Logo

এন্টারপ্রেনিয়ারশীপ এপ্রোচ: মালিক ও শ্রমিকের যৌথ ভূমিকা

RMG Times
বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ৭, ২০১৭
  • শেয়ার করুন

মোঃ ওয়ালিদুর রহমান : আপনাকে যদি অর্ধেক পানিপূর্ণ একটি গ্লাস দেয়া হয় তবে আপনি কী বলবেন? অর্ধেক খালি নাকি অর্ধেক ভরা? এটা হল অ্যপ্রোচ। আপনি যদি ২০২০ সালে হংকং, সিঙ্গাপুর ও নিউইয়র্কে কোম্পানীর ৩টি শাখা অফিস খোলার একটা স্বপ্ন মনে মনে দেখেন-এটা আপনার ভিশন।

কোম্পানীর ম্যানেজমেন্ট কে বা কারা? আমাদের দেশে ম্যানেজমেন্ট বলতে অধিকাংশ মানুষ “মালিক”কে বুঝে থাকে। একটি রেজিষ্টার্ড কোম্পানীর মালিক বলতে কোনো কনসেপ্ট থাকে না। থাকে উদ্যোক্তার উপস্থিতি। তবে ম্যানেজমেন্ট মানে শুধূ এই মালিক বা উদ্যোক্তাকেই বুঝায় না। এককথায় ম্যানেজমেন্ট হল কোম্পানীর সবরকম কর্মপ্রক্রিয়া ম্যানেজ করেন-এমন ব্যক্তিবর্গ, এটি একটি বডি। তারা সিদ্ধান্ত নেন, নীতি প্রনয়ন করেন, পরিকল্পনা বানান, অনুমোদন প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকেন, মনিটরিং করেন-এককথায় কোম্পানীকে ম্যানেজ করেন, পরিচালনা করেন। তবে আপাতত আমি ম্যানেজমেন্ট বলতে “মালিক”পর্যায়ে বা তাদের মনোনীত টপ অফিশিয়ালদের বোঝাচ্ছি।

খুব সাদামাটাভাবে বলতে গেলে মালিক কেন একটি কোম্পানী তৈরী করেন? উত্তর হল সুসংগঠিতভাবে তার ব্যবসা পরিচালনার জন্য। অন্যদিকে কর্মীরা চাকরী কেন করেন? এককথায়-টাকার জন্য। উভয়ের স্বার্থরক্ষার জন্য উভয়কে প্রয়োজন। একজন মালিককে কোম্পানী চালাতে কর্মী প্রয়োজন আবার চাকুরীজীবিরও চাকুরী করতে কোম্পনীকে প্রয়োজন।

মালিক/উদ্যোক্তা কোম্পানী তৈরী করার পূর্বে অনেকগুলো বিষয় নির্ধারন করে নেন, অনেক প্রস্তুতি নিয়ে নেন, অনেক পরিকল্পনা সাজিয়ে নেন। এসবের মধ্যে তিনি বা তারা কোম্পানীটিকে কী রকম দেখতে চান বা কোম্পানীর কোন ইমেজটি এর সকল স্টেকহোল্ডারের কাছে তুলে ধরতে চান সেটিও নির্ধারন করার ব্যপার থাকে। তিনি কি একটি হায় হায় টাইপের কোম্পানী বানাতে চান? নাকি শুধূই মুনাফাখোর কোম্পানী বানাতে চান? সমাজকল্যাণধর্মী কোম্পানী চান নাকি মুনাফা আর সমাজকল্যাণ দুটোই চান? পুলিশি শাসন নির্ভর কোম্পানী নাকি মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং ভিত্তিক কোম্পানী? যে রকমই হোক না কেন, একটা বিষয় সর্বজনস্বীকৃত তা হল একটি কোম্পানীর নেচার/মোড/ইমেজ/গতিপ্রকৃতি নির্ভর করে মালিক তার কোম্পানীকে কেমন দেখতে চান তার উপর। মালিক তার কর্মীকে কী চোখে দেখবেন? শুধুই কর্মী নাকি কোম্পানীর একজন অংশীদার হিসেবে? (অংশীদার মানে আবার শেয়ারহোল্ডার নয়)। কর্মী আবার তার কোম্পানীকে কী চোখে দেখবে? শুধুই চাকুরীস্থল নাকি তার রুটী-রুজীর পরম ভরসাস্থল হিসেবে? নাকি তার নিজের একটি প্রতিষ্ঠানের মতো? এসব কিছুই এপ্রোচ ইস্যু।

