Logo

গার্মেন্টস কর্মীদের বিনা খরচে উচ্চ শিক্ষা

Fazlul Haque
মঙ্গলবার, মার্চ ২৯, ২০১৬
  • শেয়ার করুন

আরএমজি টাইমস রিপোর্ট : বাংলাদেশের গার্মেন্টস কর্মীদের জন্য বিনা খরচে ‘পোশাক শিল্পে উচ্চশিক্ষা’ কোর্স চালু করেছে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন। যার হাত ধরে উচ্চশিক্ষা হতে বঞ্চিত মেধাবী শিক্ষার্থীরা পাবেন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ।

বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশগুলোতে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন থাকলেও দারিদ্রতার যাতাকলে পড়ে বাল্যবিবাহ কিংবা গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়ে সেই স্বপ্নগুলো অধরাই থেকে যায়। ইউনিসেফের মতে, বাংলাদেশে ৬৫ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয় আঠার বছর আগে। এবং ২৯ শতাংশের বয়স ১৫। দারিদ্রতা বাল্যবিবাহের অন্যতম কারণ। এটি মেয়েদের বিদ্যালয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সবচাইতে বড় বাধাঁ।

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুরের তাপসী গ্রামের মেয়ে রুবিনা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, আমার ১৩ বছর বয়সে বাবা মারা যায়। মা অনেক কষ্টে স্কুলের খরচ জোগাড় করলেও এটি দিনদিন বৃদ্ধি পায়। আমাকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে বিয়ে দেয়ার জন্য বলা হয়। আমি বিয়ে করতে অস্বীকার করি, এবং পরিবারকে রাজি করিয়ে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করি। এরপর স্নাতক করার জন্য ঢাকায় আসি। এখানে অনন্ত গ্রুপের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে মান নিয়ন্ত্রক পরিদর্শক হিসেবে যোগ দেই। আমি ১০ হাজার টাকা বেতন পেতাম এবং আমার ভাইয়ের পড়ালেখার জন্য বাড়িতে টাকা পাঠাতাম। আমি কখোনো ভাবতেই পারতাম না আমার অবস্থার কোন উন্নতি হবে। একদিন আমাদের প্রতিষ্ঠানে এশিয়ান ইউনিভার্সিটির গার্মেন্টস খাতের নারী কর্মীদের জন্য ‘বিনা খরচে উচ্চশিক্ষা’ নামক একটি প্রোগ্রামের আয়োজন করে। আমি আনন্দে নেচে উঠেছিলাম । আমিই প্রথম দাড়িয়ে বললাম আমি আবেদন করব।

চট্টগ্রাম জেলায় অবস্থিত এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন। এখানে এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের ১৫টি দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার জন্য ভিড় জমায়। এর প্রতিষ্ঠাতা কামাল আহমেদ বলেন, আমাদের প্রধান নীতি হল মেধাবীদের খুঁজে বের করা, সে যেই হোক না কেন।

মৌমিতা বৌসিক এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম স্নাতক তিনি ইংল্যান্ডের ব্র্যাডর্ফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকত্তোর ডিগ্রি অর্জন করে বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

তিনি বলেন, দাতব্য প্রতিষ্ঠান দ্বারা গার্মেন্টস কর্মীদের উচ্চশিক্ষার খরচ জোগান দেয়া হয়। এইউডব্লিউ চায় নারীকর্মীদের উচ্চশিক্ষার সময় গার্মেন্টস মালিকরা তার প্রাপ্য মজুরি প্রদান করুক। কারণ তাদের পরিবার এই আয়ের উপর নির্ভর করে। আমি গার্মেন্টস মালিকদের কাছে এই প্রকল্প নিয়ে যাই। প্রথম প্রথম কোন সাড়া পাইনি। কিন্তু তারা আমার আবেগী যুক্তির কাছে হার মানে এবং আমি তাদের বিশ্বাস করাতে সক্ষম হই যে এই উদ্যোগ তাদের খ্যাতি বাড়িয়ে দিবে। ২০১৩ সালের রানা প্লাজা ঘটনায় গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের মালিকদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব প্রতিহত করবে। আমি পোশাক কারখানায় ব্যাপক সাড়া জাগাতে সক্ষম হই এবং ৫ জন মালিক এতে সম্মত হন। তারা কিছু শর্তের বিনিময়ে কর্মীদের উচ্চশিক্ষার জন্য সম্মতি দেন।

এরপর আমি বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে যাই এবং কর্মীদের এই প্রজেক্ট সম্পর্কে বলি। যারা মাধ্যমিক শেষ করেছে তারাই শুধু আবেদন করতে পারবে। তবে তাদের বাছাই করাটা প্রতিযোগীতামূলক ছিল। প্রার্থীরা গণিত, বাঙলা, ইংরেজি বিষয়ে পরীক্ষা দেয় এবং যারা পাস করে তাদের ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হয়। ৬৫৩ জন প্রার্থীর মধ্যে ২২ জনকে এই বছর সুযোগ দেয়া হয়। ইয়াসমিন তার মধ্যে একজন। জানুয়ারিতে সে কলা বিভাগের অধীনে ২ বছরের একটি কোর্সে ভর্তি হয়। আমি কখনো কল্পনা করতে পারিনি আমার মত একজনকে দিয়ে এটি সম্ভব হবে। আমার স্বপ্ন সত্যি হয়েছে।

এইউডব্লিউর চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সোনিয়া আক্তার। বাড়ি টাঙ্গাইলের মুসৌরিয়া। তিনি গ্রামীণ ব্যাংক শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে এখানে ভর্তি হয়েছিলেন। ইতিমধ্যে তিনি মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে কম্বোডিয়া এবং ভারতে ইন্টার্নি করেছেন। সোনিয়া ভারতের প্রথম নারী পুলিশ অফিসার কিরণ বেদীর সাথে নারীদেরকে ব্যাবসায়ে উৎসাহিত করার প্রজেক্টে কাজ করেছেন। এখন তিনি সুইজারল্যান্ডের লুর্সান একাডেমিতে স্কলারশিপের জন্য মনোনীত হয়েছেন।

তিনি বলেন, যখন আমি গ্রাম ছেড়ে আসি আমার সমাজ আমার মাকে আমাকে বাহিরে বের হতে দেয়ার জন্য তিরস্কার করে। কিন্তু যখন আমি আমার লক্ষ্যে পৌঁছাই তারা পুরো বদলে যায়। আমি যখন গ্রামে যেতাম বাস স্টেশন থেকে আমার বাড়ি ৩০ মিনিটের। কিন্তু আমার পৌঁছতে ২ ঘন্টা লাগত কারণ বেশিরভাগ মানুষ আমাকে ডেকে কথা বলত। যারা আমাকে তিরস্কার করেছে আজ তারাই তাদের সন্তানকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে চায়। যদি আমার গ্রামে আমি নারী শিক্ষাকে জনপ্রিয় করে তুলতে পারি তাহলে আমি বিশ্বাস করি সারা বাংলাদেশেও সম্ভব। সূত্র : আমাদের সময় ডটকম