ডেস্ক রিপোর্ট : তৈরি পোশাক শিল্পের দোড়গোড়ায় সর্বাধুনিক বৈশ্বিক প্রযুক্তি তুলে ধরতে বুধবার রাজধানীতে শুরু হয়েছে তিনটি আর্ন্তজাতিক প্রর্দশণী। ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) চারদিনব্যাপী এ প্রদর্শণীগুলোর উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, এমপি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, এমপি বলেন “বর্তমান সরকার ব্যবসা বান্ধব সরকার। দেশের উন্নয়নের আমরা কৃষি পণ্যে ২০ শতাংশ, ফার্ণিচারে ১৫ শতাংশ, প্লাস্টিকে ১০ শতাংশ ক্যাশ ইনসেনটিভ দিচ্ছি। আজকের প্রদর্শণীর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গ্যাপেক্সপো কর্তৃপক্ষ তৈরি পোশাক খাতে নগদ প্রণদনার জন্য যে আবেদন জানিয়েছে তা আমি অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব রাখব।”
তিনি বলেন, “১৯৭২ সালে বাংলাদেশে ২৫ টি পণ্য বিশ্বের ৬৮ টি দেশে রপ্তানি করে যে বাংলাদেশ আয় করতো মাত্র ৩৪৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, বর্তমানে ১৯৬ টি দেশে ৭২৯ টি পণ্য রপ্তানি করে আয় হচ্ছে ৩৪.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আগামী অর্থ বছরে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হবে ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
২০২১ সালে রপ্তানি লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্যাকেজিং শিল্পে ২০২১ সালের মধ্যে রপ্তানির লক্ষমাত্রা ১৮ বিলিয়ন ডলার পৌঁছাতে সার্বিক সাহায্য করবে বর্তমান সরকার।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা সিটি করপোরেশনের (উত্তর) মেয়র আনিসুল হক তৈরি পোশাক শিল্পের স্মৃতিচারণ করে বলেন “বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প একটি ইতিহাস তৈরি করেছে। আশির দশকে যখন আমরা পোশাক শিল্পে আসি তখন আমাদের পোশাক শিল্পের এক্সেসরিজ সব কিছুই বাহির থেকে আমদানি করতে হতো, আমরা কার্টন কিনতাম হংকং থেকে, একটা কার্টনের জন্য তিন মাসে আগে থেকে চিন্তা করতে হতো কিন্তু এখন এই খাত অনেক স্বয়ংসম্পূর্ণ, আগের রাতে অর্ডার করলে পরের দিনই আমাদের হাতে এক্সেসরিস চলে আসে।”
আশির দশকের দশহাজার ডলারের রপ্তানি বাজার আজকে ২৮ বিলিয়ন ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে যার সর্বক্ষেত্রে সবসময় পাশে ছিল তৈরী পোশাক শিল্পের এক্সেসরিস ও প্যাকেজিং সংস্থা বলে জানান, বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্প দেশের কর্মসংস্থানের এক বড় সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে ৪৪ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। এর মধ্যে আশি শতাংশই নারী।
২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার যে পরিকল্পনা রয়েছে, তা বাস্তবায়নে তিনি সরকারকে এই শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টদের সাথে নিয়ে একত্রে কাজ করার অনুরোধ করেন।
‘গার্মেন্টেক বাংলাদেশ ২০১৭’; ‘ইয়ার্ন অ্যান্ড ফেব্রিক র্সোসিং ফেয়ার’ এবং ‘গ্যাপেক্সপো’ শীর্ষক তিনটি প্রদর্শণীতে ২৪টি দেশের ৪০০টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে।
