ডেস্ক রিপোর্ট : নির্মাণাধীন ফ্লাইওভার ধসের ঘটনায় কাঁদছে কলকাতা। গতকাল রাত পর্যন্ত উদ্ধারকৃত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১-এ। ধারণা করা হচ্ছে আরো বহু লোক এখনো ভেঙে পড়া সেতুর নিচে চাপা পড়ে আছেন। যাত্রী ভরা একটি বাসও সেখানে আছে বলে জানাচ্ছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো।
[metaslider id=778]
গতকাল রাতে পশ্চিমবঙ্গের মুখমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির অফিস জানিয়েছে ২১ জনের মৃত্যুর খবর। তাদের নাম ঠিকানাও প্রকাশ করা হয়েছে। তবে ছয়জনের মরদেহ বিকৃত হয়ে যাওয়ায় তাদেরকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন বহু লোক। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থাই গুরুতর।
এ দিকে ফ্লাইওভার ধসের ঘটনায় পরস্পরকে দোষারোপ করছে সেখানকার রাজনৈতিক শক্তিগুলো। ত্রুটি লুকিয়ে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। কলকাতার সচেতন নাগরিক সমাজ আঙ্গুল তুলছে সরকারের দিকে। সব মিলিয়ে আপাতত কলকাতার আলোচনার কেন্দ্রে ফ্লাইওভার ধস।
ফ্লাইওভার ধসে পড়ার ঘটনায় উদ্ধার তৎপরতায় অংশ্রগ্রহণ করেছে ভারতের সেনাবাহিনী। তাদের আন্তরিক ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বহু আহত লোককে উদ্ধার করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণের ফলে উদ্ধার কাজে গতি এসেছে বলেও খবর প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো।
কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা
এদিকে এ ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করা হয়েছে। শুক্রবার আইনজীবী অনিরুদ্ধ সরকার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেলন্ডুরের এজলাসে উড়ালপুল ট্রাজেডির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চেয়ে আবেদন করেন। প্রধান বিচারপতি আবেদন গ্রহণ করেন। যদিও মামলার শুনানির কোনো তারিখ শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ঘোষণা করেননি কলকাতা হাইকোর্ট।
কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী অনিরুদ্ধ সরকার জানিয়েছেন, মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় মাথার ওপর এইভাবে ব্রিজ ভেঙে পড়বে আর এর জন্য সাধারণ মানুষ কোনো বিচার পাবে না সেটা হয় না। জনস্বার্থেই এই বিপর্যয়ের পেছনে সত্যিকারের কারণ খুঁজে বের হওয়ার প্রয়োজন। সে কারণেই তিনি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন বলে জানান।
উত্তর কলকাতার সাংসদ ও তৃণমূল নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্ঘটনার প্রায় ২১ ঘণ্টা পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, উড়ালপুলের নকশা রিমডেলিং করার প্রস্তাব করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু প্রকল্পের প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ায় সেটা করা যায়নি।
কলকাতা পুলিশ গতকাল বৃহস্পতিবার দুটি অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলার ধারা পরিবর্তন করে আজ শুক্রবার সরাসরি খুনের মামলার ধারা যুক্ত করে পোস্তা থানায় উড়ালপুল নির্মাণকারী সংস্থা আইভিআরসিএলের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। শুক্রবার সকালে ভেঙে পড়া ফ্লাইওভার পরিদর্শন করেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। তিনি সেখানে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের জানান, নির্মাণকারী সংস্থার তিনটি অফিস সিল করে দেওয়া হয়েছে এবং সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বোমা হামলা, দাবি কলকাতা উড়ালসেতু সংস্থার!
কলকাতায় বিবেকানন্দ উড়ালসেতু ভেঙে পড়ার ঘটনায় দায় থেকে পার পেতে শুরু থেকেই নানা মন্তব্য করে যাচ্ছে নির্মাণ সংস্থা আইভিআরসিএল। প্রথমে তাদের দাবি ছিল, মান বা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সেতুটি ভেঙে পড়েনি। প্রকৃতিই এর জন্য দায়ী।
এবার ‘বোমা হামলা’র কথা বলতে শুরু করেছে তারা। শুক্রবার (১ এপ্রিল) আইভিআরসিএল’র লিগ্যাল অ্যাডভাইজর শীলা পেদিন্তি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, সেতুটি ভেঙে পড়ার সময় আশেপাশের ভবনগুলোর কাচ চুরমার হয়ে গেছে। এমনও হতে পারে, কোনো ‘বিস্ফোরণের’ কারণে এমনটা হতে পারে। কাজেই তদন্ত যদি করতেই হয়, এ বিষয়েও তদন্ত হওয়া উচিত।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) স্থানীয় সময় বিকেলের দিকে ভূকম্পনের কারণে উড়ালসেতুটি ভেঙে পড়েছে বলে দাবি করে বসে নির্মাণ সংস্থাটি। দুর্ঘটনার সময় ওই এলাকা কেঁপে ওঠার ব্যাপারে স্থানীয়দের মন্তব্যের ওপর ভর করে এ দাবি তোলে আইভিআরসিএল।
কিন্তু এতে মন গলেনি কারোর। কলকাতা পুলিশ এরই মধ্যে নরহত্যাসহ হত্যা চেষ্টা ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে মামলা ঠুকে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, কলকাতায় আইভিআরসিএল কার্যালয়ে সিলগালা করে দিয়েছে। বৃহস্পতিবারই সংস্থাটির সাত শ্রমিককে আটক করা হয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য।
কলকাতা পুলিশের কমিশনার রাজিব কুমার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নির্মাণসংস্থার পাঁচ কর্মকর্তাকে আটক করেছে পুলিশ।
মতামত লিখুন :