টিপু সুলতান: সমগ্র বিশ্বে চলমান সংকটে করোনা মহামারি যে তান্ডব চালিয়েছে তার ধকল সইতে বেশ বেগ পেতে হইতেছে। ব্যবসা বানিজ্যে এসেছে অনেক পরিবর্তন। বিশেষ করে যারা ছোট ব্যবসায়ী এবং মাঝারী ব্যবসায়ী তাদের বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্যবসা পূনরায় চালু করা সম্ভব হয়নি। এই সংকটে বিশেষ করে পর্যটন এলাকা বা পর্যটন দেশ মারাত্বক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যা তারা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বাংলাদেশ গার্মেন্ট্স রপ্তানীভুক্ত একটি দেশ,ক্ষুদ্র ভুখন্ডে বিশাল জনসংখ্যার ভার কাধেঁ। ব্যাপক কর্মসংস্থানের একমাত্র জায়গা হলো এই গার্মেন্টস। কিন্ত সামপ্রতিক সময়ে গার্মেন্টস শিল্পে ব্যাপক শ্রম সংকট দেখা যাইতেছে।
এই সংকটের কারন কি ? আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে যদি আলোচনা করি তাহলে অনেক কথা চলে আসবে। তাই সংক্ষেপে বলতে চাই, ৮০ দশক হতে বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্পের যাত্রা শুরু হয়েছে তারপর থেকে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে এই গার্মেন্টস শিল্প দিনের পর দিন এগিয়ে গেছে সামনের দিকে। জনসংখ্যার ভারে নূয়ে পড়া বাংলাদেশে আর্শীবাদ হয়ে আসে এই গার্মেন্টস শিল্প। দেশের অর্থনীতির এক মাত্র বড় চালিকা শক্তি হয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায় সমৃদ্ধির পথে। এই ৮০ দশক হতে ২০২২ সাল এর মাঝে কেটে গেছে ৪০/৪২ টি বছর। এই ৪০/৪২ বছরে অনেক শ্রমিক নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই গার্মেন্টস শিল্পে আবার কেউ কেউ মাালিক বনে গেছেন । অধিকাংশ শ্রমিক গ্রামে ফিরে গেছেন উপার্জিত অর্থ দিয়ে নতুন কিছু করার উদ্যোগে। মোটকথা একজন শ্রমিক সর্বোচ্চ ১০ বছর নিজেকে শ্রমিক হিসেবে রাখেন, এরপর সে তার যোগ্যতার পরিমাপে তার পদ পরিবর্তিত হয়েছে উন্নত পদে নয়তো গ্রামে চলে গেছে সে নিজেকে নতুন কাজে নিযুক্ত করতে। আমার জানা মতে একজন শ্রমিক নিরিবিচ্ছিন্নভাবে ১০ বছর একই কাজ করে না। কাজের পরিবর্তন বা পদের পরিবর্তন হয়ে থাকে। চলমান সময়ের গতিধারায় দিনে দিনে মানুষ তার কাজের ধরন পরিবর্তন করছে। মানুষ এখন একই কাজে নিজেকে নিযুক্ত না করে তারা বিভিন্নমুখী কাজের সাথে জড়িয়ে ফেলেন। যে কাজে সফলতা আসছে সে কাজেই নিজেকে নিয়োজিত করছে। মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগের সহজ মাত্রা মানুষকে আরও গতিশীল করেছে।
নিম্নে বেশ কিছু কারন তুলে ধরা হলো-
১. মানুষ পরিবর্তনমুখী হতে শিখেছে
২. যোগাযোগের সহজমাত্রা মানুষকে আরও গতিশীল করেছে
৩. গ্রাম্য এলাকায় কৃষিজাত উৎপাদনের সাথে সম্পৃক্ততা বাড়ছে
৪. ছোট ছোট খামার প্রকল্প গড়ে তুলছে
১. পোল্ট্রি খামার
২. ছাগল পালন
৩. গবাদি গরু পালন
৪. কটেজ মুরগী খামার
৫. মৎস্য চাষ
৬. সবজি চাষ
৫. গ্রামের রাস্তাঘাট উন্নত হবার ফলে যাতায়াত ব্যবস্থার বাহনও শ্রমিকের আয় রোজগারের বড় একটি ব্যবস্থা তৈরী হয়েছে।
৬. ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কটেজ উৎপাদন যেমন- মুরগী/ হাসের বাচ্চা ফুটানো এবং সেগুলো গ্রামে গ্রামে ফেরি করে বিক্রি করে অর্থ আয়রোজগার বাড়ানোর ব্যবস্থা তৈরী হয়েছে।
