Logo

একটি দারুণ এইচআর সিস্টেমের ব্যবচ্ছেদ

RMG Times
সোমবার, অক্টোবর ৯, ২০১৭
  • শেয়ার করুন

ওয়ালিদুর রহমান : বাংলাদেশের কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোতে এইচআর একটি ডিপার্টমেন্ট হিসেবে তার শক্ত ভিত্তি পাচ্ছে। প্রান্তিক কর্মী সমাজের কাছে এইচআর এখন একটি প্লাটফরম হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নে পিছিয়ে থাকা প্রতিষ্ঠান বা সেক্টর বিশেষত ম্যানুফ্যাকচারিং ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেক্টরেও এইচআর তার কাঠামোগত ভিত্তি পাচ্ছে। বহু প্রতিষ্ঠানে যেরকমই হোক, একটি এইচআর ডিপার্টমেন্ট দেখতে পাবেন। হয়তো ওই এইচআর তার সমস্ত বৈশিষ্টসহ বিদ্যমান নয় কিংবা অর্জন করতে পারেনি তার সকল নর্মস। একটি বিভাগ হিসেবে এইচআর কতটা পূর্নতা বা ম্যাচিওরিটি অর্জন করেছে সেটা জানা যেমন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের জন্য জরুরী তেমনি ওই প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান ও সম্ভাব্য কর্মীদেরও জানাটা দরকার।

একটি প্রতিষ্ঠানের এইচআরএম সিস্টেম কতটা ভাল তার ইন্ডিকেটর কী?-জানতে চেয়ে একটা পোষ্ট দিয়েছিলাম অনলাইনে। স্বাভাবিকভাবেই রেসপন্স রেট ভীষন খারাপ। মানুষ এখন গল্প কবিতাই পড়েনা। তার মধ্যে রসকসহীন একাডেমিক তত্ত্ব নিয়ে কে মাথা ঘামাবে। আমি আমার নিজস্ব পর্যবেক্ষন হতে কিছু ধারনা শেয়ার করছি। তবে প্রফেশনাল একাডেমিশিয়ানদের ধারনার সাথে মিলতে নাও পারে।

১. এমপ্লয়ী জব স্যাটিসফ্যাকশন সার্ভেতে পজিটিভ স্কোর কত। যত বেশি পজিটিভ রেসপন্স তত বেশি পারফেক্ট এইচআর।

২.মাইগ্রেশন রেট কত কম সেটাও প্রতিষ্ঠানের এইচআরের সক্ষমতা ও সাফল্য নির্দেশ করে।

৩. প্রতিষ্ঠানের সিএসআর কর্মকান্ডের পরিধী কত বড় সেটা হতে ধারনা পাওয়া যায় ওই প্রতিষ্ঠানের এইচআর প্রাকটিস কতটা বিস্তৃত।

৪. প্রতিষ্ঠানের বিশেষত এইচআরের কী কী আন্তর্জাতিক রেটিং বা সার্টিফিকেট আছে সেটাও বিবেচনায় নেয়া উচিৎ। আমার জানামতে দেশের বেশকিছু প্রতিষ্ঠান আছে যারা তাদের এইচআরেও সার্টিফিকেশন করিয়েছেন।

৫. আইডিয়া হান্টিং বা যেকোনো কর্মী সার্ভেতে কত দ্রুত ও ব্যাপক রেসপন্স হয় সেটি এইচআরের প্রতি কর্মীদের আস্থা ও এমপ্লয়ী এনগেজমেন্ট রেটের নির্দেশক।

৬. যদি একটি প্রতিষ্ঠানের এইচআর নিয়ে কথা বলতে হয়, তবে দেখতে হবে ওই প্রতিষ্ঠানের ডিসিশন মেকিং ও স্ট্রাটেজি সেটিং এ এইচআরের একসেস কতটা আছে। প্রতিষ্ঠানের এইচআরকে যদি স্রেফ বেতন ধরা বা বাড়ানোতে আটকে রাখা হয় তবে তাদের পক্ষে দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন ঘটানো অসম্ভব।

৭. এমপ্লয়ীদের মধ্যে ওনারশীপ বা সেন্স অব বিলঙ্গিং রেট কত-সেটাও একটি গুরুত্বপূর্ন ইন্ডিকেটর।

