি কর্মী নিয়োগ করে কিন্তু এইচআর। তারা নিজেরা ট্যালেন্ট না হলে ওইসব পশ বিভাগে ট্যালেন্ট লোক নিয়োগ দিতে পারবেনা। ফলাফল অনুমেয়।
ভ্রান্তি ৩: এইচআর বিভাগে কাজ করবে শুধুমাত্র এইচআরে এমবিএ করেছেন এমন কর্মীরা।
-ভুল। এইচআরে থাকতে হবে সব ধরনের শিক্ষাগত ব্যাকগ্রাউন্ডের কর্মীরা।
ভ্রান্তি ৪: এইচআর মানে হল লেবার ল, ডিসিপ্লিন, পে রোল আর OHS ট্রেনিং।
-স্যরি, ওগুলো এইচআরের খুব প্রাইমারি পার্ট। এককথায় এইচআর মানে হল আপনার কোম্পানীর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ এ্যাসেট “মানব” কে আপনার সম্পদে পরিণত করার ও ধরে রাখার যাবতীয় কর্মযজ্ঞ।
ভ্রান্তি ৫: সিইও নিজেই এইচআর। এইচআর বিভাগ শুধু ইন্সট্রাকশন বাস্তবায়ক।
-ওয়েল, তাহলে বাকি সব ডিপার্টমেন্ট কেন অন্যের অধীনে দিয়েছেন? আপনি কেন প্রোডাকশন নন? কেন একাউন্টস নন, শুধু এইচআর কেন?
ভ্রান্তি ৬: ”এইচআরের কর্মী, ভাত ছড়ালে কাকের অভাব নেই”।
-ওয়েল! ভাত ছড়ালে কাক পাবেন, কাকাতুয়াও পেতে পারেন (আপনার কথা স্টেরিও করবে)। তবে কোকিল পাবেন না।
ভ্রান্তি ৭: এইচআরকে যা বলব, তারা শুধু সেটা তামিল করবে। নিজেদের কিছু উদ্ভাবনের দরকার নেই।
-তাহলে একটা রোবট কিনলেই তো ভাল হত। নতুন আইডিয়া কী করে আসবে ওখানে?
ভ্রান্তি ৮: এইচআরের কথা অত মন দিয়ে শোনার কিছু নেই। ওরা শুধু ত্যানা প্যাচানো ঘ্যানর ঘ্যানর করে যা কাল শুনলেও চলবে।
-এইচআর কোনো অপারেশনাল উইং না যে, “ধর তক্তা মার পেরেক” প্যাটার্নে কাজ করবে। এইচআর হল, “মারব এখানে, লাশ পড়বে শ্বশানে” প্যাটার্নে কাজ করার উইং।
ভ্রান্তি ৯: HRD ও HRM এর তফাৎ আছে বলে মনে করেন না।
– HR মানেই হল HR-D। HR-M হল তার একটি পার্ট।
ভ্রান্তি ১০: এইচআরে একান্ত নিজস্ব লোক, পারলে আত্নীয়-স্বজন নিয়ে সাজানো উচিৎ যাতে নিয়ন্ত্রন ও বিশ্বস্ত থাকে।
-স্যরি, শুধু একটি বিভাগকেও যদি রিয়েলি কোয়ালিফাইড লোক দিয়ে সবার আগে সাজাতে হয়, সেটা এইচআর। কোয়ালিফাইড লোক বাদ দিয়ে যদি ’নিজের লোক’ কনসেপ্টকে বেশি গুরুত্ব দেন, তবে সেই নিজের লোকেরা বিপদের সময় শুধু আপনার জন্য চোখের জল ফেলতে পারবে। বিপদ উদ্ধার করতে পারবে না। কোয়ালিফাইড লোক যদি নেন, তারা হয়তো বিপদে চোখের জল ফেলবে না কিন্তু তাদের প্রফেশনাল অবলিগেশন হতেই বিপদ উদ্ধার করতে যা যা করার সব করবে। নিজের লোক যদি কোয়ালিফাইড হয় তবেতো সোনায় সোহাগা।
ভ্রান্তি ১১: এইচআরকে বেশি বেতন দেবার দরকার হয়না।
-ওয়েল, এইচআরের ইমপ্যাক্ট হল ঘরের বউয়ের মতো, ষোলো কলায় পূর্ণ। তাদের যদি ডিমটিভেটেড করে রাখেন, ইমপ্যাক্টটা দীর্ঘমেয়াদী।
ভ্রান্তি ১২: এইচআরের টপ হবেন তার নিজের কেউ কিংবা আর্মি পার্সন।
-ওয়েল, এই বিষয়টাতে নো কমেন্টস।
দারুণ একটি আধুনিক এইচআর প্রতিষ্ঠা করুন। তারপর নাকে তেল দিয়ে ঘুমান কিংবা দুবাই সিঙ্গাপুর ঘুরে বেড়ান। যা করার ওই এইচআরই করে দেবে, আপনার কোম্পানীর জন্য জুতো সেলাই হতে চন্ডিপাঠ-সবকিছুর জন্য উপযুক্ত কর্মীবাহিনী সাজিয়ে দিয়ে আর তাদের বেষ্ট এফিশিয়েন্সি এনসিওর করার দরকারী সব ব্যবস্থা নিয়ে।
লেখক : মানবসম্পদ পেশাজীবি
মতামত লিখুন :