৭. বর্তমানে আরেকটি বড় পরিবর্তন এসেছে কৃষি কাজে, তা হলো এখন আগের মতো বড় বড় জমিদার বা গেরস্থরা নিজেরা জমি চাষ করে না। প্রায় সবাই জমি লিজ বা বর্গা দিয়ে তারা নিজেদের জীবনযাত্রা পরিগ্রহ করছেন। ফলে সেই সকল জমিগুলো চাষ করার জন্য এই শ্রমিক ভাই বোনেরা জমি লিজ নিয়ে তারা পুরোদস্তুর চাষি হয়ে জমি জমা চাষ করে তাদের জীবন জীবীকা পরিচালনা করছেন। এই পরিবর্তন একটি বড় পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশের জমি ওয়ালা আর ভুমিহীন মানুষদের জীবনে। প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় তা আবার কোন ভিন্নতা আাসে কিনা তা ভেবে দেখার বিষয় হয়েছে।
৮. গোটা জীবনচক্রের একটি নতুন মাত্রা তৈরী হয়েছে।
৯. গ্রামে উর্পাজনের সুন্দর ব্যবস্থা থাকলে শ্রমিকরা গ্রামেই থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। কারন পিতামাতার দেখভাল এবং ছেলেমেয়ের লেখাপড়া করানো আর যত্ন নেয়া যায় সহজেই।
১০. দিনে দিনে শহর জীবনযাত্রা এবং সাম্প্রতিক সময়ে করোনার মহামারি মানুষকে শহর বিমুখ করেছে।
উপরের আলোচনায় আরও অনেক কারন যোগ করা যাবে,তার ফলশ্রুতিতে বর্তমানে গার্মেন্টস সেক্টরে ব্যাপক শ্রমিক সংকট দেখে দিয়েছে। এছাড়াও গার্মেন্টস সেক্টরের কাজের সবচেয়ে সহজ উপাদান এই বাংলাদেশের শ্রমিক এবং তাদের দ্বারা উৎপাদিত পন্যের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। বহিঃবিশে^ প্রচুর শ্রমিক কাজ করছে। বাংলাদেশের শ্রমিকের চাহিদা অনেক। ফলে প্রতি বছর প্রচুর শ্রমিক মাইগ্রেট করছে দেশের বাইরে। এক্ষেত্রে দক্ষ শ্রমিকগলো বেশি গিয়ে থাকে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে তারপর বিদেশে শ্রমিক পাঠানো উচিত। দিনে দিনে তাই দক্ষ শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত একটি গ্রহনযোগ্য শ্রম কাঠামো গড়ে উঠেনি। মালিক পক্ষ আর অসাধু শ্রমিক নেতাদের নিয়ে যে শ্রম কাঠামো গড়ে তোলা হয় তা কিছুদিন পরেই তা অকার্যকর হয়ে পড়ে।
একটি দক্ষ এবং গ্রহনযোগ্য শ্রম কাঠামো গড়ে তুলতে হলে চাই নিবির পর্যবেক্ষন আর ফ্যাক্টরীর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সংশ্লিষ্টতা। দেশের অর্থ উর্পাজনের এই বৃহৎ সেক্টরকে যেকোন ইস্যুতে তার উন্নয়নের গতি রোধ করা যাবে না। দিনে দিনে দক্ষ শ্রমিক সংকট দেশের উৎপাদনের লাগাম টেনে ধরেছে। শ্রমিকের সরবরাহ ব্যবস্থাকে সচল করতে মালিক পক্ষের জোড়ালো ভুমিকা রাখতে হবে। বেতন ব্যবস্থা কে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া কঠামোয় রাখতে হবে। যে কোন বিবেচনায় এই ব্যবস্থাকে সঠিক রাখলে দেশ বাচঁবে শ্রমিক বাচঁবে।
শ্রমিক সংকটের এই অব্যবস্থাপনা কেউ গুরতর ভাবে নেয় না বলে প্রকৃত পক্ষে মালিক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় অথচ এক জাতের অদক্ষ ব্যবস্থাপক নানা অজুহাত দেখিয়ে এই সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে । শ্রমিক সরবরাহ সব সময় সবার আগে গুরুত্ব দিতে হবে। যে শ্রমিকের উৎপাদনে দেশ এগিয়ে যায় সেই ব্যবস্থাকে কোনভাবে অবহেলা করা উচিত নয়।
লেখক: জেনারেল ম্যানেজার, আলিফ ক্যাজুয়াল ওয়্যার লিমিটেড।
মতামত লিখুন :