৮.দেখার বিষয় কতটা হাই এন্ড ইআরপি সফটওয়্যার ব্যবহার করে ওই প্রতিষ্ঠানের এইচআর। ২০১৭ সালের পৃথিবীতে স্রেফ পে-রোল করার মতো সফটওয়্যার দিয়ে আর যাই হোক, মডার্ন এইচআর বানানো যায় না।

৯. যদি এইচআর সম্পর্কে জানতে চান তাহলে খোঁজ নেবেন, প্রতিমাসে কতগুলো ক্যাপাসিটি বিল্ডিং প্রোগ্রাম করে এইচআর।

১০.ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মী ও বিভাগগুলোর পারফর্মেন্স ম্যানেজমেন্ট এর জন্য কোন মেথড ব্যবহৃত হয় ও কতটা স্ট্রিকটলি সেটা অনুসরন করা হয় এটা হতেই প্রতিষ্ঠানের এইচআরের ভেতরের খবর পেয়ে যাবেন।

১১. কমপেনসেশন ও বেনেফিট স্কীম কতটা লিবারেল ও কর্মীবান্ধব-সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ন।

১২. এইচআর তার কোর সার্ভিস বা কোর জব সম্পাদনে কতটা স্বাধীন-এই একটি ইন্ডিকেটরই হতে পারে সবকিছুর নিয়ামক।

১৩. লিখিত সার্ভিস রুলস আছে কিনা-সেটা দেখে নিন। লিখিত ও অনুমোদিত সার্ভিস রুলস আছে-এমন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা থাকেন সেফ ও সাউন্ড। তাদের এইচআরের অপারেশনাল জব তখন অনেকখানি কমে যায়। দৈনন্দিন ডিসক্রিপ্যান্সি নিয়ে তাদের কম মাথা ঘামাতে হয়।

১৪. রিক্রূটমেন্টের ইয়েল্ড রেশিও কত-সেটিও একটি ভাইটাল ইন্ডিকেটর। এইচআরের সক্ষমতা, দক্ষতা ও প্রতিষ্ঠানের ব্রান্ড ভ্যালুর জন্য এই রেশিও গুরুত্বপূর্ন নির্দেশক।

১৫. প্রতিষ্ঠানের মালিক ডিপার্টমেন্টাল ভাইটালিটি রেটিং এ এইচআরকে কত নম্বরে মনে করেন-তার উপরে এইচআরের ডিগনিটি ও ডিসকোর্স বহুলাংশে নির্ভর করে।

১৬. প্রতিষ্ঠানের মালিক তার প্রতিষ্ঠানের মানব সম্পদকে ক্যাপিটাল হিসেবে কতটা মূল্যায়ন করেন-সেটি নির্ধারন করে দেয় প্রতিষ্ঠানের এইচআরের ডিসকোর্স।

১৭. কর্মীদের জব স্যাটিসফ্যাকশন ও এনগেজমেন্ট বহুলাংশে নির্ভর করে যার ওপর সেটা হল রিওয়ার্ড পলিসী ও পিএমএস এর নিরপেক্ষতা।

১৮. এইচআর কতটা শক্তিশালি ও আধুনিক তা যদি একনজরে দেখতে চান তবে পরীক্ষা করুন ওই প্রতিষ্ঠানে কর্পোরেট কালচার ও গুড গভর্ন্যান্স কতটা বিদ্যমান।

১৯. এছাড়া দেখতে হবে ওই প্রতিষ্ঠানে লিখিত পলিসির ভায়োলেশন কতটা কম। মিনিটে মিনিটে যেখানে ইচ্ছামতো পলিসি বদলায় সেখানে আর যাই হোক, ইমপ্রোভাইজেশন তার স্থান করতে পারবে না।

২০. জব মার্কেটে প্রতিষ্ঠানের ব্রান্ড ভ্যালু কত বেশি-সেটা অনেক বিষয়ের উপর নির্ভর করলেও সেখানে এইচআরের সাফল্য জড়িত।

প্রথাগত এইচআর তাত্ত্বিকরা নিশ্চই আরো কার্যকর ও টু দ্যা পয়েন্ট নির্দেশক সম্পর্কে বলতে পারবেন। আমি যেগুলো বললাম, এগুলোই নিশ্চই সব নয়।

লেখক : মানবসম্পদ পেশাজীবি