নিজস্ব প্রতিবেদক: পবিত্র রমজান। চারিদিকে বাহারী ইফতার আয়োজন। শুরু হয়েছে ঈদের আমেজও। একটু ফুসরত পেলেই পরিবার ও প্রিয়জনদের জন্য কেনাকাটা করতে ব্যস্ত হচ্ছে সবাই। ঈদকে নিয়ে কতই প্রস্তুতি। যেন প্রতিযোগিতা শুরু হবে কে কত নতুন জামা কিনতে পারে। বড়দের তুলনায় ছোট শিশুদের মাঝেই ঈদের আনন্দ বেশি। নতুন জামা ছাড়া ঈদই যেন চিন্তা করতে পারে না শিশুরা। কিন্তু আমাদের পাশেই রয়েছে এমন সব সুবিধা বঞ্চিত ছিন্নমুল শিশু যাদের কপালে জুটছে না একটি নতুন জামাও। অন্যান্য শিশুর মত তাদের মনে ঈদের আনন্দ নেই। একটি জামার অভাবে কোমলমতি পথশিশুদের মন খারাপ থাকে পবিত্র ঈদের দিনেও। অথচ সবাই চাইলে এই ঈদে অন্তত কিছু সংখ্যক পথ শিশুদের আনন্দ দেওয়া যায়। তাদের মুখে হাসি ফোটানো যায়!-
‘ঈদের হাসি ফুটুক সকল প্রাণে...’ প্রতিপাদ্যে পবিত্র মাহে রমজানে এতিম ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সাথে ইফতার ও ঈদের নতুন পোশাক বিতরণের এক মহতি উদ্যোগ নিয়েছে ‘আদিফা জাহান বিনতে আলিম মেমোরিয়াল ট্রাস্ট (আদিফা মেমোরিয়াল ট্রাস্ট)’। এই উদ্যোগের প্রথম আয়োজন গত শুক্রবার (০১ এপ্রিল ২০২৩) নারায়নগঞ্জের চাষাড়া রেলওয়ে স্টেশনের প্লাটফর্মে অবস্থিত ‘লাল সবুজের পতাকা শ্রী শুভ চন্দ্র প্রাথমিক শিশু বিদ্যালয়ে‘ প্রায় অর্ধ-শতাধিক সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে ইফতার সামগ্রী ও ঈদের নতুন পোশাক বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত অনুষ্ঠান আয়োজন বাস্তবায়ন করেন ‘পৃথিবীর মুসাফির’ নামের একটি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
চাষাড়া রেলওয়ে স্টেশনে সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশুদের সাথে আন্তরিক সময় কাটান ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী ও সভাপতি মি. আব্দুল আলিম। এসময় তিনি শিশুদের ইফতার গ্রহণ করেন এবং রঙ-বেরঙের ঈদের নতুন পোশাক উপহার তুলে দেন। নতুন জামা পেয়ে এসময় শিশুদের চোখে মুখে আনন্দের দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ে।
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সাথে সময় কাটানোর অভিজ্ঞাতা শেয়ার করে ট্রাস্টের সভাপতি মি. আব্দুল বলেন, জীবন সমন্ধে বুঝার তেমন একটা বয়স ওদের হয়নি এখনো। কাল কি খাবে সেই ধারনাও নাই ওদের। রেল লাইনের প্লাটফর্মেই খোলা আকাশের নিচে ওদের জীবন। আমাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা কত চিন্তিত আর কত বেশি নিশ্চিত করা যায় তাদের জীবন, এটা ভেবেই আমাদের কেটে যাচ্ছে জীবন। আর পড়ালেখা করার জন্য এক যুবকের করুনায় ওরা পেয়েছে খোলা আকাশের নিচে রেললাইন এর ওপরে এক স্কুল। তারপরও দরাজ কন্ঠে ওরা গেয়ে ওঠে “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি। ” অনেক কষ্ট লেগেছে ওদের দেখে। তবু বেলাশেষে সামান্য ঈদ উপহারে ওদের বাধভাংগা আনন্দে এক চমৎকার বিকেল কেটেছে। যেন আমিও এক জীবন শিক্ষার ক্লাসে ছিলাম পড়ন্ত বিকেলের দুটি ঘন্টা। আল্লাহ ওদের সহায় হোন। এই উদ্যোগে অনেকেই আর্থিকভাবে সহায়তা করেছেন। কেউ নাম প্রকাশে আগ্রহী নয়। সকলের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা।
তিনি “লাল সবুজের পতাকা শ্রী শুভ চন্দ্র প্রাথমিক শিশু বিদ্যালয়”র প্রতিষ্ঠাতা যুবক কাঠমিস্ত্রী মি. শ্রী শুভ চন্দ্রের মহৎ উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, দেশে বিত্তবানের অভাব নেই। তারা একটু দৃষ্টি দিলেই ছিন্নমূল শিশুদের চাহিদা পূরণ হয়ে ভেসে যায়। সমাজপতিদের নিজেদের অফুরন্ত চাহিদা পূরণ করে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কথা ভাবার সময় হয় না। সেখানে একজন ব্যক্তি নিম্নআয়ের সাধারণ এক যুবক কাধে তুলে নিয়েছে শতাধিক সুবিধাবঞ্চিত শিশুর মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেয়ার এক দুঃসাহসী উদ্যোগ। ‘আদিফা মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’ এই তাঁর এই মহতী উদ্যোগে সবসময় সর্বাত্মক সহযোগিতা করে পাশে থাকবে।
উল্লেখ্য, মি. আব্দুল আলিম ও মিসেস সুমাইয়া জাহান দম্পতির অতি আদরের প্রথম সন্তান ফুটফুটে সুন্দর নিষ্পাপ শিশু ”আদিফা জাহান বিনতে আলিম’। রাজধানীর উত্তরা’র বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটোরিয়াল (বিআইটি) এর তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী মাত্র ১১ বছর বয়সি ‘আদিফা’ ২০২১ সালের ২৯ আগস্ট, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎস্যাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন। তাঁরই স্মৃতিতে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কল্যাণে সেবা ও উন্নয়নমূলক কাজ করার লক্ষ্যে ২০২২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘আদিফা জাহান বিনতে আলিম মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’।
মতামত লিখুন :