Logo

অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স কি বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের  প্রতিপক্ষ?

Fazlul Haque
বুধবার, মে ২৫, ২০১৬
  • শেয়ার করুন

আব্দুল আলিম : বাংলাদেশের গার্মেন্টস কারখানায় ফায়ার এন্ড বিল্ডিং সেফটি  বিষয়ে কাজ করার জন্য ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক খুচরা বিক্রেতা ব্র্যান্ড এবং আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ের শ্রমিক ইউনিয়নের  মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি মোতাবেক অ্যাকর্ড ৫ বছর বাংলাদেশের গার্মেন্টস কারখানাগুলো পরিদর্শনপূর্বক রেমিডিয়েশন কার্যক্রমে কারখানাগুলোর সাথে অংশগ্রহন করার কথা। প্রয়োজনে আর্থিক সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মপরিবেশ উন্নয়ন করার কথা। কিন্তু অনেক ব্র্যান্ড মাঝপথে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে এবং উন্নয়ন কার্যক্রমে সহায়তা করেনি বলে অভিযোগ করেন বিভিন্ন কারখানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এক সামাজিক অনুষ্ঠানে আলাপের ফাঁকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কারখানার উপ-মহাববস্থাপক বলেন, “ডেবেনহাম ও মাটালন নামের দুটি ব্র্যান্ড সংস্কারকাজে সহায়তা না করে কারখানার কাজ বন্ধ করে দেয়।

accordalliance

তিনি আরও বলেন, রানা প্লাজা ও তাজরিন ফ্যাশনের ঘটনায় অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স গঠিত হলেও অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় নিয়েও তাদের অড় অবস্থানের কারনে কয়েক হাজার কারখানার মধ্যে মাত্র ৬ টি কারখানা তাদের শর্ত পুরণ করতে পেরেছে। বাকি কয়েক হাজার কারখানা যদি এত ঝুঁকিপূর্ণ হত তাহলে প্রতি বছর ১০/২০ টি কারখানা ধ্বসে পড়ার কথা ছিল।  কাজ বন্ধ হতো।  চুক্তির মেয়াদ ৫ বছর হলেও ৩ বছর পুরণ হবার আগেই ইতিমধ্যে ২৩ কারখানা টারমিনেটেড হয়েছে যাদের অধিকাংশ ইতিমধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অন্য দিকে অ্যালায়েন্স এর তালিকাভুক্ত ৬৭৬ কারখানার মধ্যে ইতিমধ্যে ৭৯ টি কারখানাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। ফলে বেকার হয়ে পড়েছেন কয়েক লাখ শ্রমিক কিন্তু অ্যাকর্ড/অ্যালায়েন্স চুক্তিভুক্ত কেউ খবর নেয় নি সেসব শ্রমিকদের। শুধুমাত্র তাদের সিদ্ধান্তের কারনে বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানাগুলির শ্রমিকদের অবস্থা সমন্ধে তারা কোন খোজ খবর নেন নি। অনেকেই মনে করেন এসব কারখানার শ্রমিকদের চুড়ান্ত নিষ্পত্তি পর্যন্ত সকল প্রক্রিয়া আইনত হয়েছে কিনা, এ ব্যাপারে অ্যাকর্ড/এলায়েন্স কি ভুমিকা রেখেছে তা প্রকাশ করা উচিত। বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানা শ্রমিকদের চাকরির ব্যাপারে কোন পক্ষ থেকে কোন উদ্যোগের কথাও আমরা জানতে পারি নি। এদিকে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স কর্তৃক বাতিল ঘোষিত কারখানা ছাড়াও সহস্রাধিক কারখানা ইতিমধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

কয়েকদিন আগে গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি বলেছেন ইতিমধ্যে ৬ শতাধিক কারখানা বন্ধ হয়েছে ও আরও তিন শতাধিক কারখানা বন্ধ হওয়ার পথে। মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রী বলছেন ২০১৮ সালের পর আর অ্যাকর্ড /এলায়েন্স থাকবে না। তাঁর মানে সরকার এই ক্রেতা জোটদ্বয়ের কার্যক্রম আর নবায়ন করতে আগ্রহী নয়।