সম্মিলিতভাবে প্রদর্শণীগুলোর আয়োজন করেছে জাকারিয়া ট্রেড আ্যান্ড ফেয়ার ইন্টারন্যাশনাল, এএসকে ট্রেড অ্যান্ড এক্সিবিশন প্রাইভেট লিমিটেড এবং বাংলাাদেশ গার্মেন্ট অ্যাকসেসরিস অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএপিএমইএ)।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, বিজিএপিএমইএ সভাপতি মো. আব্দুল কাদের খান; বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গর্ভনর এস কে সুর চৌধুরী; বিজিএপিএমই এর পরিচালক কে এইচ লতিফুর রহমান আজিম;এফবিসিসিআই’র ভাইস প্রেসিডেন্ট (প্রথম) মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন; বিজিএপিএমইএ ভাইস প্রেসিডেন্ট (দ্বিতীয়) এবং ট্রেড ফেয়ারের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন মতি; বিআইডিএস’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ; আয়োজক প্রতিষ্ঠান জাকারিয়া ট্রেড আ্যান্ড ফেয়ার ইন্টারন্যাশনাল এর প্রধান নির্বাহি টিপু সুলতান ভূঁইয়া এবং এএসকে ট্রেড অ্যান্ড এক্সিবিশন প্রাইভেট লিমিটেডের নন্দ গোপাল কে।
আইসিসিবি’র আটটি হলে শুরু হওয়া পোশাক শিল্পের মেশিনারি এবং এর সহায়ক পণ্যের ১৬তম আর্ন্তজাতিক প্রদর্শণী ‘গার্মেন্টেক বাংলাদেশ ২০১৬’ ৮ম ‘ইয়ার্ন অ্যান্ড ফেব্রিক র্সোসিং ফেয়ার’ এবং ৮ম ‘গ্যাপেক্সপো’ শীর্ষক প্রদর্শণী তিনটি চলবে আগামী ২১ জানুয়ারি, ২০১৭ পর্যন্ত।
আগের আসরগুলোর ধারাবাহিকতায় এবারের প্রদর্শণীতে বাংলাদেশ, ভারত , চীন, দক্ষিন কোরিয়া, তুরস্ক, ভিয়েতনাম, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, শ্রীলঙ্কা, ইতালি, জার্মানি, সিঙ্গাপুর, জাপান, তাইওয়ান, সুইজারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, সুইডেন, থাইল্যান্ড, কলম্বিয়া, মালয়শিয়া, কানাডা, স্পেন, ফ্রান্স এবং হংকংয়ের মোট ৪০০ টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে।
আইসিসিবি’র আটটি হলে চলমান ট্রেডশোগুলোতে মােট ৬০০ টি স্টলসহ ৮০০টি বুথ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো প্রডাক্টিভিটি, সেইফটি, কমপ্লায়েন্স, ইফিসিয়েন্সি, ভ্যালু এডিশন, প্রডাক্ট ডাইভারসিফিকেশন, ফ্যাব্রিক সোর্সিং এবং প্যাকেজিং সংশ্লিষ্ট টেকনোলজি সল্যুশন্স উপস্থাপন করছে।
বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের মধ্যে অন্যতম এবং এই শিল্পের নিরাপত্তা ও কমপ্লায়েন্স নিয়ে প্রত্যাশা নিয়ত বাড়ছে। তৈরি পোশাক প্র¯‘তকারকরা মানসম্মত গার্মেন্ট পণ্য উৎপাদনের দিকে এগিয়ে যা”েছ। এ কারণেই সর্বাধুনিক প্রযুক্তির উৎস তুলে ধরা এবং সেগুলোর কার্যক্রম প্রদর্শণের জন্য ‘গার্মেন্টেক বাংলাদেশ ২০১৭’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রদর্শণীতে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ গার্মেন্ট অ্যাকসেসরিস, মোড়কীকরণ এবং লেবেল, জিপার, ট্যাগ, ট্যাপ, থ্রেড, রিবন, বাটন, রিভেট, লেইস, হুক, ট্রান্সফার ফিল্ম, পেপার, ইন্ক ইত্যাদিসহ সংশ্লিষ্ট মেশিনারি তুলে ধরা হয়েছে।
সবার জন্য উন্মুক্ত এ প্রদর্শণী প্রতিদিন বেলা ১১ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত চলবে। বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে asktradex.com অথবা garmentechdhaka.com ওয়েবসাইটে।
মতামত লিখুন :