Logo

শ্রমিক নেতাদের মুক্তি ও হয়রানী বন্ধের দাবীতে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ

RMG Times
বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৭
  • শেয়ার করুন

ফজলুল হক, নিজস্ব প্রতিবেদক : আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় শ্রমিক ও ইউনিয়ন নেতাদের ব্যাপকভাবে গ্রেফতার, হয়রানি ও ছাঁটাই চলছে বলে অভিযোগ এনে গ্রেফতার হওয়া শ্রমিক ও বিভিন্ন সংগঠন / ইউনিয়নের শ্রমিক নেতাদের মুক্তি ও হয়রানী বন্ধের দাবীতে একযোগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ দুতাবাসের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে শ্রমিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো। 

লন্ডনে বাংলাদেশ দুতাবাসের সামনে অবস্থান

বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়নগুলোর প্ল্যাটফর্ম ইউনি গ্লোবাল ইউনিয়ন এবং ইন্ডাস্ট্রি অল এ কর্মসূচির নেতৃত্ব দিয়েছে। তাদের দাবী আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় বাংলাদেশী  ব্যাপকভাবে শ্রমিকদের ছাটাই ও ট্রেড ইউনিয়নের নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। বিভিন্ন সংগঠনের  কার্যালয়গুলো ভাংচুর করাসহ নানাভাবে শ্রমিক নেতাদের হয়রানী করা হচ্ছে। ধরপাকড়ের ভয়ে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ পালিয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। 

ব্রাসেলসে প্রতিবাদী ফেস্টুন হাতে অবস্থানকারীরা

সংগঠন দুটির পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একযোগে “বাংলাদেশ : শ্রমিক ও শ্রমিক নেতাদের মুক্তি দিন” স্লোগান সম্বলিত ব্যানার ফেস্টুন  বাংলাদেশ দুতাবাসের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। #Everydaycount ও #wagesnotjail হ্যাসট্যাগ ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে আন্দোলনের স্থিরচিত্র ও তথ্যচিত্র। 

বার্লিন শহরে বাংলাদেশ দুতাবাসের সামনে অবস্থানকারীরা

তবে বাংলাদেশের শ্রমিক নেতাদের নিয়ে এমন উদ্বেগ প্রকাশ ও প্রতিবাদের ঝড় মোটেও  ভালো চোখে দেখছে না পোশাক খাত সংশ্লিষ্টরা। পোশাক খাতে এই আন্দোলন এই বিরুপ প্রভাব ফেলবে বলে আশংকা করছে শিল্প উদ্যোক্তরা। 

ওয়াশিংনটন ডিসিতে বাংলাদেশ দুতাবাসের সামনে অবস্থানকারীরা।

বিবিসিতে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বিজিএমইএ এর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “ইউনি গ্লোবাল ইউনিয়ন এবং ইন্ডাস্ট্রি অল সম্পূর্ণরূপে একতরফা কথা শুনে এটা করছে। তারা আর কারো কাছ থেকে কোন তথ্য নেয়ার চেষ্টাও করে নি। তথ্য যাচাই করে নি। তারা এখন যে শ্রমিকদের ধরপাকড় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে এটা মোটেই সত্য না। ঘটনাটা ডিসেম্বরে মাসেই শেষ হয়ে গেছে। এটা নিয়ে তারা এখন কথা বলছে।”

এদিকে গত ৩১ শে জানুয়ারী বাংলাদেশে সংবাদ সম্মেলন করে ইন্ডাস্ট্রিঅল গ্লোবাল ইউনিয়নের অন্তর্ভূক্ত বাংলাদেশের ২৩টি শিল্প শ্রমিক সংগঠনের প্লাটফর্ম ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিল (আইবিসি)। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন আইবিসি চেয়ারম্যান আমিরুল হক আমিন। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আইবিসি মহাসচিব কুতুবুদ্দিন আহমেদ। তাঁরা বলেন, হামলা-মামলা বন্ধ না হলে, চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহাল না করা হলে কঠোর আন্দোলন শুরু হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মজুরি বাড়ানোর আন্দোলনের কারণে এ পর্যন্ত ২৭ জন শ্রমিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১৮টি কারখানা থেকে দুই হাজার ৬০০ শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। শ্রমিক সংগঠনের ১৪টি ফেডারেশনের শাখা কার্যালয়ে তালা দিয়েছে পুলিশ। কারখানা মালিক ও প্রশাসনের চাপে শ্রমিকরা ট্রেড ইউনিয়ন করতে পারছে না। এনবিআরের মাধ্যমে ছয়জন শ্রমিক নেতার ব্যাংক হিসাব তলবের নিন্দা করে শ্রমিক নেতারা বলেন, তাঁদের চরিত্র হনন করার জন্য বিজিএমইএ এ কাজ করাচ্ছে। অথচ মালিকরা শ্রমিকদের ভুখা রেখে আমেরিকা, কানাডা, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে সেকেন্ড হোম আর বেগমপাড়া বানাচ্ছেন।

পরবর্তীতে ৫ ফেব্রুয়ারী ঢাকা প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে আইবিসি। এতে বলা হয়, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন, শ্রমিক নেতা বাবু রায় রমেশ চন্দ্র, নাজমা আক্তার, তৌহিদুর রহমান, শামীম নাসরীনসহ ৬ নেতাকে এনবিআরের গোয়েন্দা শাখা থেকে ব্যাংক হিসাব তলবসহ নানা উপায়ে হয়রানির অপচেষ্টা চলছে; এগুলো বন্ধ করতে হবে।

গত ১০ ফেব্রুয়ারী সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত ইন্ডাস্ট্রি অল গ্লোবাল ইউনিয়নের এশিয়া প্যাসিফিক এক্সিকিউটিভ মিটিং এ বক্তব্য রাখছেন নাজমা আক্তার

গত ১০ ফেব্রুয়ারী সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত ইন্ডাস্ট্রি অল গ্লোবাল ইউনিয়নের এশিয়া প্যাসিফিক এক্সিকিউটিভ মিটিং এ উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার। উক্ত মিটিং এ বাংলাদেশের শ্রমিক নেতাদের উপর সরকারের নজরদারী ও হয়রানী বন্ধের দাবী জানানো হয়।