কোম্পানীর সার্বিক চরিত্র নির্ভর করে মালিকের দৃষ্টিভঙ্গি ও ভিশনের উপর। তিনি তার প্রতিষ্ঠানকে কেমনটা দেখতে চান তার উপর ভিত্তি করেই কোম্পানীর গতিপথ প্রবাহিত হয়। মালিক কোম্পানীকে যেমনটা চাইবেন আলটিমেটলী কোম্পানী সেটিই হবে। কোম্পানীর সামষ্টিক সক্ষমতা, আর্থিক সমৃদ্ধি, সুনাম, মার্কেট একসেস, প্রফিট ভ্যলিউম, স্থিরতা, টিকে থাকার সম্ভাবনা-এককথায় কোম্পানীটির আদ্যপান্ত নির্ভর করে মালিকের কোম্পানী চালানোর দৃষ্টিভঙ্গির উপর। দৃষ্টিভঙ্গি বা এপ্রোচ এবং ভিশন শুধু মালিকের একতরফা ইস্যু নয়। মালিক অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট ভিশন ও এপ্রোচ নিয়ে কোম্পানী শুরু করেন তবে একইসাথে তার এপ্রোচ ব্যপকভাবে কর্মীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়। অনেক পুরানো একটি প্রবাদ আছে-পথ পথিকের সৃষ্টি করে না, পথিকই পথ তৈরী করে। তবে আমি বলি পথও পথিক সৃষ্টি করে আবার পথিক পথ তৈরী করে। প্রতিষ্ঠানে প্রতিভাবান ও যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মীদের সমাবেশ হবার অন্যতম পূর্বশর্ত যেমন পজিটিভ, মডার্ণ ম্যানেজমেন্ট এপ্রোচ তেমনি প্রতিভাবান ও যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মীরা ম্যনেজমেন্ট এপ্রোচ ও ভিশনকে ইতিবাচকভাবে বিনির্মাণ ও প্রভাবিত করতে পারে। কর্মীদের সক্ষমতা মালিকেরও সিদ্ধান্ত নেবার সাহস, সক্ষমতা, গতি, প্রকৃতি, নির্ভুলতা, সুক্ষতা ব্যপকভাবে বাড়িয়ে দেয়। আপনি যদি একজন মালিক হন এবং আপনি সবসময় একদল উদ্যমী, যোগ্য, আধুনিক, ভিশনারী কর্মী দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে থাকেন তবে অন্যান্য চমৎকারীত্বের পাশাপাশি আপনি একদল পরামর্শকও পাবেন যারা আপনাকে নিত্য নতুন আইডিয়া, কনসেপ্ট দিয়ে সমৃদ্ধ করবেন। বিপরীতক্রমে একটি আধুনিক, গতিশীল, মেধাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অন্যতম সুবিধা হল এরকম প্রতিষ্ঠান কর্মীদের মেধা, আইডিয়া, যোগ্যতা, ভিশন, এপ্রোচ ইত্যাদিকে আরো শানিত করার চমৎকার সুযোগ সৃষ্টি করে। যে প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের আইডিয়া, এপ্রোচ, মতামত, সৃষ্টিশীল চিন্তার সমাবেশ, সমন্বয়, সংযোগ ও মূ্ল্যায়ন নেই সেখানে কর্মীরাও স্ব-প্রণোদিত হয়ে কোম্পানীকে আইডিয়া দেবেন না।(মূল্যায়ন মানে শুধু বেতনকে বুঝবেন না, মূল্যায়নের মধ্যে তাদের আইডিয়ার যৌক্তিক বাস্তবায়নও অন্তর্ভূক্ত)। এখানে তাদের মেধার অপচয় হয় বলে দীর্ঘ দিন তারা এমন প্রতিষ্ঠানে থাকেন না। অনেক সময় কর্মীরা অভিযোগ করে থাকেন ম্যানেজমেন্টের ভূল পলিসি, বস্তাপঁচা সিদ্ধান্ত, একতরফা রীতি ইত্যাদি ইত্যাদির। এক্ষেত্রে কর্মীদেরও করণীয় রয়েছে। ম্যানেজমেন্টের এপ্রোচকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করার দায় কর্মীদেরও রয়েছে। ম্যানেজমেন্টের ভুল এপ্রোচ শুধু তার একার দায় নয়, প্রতিষ্ঠানের কর্মী বিশেষত সিনিয়র কর্মীদের এক্ষেত্রে ব্যাপক দায়ীত্ব আছে। আর এটিতো সর্বজন স্বীকৃত যে প্রতিষ্ঠানে কর্মীরা যত সিনিয়র হবেন, তারা ততই দৈনন্দিন ক্ল্যারিকাল কাজ হতে নিজেদের সরিয়ে জুনিয়রদের ইনভল্ভ করবেন, আর নিজেরা কোম্পানীকে আইডিয়া সরবরাহ করবেন। সিনিয়ররা কোম্পানীতে শারিরীক শ্রম নয়, আইডিয়া বিক্রি করার বিনিময়ে মূল্যায়িত হবেন। সিনিয়রদের কারিশমা শারিরীক শ্রমের ভলুম মূল্যায়ন নয় বরং আইডিয়া সেলার হিসেবে তার অবদান কতটা সেটা মূখ্য, কতগুলো ক্রিয়েটিভ, মডার্ণ আইডিয়া তিনি দিলেন সেটাই তার ক্ষেত্রে প্রধান বিবেচ্য।

যাহোক ভিশনারী মালিক ও ভিশনারী মেধাবী কর্মী-উভয়ই উভয়কে প্রভাবিত করার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানকে সমৃদ্ধ করে। আর এরকম দুটি পক্ষ একত্র হয়ে গড়ে ওঠে আধুনিক ম্যানেজমেন্ট। ঐযে বলেছিলাম না, ম্যানেজমেন্ট মানে শুধু মালিক নয়, এটা মালিক ও কর্মীর সুষম সমন্বয়।

লেখক : এইচআর প্রফেশনাল