আবীর দে, নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের ক্রমবর্ধমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে গুরুত্বারোপ করেছে।
শনিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে দ্বিতীয় ঢাকা অ্যাপারেল সামিট-২০১৭-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তৈরি পোশাক খাতের কারখানার সংস্কার কার্যক্রমে সহযোগিতা করতে বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও ক্রেতাদের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য বিপুল অর্থের প্রয়োজন। এ ব্যাপারে বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও ক্রেতারা সহায়তা করতে পারেন। সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
পোশাকের বিভিন্নতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন দেশের মানুষ বিভিন্ন ধরনের পোশাক ব্যবহার করে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের ব্যবসায়ীদের উচিৎ শুধু এক জায়গায় না থেকে আপনারা কোন দেশে কোন পোশাকের চাহিদা সব থেকে বেশি তা খুঁজে দেখতে হবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণের উপর গুরুত্বারোপের পরামর্শ দেন।
সময় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, কানাডাসহ অনেক উন্নত দেশই আমাদের এই সুযোগ দিচ্ছে, আমেরিকাই কেবল দিচ্ছে না। অথচ এলডিসি দেশ (স্বল্পোন্নত দেশ) হিসেবে আমাদের সে অধিকার রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, উল্টো এই দেশটিকে আমরা ট্যাক্স দিয়ে যাচ্ছি। বছরে যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশ সাড়ে আটশ’ মিলিয়ন (৮৫ কোটি) ডলার ট্যাক্স দিয়ে যাচ্ছে।
‘এজন্য বলা যায়, আমেরিকা আমাদের ট্যাক্সেও চলে,’ বলেন শেখ হাসিনা।
বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এবং সিনিয়র সহসভাপতি মাইনুদ্দিন আহমেদ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরের অগ্রগতি নিয়ে একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়।
তৈরি পোশাক খাতকে একটি টেকসই উন্নয়ন খাত হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে আয়োজিত এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে টুগেদার এ বেটার টুমরো। এ ছাড়া ২০২১ সাল নাগাদ তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ৫০ বিলিয়ন ডলার অর্জনে কর্মপন্থা প্রণয়ন নিয়েও আলোচনা হবে এবারের সম্মেলনে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী মুজিবুল হক এবং বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডেলিগেশন প্রধান রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়েদুন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে তৈরি পোশাক শিল্প। রপ্তানি আয়ের ৮২ শতাংশই আসে এ খাত থেকে। অনেকে বলছে একমাত্র পোশাকের উপর নির্ভরশীল হওয়া ঠিক হবে না; আমরাও এটাই বলি। তবে এটাই রপ্তানি আয়ের মৌলিক খাত।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, জাতির জনকের স্বপ্নের অর্থনৈতিক মুক্তির পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশ এবং রপ্তানি আয় ৩০ বিলিয়ন (৩ হাজার কোটি) ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
পিয়েরে মায়াদুঁ বলেন, ইউরোপ তার মার্কেটে বাংলাদেশের পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়েছে। এখানকার পণ্য ইউরোপের মার্কেটে জনপ্রিয়তা পেয়েছে বলেও জানান তিনি।
মায়াদুঁ বলেন, বাংলাদেশ অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তৈরি পোশাক খাতে শ্রমিকের অধিকার, কর্মপরিবেশ ও সকলের অংশীদারিত্বের ওপর জোর দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেন, শ্রম পরিবেশ উন্নত করতে বাংলাদেশ নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। সামনে আরো নেবে। এতে আমরা খুশি। প্রতিটি কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন থাকা জরুরি নয়। কিন্তু একটি প্ল্যাটফরম থাকতে হবে যেখানে শ্রমিকরা তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে পারে। শ্রম অধিকার অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
বিআইডিএসের রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের শিল্পকে সামনে এগিয়ে যেতে হলে এখন তিনটি জিনিসের সমন্বয় খুব জরুরি। আর তা হলো, উন্নত কর্মপরিবেশ, স্থিতিশীল পলিসি ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন। এসব বিষয় নিয়ে সরকার ও মালিক পক্ষকে কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন দেশের হাইকমিশনার ও রাষ্ট্রদূত, কূটনৈতিক মিশনের সদস্য, দাতা সংস্থার প্রতিনিধি এবং তৈরি পোশাক খাতের দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা।
২০১৪ সালের প্রথম অ্যাপারেল সামিট অনুষ্ঠিত হয়। ওই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন (বিজিএমইএ) দিনব্যাপী এই দ্বিতীয় অ্যাপারেল সামিটের আয়োজন করে।
মতামত লিখুন :