আব্দুল আলিম : সম্প্রতি ইংল্যান্ড ও ওয়েলস এর গণভোটে সে দেশের জনগণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের সদস্যপদ প্রত্যাহারের (ব্রেক্সিট)প্রতি সমর্থন দিয়েছেন। এই ফলাফল বাস্তবায়ন নিয়ে স্কটল্যান্ড এর বিপরীতমুখী অবস্থান ও পুনরায় ভোট গ্রহনের কথা আলোচিত হলেও বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত হয়তো বাস্তবায়িতই হবে এবং যুক্তরাজ্য থেকে ইইউ ত্যাগ সরে দাঁড়াবে। আর যদি তাই হয় তবে ২০১৮ সাল থেকেই সেটা কার্যকর হবে। এই ঘটনায় বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী পোশাক খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে পাউন্ড ও ইউরোর অবমূল্যায়ন হওয়ায় ব্রিটেনের ক্রেতারা এখন পণ্য আমদানিতে তাদের দর কষাকষির মাত্রা বাড়িয়ে দিবেন এবং যত কম দাম দেয়া যায় সেদিকেই ঝুঁকবেন। ফলে ধিরে ধিরে খরচ বেড়ে চলা বাংলাদেশের জন্য ব্রিটেনে পোশাক রপ্তানি করা কঠিন হয়ে যাবে। আর বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির অন্যতম বড় বাজার হলো ব্রিটেন। তাই ব্রিটেনে রপ্তানি কমলে গোটা পোশাক খাতেই এর প্রভাব পড়বে। এদিকে পোশাক খাতের রপ্তানি কমলে এ খাতের কোম্পানিগুলোর আয় কমে যাবে, এমন শঙ্কায় ইতিমধ্যেই দেশের শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
গণভোটের রায় ঘোষিত হওয়ার পর গতকাল রবিবার প্রথম লেনদেনের দিনে বস্ত্র খাতের প্রায় ৭৭ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর আগের দিনের তুলনায় কমে গেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্যে দেখা গেছে, গতকাল বাজারে বস্ত্র খাতের ৪৩টি কোম্পানির লেনদেন হয়েছে। এরমধ্যে ৩৩টি কোম্পানির শেয়ারদর আগের দিনের তুলনায় কমেছে। আর ৬টি কোম্পানির শেয়ারদর ছিল অপরিবর্তিত। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্রেক্সিটের ফলে দেশের রপ্তানিমুখী বস্ত্র খাতই সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হতে পারে। আর এজন্যই শেয়ার বিনিয়োগকারীরা এ খাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
ব্রেক্সিটের ফলে যুক্তরাজ্যের গোটা অর্থনীতিকে খারাপ সময় পার করতে হতে পারে বলে মত প্রকাশ করছেন দেশি বিদেশি অনেক বিশেষজ্ঞ। আর সে ক্ষেত্রে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি পরিমাণের বাংলাদেশের এই বাজার আক্রান্ত হবে এটাই স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে তারা পণ্যের খরচ কমতে চেষ্টা করবেন। তাদের চাহিদামত মূল্যে পণ্য দিতে না পারলে বিকল্প ভাবতে পারে যুক্তরাজ্য। এ বিষয়ে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু একটি জাতীয় দৈনিককে বলেন, ব্রেক্সিটের ফলে ইতিমধ্যে পাউন্ড ও ইউরোর অবমূল্যায়ন হয়েছে। ফলে ইউরোপের ক্রেতাদের জন্য আমাদের রপ্তানি করা পণ্যের দাম বেশি পড়বে। এর স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ায় তারা আমাদের পণ্যের দাম কমাতে বলবে। এতে আমাদের পোশাক রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি আরো বলেন, যুক্তরাজ্যে আমাদের রপ্তানি প্রায় ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। এই রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া চিন্তার বিষয়। তিনি মত প্রকাশ করেন, ব্রেক্সিটের ফলে যুক্তরাজ্যের গোটা অর্থনীতিই যদি খারাপ হয় তখনো আমরা সমস্যায় পড়ব। কারণ তখন তারা অন্য খরচ ঠিক রেখে পোশাকের খরচই কমাতে চাইবে।
শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ব্রেক্সিটের ফলে গোটা বিশ্বের শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সেই হিসেবে আমাদের শেয়ারবাজারে তেমন প্রভাব পড়েনি। যেহেতু আমাদের পোশাক খাত রপ্তানিমুখী তাই ব্রেক্সিটের ফলে এ খাতেরই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। আর এজন্য এ খাতেই সবেচেয়ে বেশি শেয়ারের দর পতন হয়েছে। তবে তারা এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাজ্য ছাড়াও ইউরোপের অন্যান্য দেশে বাংলাদেশের পোশাক খাতের বিস্তৃত বাজার রয়েছে।
ইতিমধ্যে পাউন্ডের দর ডলারের বিপরীতে ১০ শতাংশ এবং ইউরোর বিপরীতে ৩ শতাংশ কমেছে। যার ফলে খুব শিগগির যুক্তরাজ্যের ক্রেতাদের পক্ষ থেকে আমাদের রপ্তানি পণ্যের দাম কম দেয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমনটি হলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল তা অর্জন করা কঠিন হবে।
এই মুহূর্তেই বাংলাদেশের সরকার ও পোশাক খাত সংশ্লিষ্ট সকলকে ব্রেক্সিটের সম্ভাব্য নেতিবাচক দিকগুলি নিয়ে বিশ্লেষণ করে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
লেখক : সম্পাদক, দি আরএমজি টাইমস
মতামত লিখুন :