কয়েকজন শীর্ষ স্থানীয় গার্মেন্টস মালিক কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সকে বাংলাদেশের এই শিল্পকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র মনে করেন। কয়েকদিন আগে এক শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিক “ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টর” শিরোনামের এক খবরে উল্লেখ করে যে, “কমপ্লায়েন্সের নামে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের বিধিবহির্ভূত খবরদারি বন্ধ হয়নি। তৈরি পোশাকের আন্তর্জাতিক এই দুই ক্রেতা জোটের অতি বাড়াবাড়ি এখন বদহজমের পর্যায়ে গড়িয়েছে। কারখানা সংস্কারের ধুয়া তুলে এরা একের পর এক অযৌক্তিক ফরমায়েশ ও ব্যয়বহুল প্রেসক্রিপশন চাপিয়ে দিচ্ছে। তাদের বেআইনি ও জোর করে চাপিয়ে দেয়া নানা শর্ত পূরণ করতে গিয়ে উদ্যোক্তাদের এখন হাপিত্যেশ দশা। এদের অব্যাহত চাপের মুখে অতিরিক্ত ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে এ ব্যবসায় অনেকের পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৮শ’ মালিক তাদের কারখানা গুটিয়ে নিয়েছেন। আরও প্রায় চারশ’ গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হওয়ার পথে। এর ফলে এরই মধ্যে বেকার হয়ে পড়েছেন প্রায় সোয়া দুই লাখ শ্রমিক। অবস্থাদৃষ্টে এ সংখ্যা দিন দিন আরও বাড়ছে” ভুক্তভোগীদের বরাত দিয়ে দৈনিকটি উল্লেখ করে “আসলে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স বাংলাদেশের অগ্রসরমান গার্মেন্ট সেক্টরের বিরুদ্ধে বিরাট ষড়যন্ত্রে নেমেছে। তারা মূলত এখানকার গার্মেন্টস ব্যবসা পার্শ্ববর্তী দেশসহ অন্যান্য কয়েকটি দেশে নিয়ে যেতে চায়”

এ বিষয়ে চায়ের টেবিলে কথা বলতে বলতে এক পোশাক কারখানা মালিক বলেন, “আমরা কারখানা করে অপরাধ করেছি, আমরা হাজার হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে অন্যায় করেছি তাই আজ এই সেক্টরের সকল সমস্যায় আমরা মালিকরাই দায়ী। এখন আমরা একটি সুন্দর প্রস্থান খুজে নিচ্ছি, কারন বাংলাদেশ থেকে এ ব্যবসা অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে”।

আজকের এই বাস্তবতায় ক্রেতা পণ্যের মূল্য বাড়াতে রাজি নন, শ্রমিকদের নুন্যতম জীবন ধারনের জন্য চাপ রয়েছে বেতন ও আনুসাঙ্গিক সুবিধা বাড়ানোর এসব নিয়ে তাদের কোন দায়িত্ব নেই বলে অ্যাকর্ড বাংলাদেশ প্রধান সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন।


অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা এই কারখানার পরিবেশ রাতারাতি পরিবর্তন করতে হবে তাও আবার অনেক কিছুই আমাদের আইনে নয় উন্নত দেশের আইনে। এই চাহিদা পুরন করা যে বাংলাদেশের জন্য সহজ হবে না তা হয়তো তাদের আগেই জানা। এক দিকে জিএসপি বাতিল অন্য দিকে নানা কঠিন শর্ত। লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে যাচ্ছে, কোটি কোটি ডলারের বিনিয়োগ রুগ্ন হয়ে যাচ্ছে। সার্বিক দিক বিবেচনায় এটাই প্রতিয়মান হয় যে বাংলাদেশের কারখানাগুলি টিকে থাকতে পারবে না কি না সেটা কোন বিষয় নয়। অন্য দিকে এই শিল্পে তুলনামুলক অদক্ষ, ঝুকি পরিমাপকে বাংলাদেশের পেছনে থাকা, মানবাধিকার লঙ্ঘনে এগিয়ে থাকা দেশগুলিতে প্রতিদিন নতুন কারখানার অভিষেক হচ্ছে। এটা কিসের আলামত? কেন যেন মিলে যায় কোন এক ষড়যন্ত্রের সাথে। তাহলে কি ধ্বংসের পথে আমাদের এই শিল্প? অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স কি কর্ম পরিবেশ উন্নয়ন করতে এসে এই শিল্পের প্রতিপক্ষের ভুমিকায় উপনিত হয়ে গেল?


লেখক : সম্পাদক, দি আরএমজি টাইমস