Logo

প্রধানমন্ত্রী বরাবর অ্যাকর্ড এর চিঠি, যেন মায়ের চেয়ে মাসীর দরদ বেশী!

RMG Times
মঙ্গলবার, জানুয়ারি ২৪, ২০১৭
  • শেয়ার করুন

আব্দুল আলিম: বাংলাদেশের অর্থনীতির মুল চালিকাশক্তি পোশাক শিল্পের রপ্তানি আয়। দেশের রপ্তানি আয়ের ৮০ ভাগ অর্জিত হয় এই খাত থেকে। বর্তমানে এ খাতে অন্তত ৬ হাজার কারখানায় প্রায় ৪০ লাখ মানুষ কাজ করে। প্রতিবছর এ খাত থেকে অর্জন হচ্ছে ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। স্বাধীনতার সূর্বণজয়ন্তীতে ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন অর্জনের লক্ষ্য মাত্রা অর্জনের স্বপ্ন দেখছি আমরা। গত বছর এ খাত থেকে আয় হয়েছে প্রায় ২৮ বিলিয়ন ডলার। পোশাক শ্রমিকদের বেতন কাঠামো, কর্মস্থলের নিরাপত্তা, রীতিনীতি এবং শিল্পখাতে সহনশীল সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের তৈরি পোশাক শিল্প বিশ্ব দরবারে উচ্চতর মান অর্জন করেছে। পোশাক শিল্পের এমন সফলতাই যেনো চক্ষুশূল হয়েছে দেশী বিদেশী চক্রান্তকারীদের। পোশাক শিল্পকে ধ্বংস করতে আন্তর্জাতিক চক্রান্তে সহযোগিতা করছে এদেশীয় কিছু অসাধু ব্যক্তিবর্গ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব দেশি বিদেশী চক্রান্ত শক্ত হাতে দমন করছেন। শত বাধা বিপত্তি প্রতিকুলতা পেরিয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প। 

সাম্প্রতিক আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় সরকারের ভুমিকার উদ্বেগ প্রকাশ করে কিছু পরামর্শসহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর পত্র দিয়েছে ইউরোপিয়ান ক্রেতা জোট অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ।যেকোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় কারো মন্তব্য বা অভিমত ব্যক্ত করা দোষের কিছু নয়। তবে সকল মন্তব্যকে ঢালাওভাবে গুরুত্ব দেয়া, সমর্থন বা উড়িয়ে দেয়ার আগে আমাদের সাবধানতা অভিমত বা মন্তব্যকে সুচারুভাবে বিশ্লেষণ করে মন্তব্যের উদ্দেশ্য কি তা আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর লেখা চিঠিটিতে অ্যাকর্ড মজুরি বোর্ড গঠনসহ শ্রমিক অধিকার নিয়ে বেশ কিছু পরামর্শ ও অনুরোধ জানিয়েছে। এ কথা কারো অজানা নয় যে বাংলাদেশের শ্রমিকদের বেতন পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের তুলনায় কম যা তাদের সাধারণ জীবন ধারনের জন্য অপ্রতুল। তবে প্রতিবছর শ্রমিকদের বেতন ভাতা সমন্বয়ের জন্য ২০১৩ সালে মজুরী বোর্ড গঠনের মাধ্যমে একটি প্রক্রিয়া দাঁড়িয়েছে। সময়ের আবর্তে সেই প্রক্রিয়া যথার্থ নাও হতে পারে, সেটা নিশ্চয়ই সরকার গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছেন। শ্রমিকরা এ দেশেরই নাগরিক, এই শ্রমিকদের স্বার্থ  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেয়ে নিশ্চয়ই ভিনদেশী কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বেশি ভাববে বলে এ জাতি অন্তত বিশ্বাস করে না। শ্রমিকরাও নিশ্চয়ই এই সত্য মনে প্রাণে বিশ্বাস করে। শ্রমিক আন্দোলন যে সব সময় শ্রমিকদের স্বার্থে না হয়ে ভূতুড়ে কোন স্বার্থেও হয় সেটাও শ্রমিকদের অজানা নয়।    

এ দেশের শ্রমিকদের অনেক দাবি আছে সরকারের কাছে। বিভিন্ন সময় সরকার তাদের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে যখন যতটুকু সম্ভব তা এই সরকার করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে ১৬৬২.৫০ থেকে বাড়িয়ে ন্যূনতম বেতন ৫৩০০ টাকা করেছে আবার হয়তো সময়ের দাবীতে এই সরকারই তা বাড়িয়ে শ্রমিকদের দাবি পূরণ করবে।

শ্রমিক অধিকারের দাবীতে আন্দোলন শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার। এই অধিকার আদায়ে শ্রমিকরা সংগঠিত হবেন, আন্দোলন করবেন, কর্তৃপক্ষের সাথে দর কষাকষি করবেন যা অত্যন্ত স্বাভাবিক এবং দেশের সংবিধান সেই অধিকার শ্রমিকদের দিয়েছে। কিন্তু সেই অধিকারটি শ্রমিকদের স্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে নাকি কোন ষড়যন্ত্রের অংশ সেটা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সরকারের দায়িত্ব এবং সরকারের নিশ্চয়ই শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতেই ব্যবস্থা নিচ্ছে। তারপরও যেকোন পদক্ষেপ এ সমালোচনা হতেই পারে তবে যখন বিভিন্ন কারনে পোশাক খাত একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে পার হচ্ছে সেই সময় একটি দায়িত্বশীল সংগঠনের এই দাবি শ্রমিকদের কোনভাবে যেন উস্কে না দেয় সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে। 

অ্যাকর্ড বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের কারখাার নিরাপত্তা বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করে নিরাপত্তার বিষয়ে পরামর্শ দেয়ার মাধ্যমে এ দেশের পোশাক শ্রমিক জন্য নিরাপদ কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য স্বাক্ষরিত হয়েছে। কারখানার নিরাপত্তার বাইরে অ্যাকর্ডের এমন চিঠি সত্যিই ভাবনায় ফেলে দেয়। যার যা কাজ সেটাই সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করার মধ্যেই সীমাব্ধ থাকা জরুরী। পোশাক কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অ্যাকর্ড যে প্রক্রিয়ায় আগাচ্ছে তাতে আলোচনার চেয়ে সমালোচনাই বেশি। অ্যাকর্ডের চাপে বন্ধ হয়েছে অনেক পোশাক কারখানা। চাকরী হারিয়েছে হাজার হাজার শ্রমিক। সমালোচিত এমন প্রতিষ্ঠানের থেকে দায়িত্বের বাইরে এসে শ্রমিক ও শ্রমিক নেতাদের অধিকার রক্ষায় উদ্বিগ্ন হওয়া আমাদের সন্দিহান করে। সরকারের ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা যেনো মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি এমনটাই মনে হয়। 

বাংলাদেশের পোশাক শিল্প এদেশের মালিক শ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর সরকারের নিরলস তত্বাবধানেই এগিয়ে যাচ্ছে। শত বাধা-প্রতিকূলতাকে পেছনে ফেলে ৫০ বিলিয়ন অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করবে দেশের পোশাক শিল্প এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের। 

লেখক : প্রকাশক, দি আরএমজি টাইমস

ই-মেইল : [email protected]