ডেস্ক রিপোর্ট: বাংলাদেশি ডেনিম পণ্যের রি-ব্র্যান্ডিংয়ের লক্ষ্যে ঢাকায় বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটিতে শুরু হয়েছে ২ দিনব্যাপী ৬ষ্ঠ বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো। যেখানে অংশ গ্রহণ করেছে চীন, তুরস্ক, স্পেন, ইতালি, পাকিস্তান, জাপান, সান মেরিনো, জার্মানি, ব্রাজিল, ভারত, হংকং এবং বাংলাদেশসহ মোট ১২ টি দেশ। এবারের এক্সপোর প্রধান থিম নির্ধারণ করা হয়েছে ‘ডেনিম নেটওয়ার্ক’। বিদেশি রপ্তানিকারক কোম্পানিগুলোর কাছে দেশে তৈরি ভালো মানের ডেনিমের প্রচারে তৎপর প্রস্তুতকারকেরা।
বুধবার রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারের (বিআইসিসি) নবরাত্রি হলে ডেনিম পণ্যের দুই দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী শুরু হয়, যার আয়োজন করে বাংলাদেশের ডেনিম তুলে ধরার প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো’।
নানা প্রতিকূলতায় ডেনিম রপ্তানিতে ‘প্রাপ্য মূল্য পাচ্ছেন না’ জানিয়ে বাংলাদেশে প্রস্তুত ডেনিম কাপড় ও পোশাকে রপ্তানিকারকদের আস্থা অর্জন করতে চান বলছেন প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া ডেনিমের দেশি প্রস্তুতকারকরা।
চতুর্থবারের মতো আয়োজিত এই প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের ১২টি ডেনিম কাপড় ও পোশাক প্রস্ততকারক প্রতিষ্ঠানসহ ১৩ দেশের ৪৯টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে।
হা-মীম ডেনিম লিমিটেডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মঞ্জুর হোসেন বলেন, “আগে বিদেশি বায়াররা কম দামে ডেনিম কিনতে বাংলাদেশ আসত, একই মানের ডেনিমে আমরা পাকিস্তান, ভারত ও তুরস্ক থেকে দুই-তিনগুণ কম দাম পেতাম।
“আমরা এ প্রদর্শনীতে উন্নত ফেব্রিকস দিয়ে প্রস্তুতকৃত বেশ কিছু ভালোমানের ডেনিমের প্যান্ট নিয়ে এসেছি। বায়ারদের কাছে মেসেজ দিতে চাই- এখানে শুধু ‘চিপ’ (সস্তা) ডেনিম পোশাক তৈরি হয় না, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের টপ ডেনিম প্রস্ততকারক দেশের একটি।”
শুধু প্রস্তুতকারকদের দাবি নয়, বাংলাদেশি ডেনিমের প্রশংসা করতে দেখা গেল প্রদর্শনী ঘুরে দেখা ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত সোফি ওবেরকেও।
প্রদর্শনী ঘুরে দেখার সময় সোফি ওবের বলেন, “বাংলাদেশের ডেনিম আমি নিজেও ব্যবহার করি, এগুলো খুব ভালো মানের।”
এর আগে প্রদর্শনী উপলক্ষে আয়োজিত এক সম্মেলনে সোফি ওবেরের পাশাপাশি বাংলাদেশে জার্মানির রাষ্ট্রদূত থমাস প্রিনস এবং নেদারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত লিওনি মারগারিতা কুলেনারা যোগ দেন।
বছর কয়েক আগে বাংলাদেশি ডেনিমের মান তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম থাকলেও বর্তমানে দেশে সেরা মানের ডেনিম তৈরি হচ্ছে বলে দাবি করেন এম্বার গ্রুপের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রাফাত হাসান চৌধুরী।
“দুই তিন বছর আগেও বিদেশি পোশাক কোম্পানিগুলো কম দামের ডেনিম খুঁজতে এদেশে আসত, বলতে দ্বিধা নেই আমাদের পণ্যের মানও তুলনামূলক খারাপ ছিল, এখন অনেক পরিস্থিতি পাল্টেছে। আমরা দেশেই এখন সেরা মানের ডেনিম তৈরি করছি।”
গুণগত মানের ডেনিম উৎপাদনে এগিয়ে গেলেও এখনও দেশে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, কেমিক্যাল ও মেশিনারিজ ইন্ডাস্ট্রিজ না থাকাকে এখাতে আরও এগিয়ে যাওয়ায় বাঁধা হিসেবে দেখছেন রাফাত।
তিনি বলেন, “আমাদের দেশে ২৬টি ডেনিম ফ্যাক্টরি আছে, যা আমাদের দেশের তুলনায় যথেষ্ট। কিন্তু কাঁচামালে জন্য আমাদের সেই চায়না, থাইল্যান্ড ও ভারতের উপরই নির্ভর করতে হচ্ছে।”
ডেনিমকে ‘গ্রোয়িং বিজনেস’ হিসেবে অভিহিত করে এ ব্যবসায় সম্ভাবনা রয়েছে বলছেন ডেনিম ফেব্রিকস রপ্তানি ও পোশাক আমদানিকারক চায়নিজ কোম্পানি সানডং ডাইয়িন টেক্সটাইল গ্রুপের ঢাকা শাখার ম্যানেজার জীবন কৃষ্ণ বর্মণ।
“একসময় লোকাল ডেনিম প্রস্তুতকারকরা ‘এক্সক্লুসিভ প্রোডাক্ট’ তৈরি করতে পারত না, কিন্তু সেই অবস্থার অনেক পরিবর্তন এসেছে।”
এর আগে সকালে ডেনিম এক্সপো উপলক্ষে বিআইসিসিতে সাসটেইনেবল অ্যাপারেল ফোরাম আয়োজিত ‘মেকিং সাসটেইনেবল ইজিয়ার’ শীর্ষক সম্মেলনে উপস্থিত ফান্স, জার্মানি ও নেদারল্যাণ্ডের রাষ্ট্রদূতদের উদ্দেশে ইউরোপের বাজারে দেশের পণ্যের ‘ন্যায্য দাম’ নিশ্চিতের আহ্বান জানান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
তিনি বলেন, “পোশাক কিনতে রপ্তানিকারকরা যা খরচ করছেন, তা ‘আপ-টু দ্যা মার্ক’ নয়। রপ্তানিকারকরা যদি ন্যায্য দাম দেন তাহলে আমাদের দেশের উৎপাদন ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে।”
এইচএসবিসি ব্যাংকের সহযোগিতায় এ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব ও এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স ও ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন ও এইচএসবিসি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী অফিসার রুবানা হক উপস্থিত ছিলেন।
চীন, ব্রাজিল, জার্মানি, হংকং, ভারত, জাপান, পাকিস্তান, ইতালি, স্পেন ও তুরস্কের অংশগ্রহণে ষষ্ঠবারের মত বসা ডেনিম এক্সপোর এবারের আসর চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত, যা বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
সৌজন্যে : বিডিনিউজ
মতামত লিখুন :