ফজলুল হক, নিজস্ব প্রতিবেদক : গ্রামের নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম রোকেয়ার। দিনমজুর বাবা অসুস্থ্য হয়ে যাবার পর শারিরীক ভাবে কাজ করতে অক্ষম হয়ে যান। মা অন্য মানুষের বাড়ীতে কাজ করে সংসারের হাল ধরেন। রোকেয়া পড়াশোনায় ছিলেন যথেষ্ট মেধাবী। উচ্চ শিক্ষিত হয়ে বাবা মায়ের দুঃখ গোচানোর স্বপ্ন বিভোর রোকেয়া বাবা মাকে দেখাতেন আশার আলো। কিন্তু ভাগ্য তার সহায় ছিল না। অনেক কষ্টে মাধ্যমিক পাশ করলেও অর্থের অভাবে আর উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হওয়া হয়নি তার। অসুস্থ্য বাবা আর দুঃখিনী মায়ের কষ্ট কিছুটা লাঘব করতে শহরে পাড়ি জমান রোকেয়া। ২০১২ সালে এরো অ্যাপারেল লিমিটেড এ নিডলম্যান হিসেবে চাকরীতে যোগ দেয় তিনি। ২০১৪ সালে বিয়ে করেন রোকেয়া। কিন্তু সংসারেও মিলেনি একটুখানি সুখ। যৌতুকের দাবীতে লোভী স্বামী তার উপর চালাতো অমানুষিক নির্যাতন। শুধু নির্যাতন চালিয়েই শান্ত হয়নি স্বামী। রোকেয়া এইডস রোগী বলে গুজব ছড়ায়। কিন্তু মেডিকেল রিপোর্টে তার এরকম রোগের কোনো আলামত পাওয়া না গেলে শেষে স্বামী বলেই দেয় যে, রোকেয়া দেখতে কালো আর কুৎসিত দেখতে; ওর সাথে সংসার চালিয়ে যাওয়া তার সম্ভব না। ২০১৫ সালে বিয়ের এক বছর না পেরুতেই স্বামী পরিত্যক্তা হন অভাগী এই গার্মেন্টস কন্যা। তবুও ভেঙে পড়েনি রোকেয়া। স্বপ্ন দেখেছে এক সুন্দর আগামীর। বেঁচে থাকার তাগিদে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তিনি।
সম্প্রতি তিনি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর ওম্যান’র ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৬৫৩ জন পরীক্ষার্থীর মাঝে মেধাবী ২২ জনের তালিকায় নাম লেখান তিনি। উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন পূরণের পথে যাত্রা শুরু করে রোকেয়া।
রোকেয়া কাজ করেন মোহাম্মদী গ্রুপের একটি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানে । এই প্রতিষ্ঠান থেকে দুইজন নারী গার্মেন্টসকর্মী পাচ্ছেন উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইম্যান গার্মেন্টসকর্মীদের জন্য বিনা খরচে উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। রোকেয়া সাথীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনা খরচে পড়বেন আর মোহাম্মদী গ্রুপ দিবেন তাদের অন্ন-বস্ত্র, মাসিক বেতনসহ আরও নানাবিধ সুযোগ সুবিধা।
রোকেয়া জানান, অবর্ননীয় দুঃখ কষ্টের সময় পার করেছি আমি। স্বপ্ন দেখা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎই স্যারদের কাছে শুনতে পারি, কোম্পানীর সহযোগিতায় বিনামুল্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগের কথা। কোম্পানী থেকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস পেয়ে আমি আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। ভর্তির পরীক্ষায় অংশ নিয়ে আমি ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। আমি খুবই আনন্দিত, কৃতজ্ঞ আমার অফিসের স্যারদের প্রতি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাওয়া আরেক স্বপ্নবাজ তরুণী সাথী বলেন, কখনো ভাবিনি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন পূরণ হবে। বাবা স্বপ্ন দেখতেন আমাকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন। কিন্তু কৃতিত্বের সাথে মাধ্যমিক পাশ করেই পড়াশোনার বন্ধ হয়ে যায় আমার। দিনমজুর বাবা আমার পড়াশোনার খরচ জোগাতে অপারগ হয়ে আমাকে মধ্যবয়ষ্ক এক পুরুষের সাথে আমার বিয়ে দেন। কিন্তু বিয়ের পরে স্বামীর সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারিনি। ভাগ্য আমাকে টেনে আনে মোহাম্মদী গ্রুপের প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু কখনোই কল্পনাও করিনি উচ্চ শিক্ষিত হওয়ার মৃতপ্রায় স্বপ্ন আমার বাস্তবে রুপ নেবে। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর ওম্যানের বিনামুল্যে উচ্চ শিক্ষার বিষয়টি জানার পর থেকে খুব ইচ্ছে স্বপ্ন জেগে ওঠে মনে। স্যারদের আন্তরিকতা, ভালোবাসা আর সার্বিক তত্তাবধানে ভর্তি পরীক্ষায় আমি টিকে যাই। আমি এখন থেকে পড়াশোনা করলেও অফিস থেকে আমার পুরো বেতনসহ সকল সুযোগ সুবিধা পাবো। এই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা জানা নেই আমার!
মোহাম্মদী গ্রুপের এজিএম (এইচআরডি এন্ড কমপ্লায়েন্স) সৈয়দ এহেতাসুম কবীর আরএমজি টাইমসকে বলেন, শ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে উঠা মোহম্মদী গ্রুপ শুধু মুনাফা অর্জনই করছে না, সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে শ্রমিকদের জন্যও কাজ করে যাচ্ছে অবিরত। এরই ধারাবাহিকতায় মোহম্মদী গ্রুপের সম্মানিত ম্যানেজিং ডিরেক্টর রুবানা হকের প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে উচ্চ শিক্ষার জন্য সুযোগ পেয়েছে আমাদের মেধাবী দরিদ্র দুই নারী গার্মেন্টস কর্মী। আমরা গর্বিত। আমাদের কর্মীরা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে একদিন আলোকিত মানুষ হবে।
তিনি জানান, উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাওয়া দুই কর্মীর পাঁচ বছরের কোর্স চলাকালীন সময়ে কোম্পানী থেকে তাদেরকে নিয়মিত বেতন, বোনাসসহ নানাবিধ সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে। তাদের থাকা, খাওয়া ও পড়াশোনায় যেনো কোনো প্রকার অসুবিধা না হয় তা তদারকি করার জন্য এমডি ম্যাডাম আমাদের কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছেন।
মতামত লিখুন :