ডেস্ক রিপোর্ট : ফের জঙ্গিহানার কবলে ফ্রান্স। প্যারিসের পরে এ বার নিস। বৃহস্পতিবারের এই জঙ্গি হামলায় এখনও পর্যন্ত ৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় ৩০ জন। এদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফলে, নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে সূত্রের খবর।
জাতীয় দিবস ‘বাস্তিল েড’ উদ্যাপন উপলক্ষে এ দিন বাজির প্রদর্শনী দেখাতে নিসের সমুদ্র সৈকতে জড়ো হয়েছিলেন প্রচুর মানুষ। প্রদর্শনী শেষে তাঁরা যখন বাডি ফিরছিলেন, সেই সময়েই ভিড়ের মধ্যে একটি সাদা রঙের ট্রাক ঢুকে পেড। পুলিশ জানিয়েছে, ট্রাকে শুধুমাত্র চালকই ছিল। প্রথমে ট্রাক থেকে গুলি ছোড়া শুরু হয়। এর পরে ভিড়ের মধ্যে দিয়েই চালিয়ে দেওয়া হয় ট্রাক। গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই বেশ কয়েক জনের প্রাণ যায়। ভিড়ের উপর প্রচণ্ড গতিতে ছুটে আসা ট্রাকের ধাক্কায় ছিটকে পড়েন মানুষজন। তার চাকার তলায় পিষ্ট হয়ে মারা যান অনেকে। অনেকের দেহ টানতে টানতে অনেকটা দূরে নিয়ে যায় ট্রাকটি। এ ভাবে মানুষজনকে টেনেহেঁচড়ে প্রায় দু’কিলোমিটার নিয়ে যাওয়া হয়। তাতেও অনেকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশের দাবি ট্রাক চালককে গুলি করে মারা হয়েছে। গুলিতে ট্রাকের সামনের অংশ পুরো বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছে। সামনেটা গুলিতে প্রায় ঝাঁঝরা। আহতের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। পুলিশের দাবি, ট্রাকটি গুলি-বারুদে ঠাসা ছিল।
ঘটনার পরেই ফ্রান্সের প্রেসিেডন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁ জরুরি বৈঠকে বসেন। যুদ্ধকালীন তত্পরতায় পরিস্থিতি মোকাবিলার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। জরুরি অবস্থার মেয়াদ তিনি আরও তিন মাস বাড়িয়ে দিয়েছেন। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ফ্রান্সের জনগণের পাশে দাঁডানোর বার্তা দিয়েছেন।
এখনও পর্যন্ত ঘটনার দায় কোনও জঙ্গি সংগঠান স্বীকার করেনি। প্রসঙ্গত বৃহস্পতিবার আইএস-এর যুদ্ধমন্ত্রী শিশানি-র মৃত্যুর কথা স্বীকার করে নিয়েছে জঙ্গি সংগঠন আইএস। এই হামলা তার বদলা কি না তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে বিশ্ব জুড়ে।
এর আগে গত বছরের নভেম্বরে প্যারিসে এক জঙ্গি হামলায় ১৩০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এটিকে একটি ‘ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা’ অবিহিত করে ওবামা হামলাকারীদের বিচারে ফ্রান্সকে যুক্তরাষ্ট্র সব ধরনের সহায়তা দেবে বলে জানান।
হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, নিস শহরে এই ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় অনেক সাধারণ নাগরিক হতাহত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের পক্ষ থেকে তিনি ওই হামলার নিন্দা জানাচ্ছেন। এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ওবামা বলেন, পুরোনো বন্ধু ফ্রান্সের পাশে যুক্তরাষ্ট্র সব সময় আছে। আমরা জানি এই হামলা ও প্রাণহানির ক্ষত ফ্রান্সকে অনেক দিন বয়ে বেড়াতে হবে।
ডেমোক্রেটিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ও রিপাবলিকান দলের সম্ভাব্য প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পও এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
বিবিসি জানায়, মঙ্গোলিয়ার উলানবাটরে আজ শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এশিয়া-ইউরোপ শীর্ষ সম্মেলনের (আসেম) শুরুতেই নিস শহরে নিহতদের স্মরণে নীরবতা পালন করা হয়। ওই সম্মেলনে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল, ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-মার্ক এঁহু, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আসেমভুক্ত দেশগুলোর শীর্ষ নেতারা অংশ নিয়েছেন।
এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেছেন, প্যারিসে নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাস মার্কিনিদের ব্যাপারে খোঁজখবর করছে। কেরি এক বিবৃতিতে বলেন, এই দুঃসময়ে যুক্তরাষ্ট্র ফ্রান্সের পাশে থাকবে। ফ্রান্সকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা ও সমর্থন দেবে যুক্তরাষ্ট্র।
টুইটার বার্তায় অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল নিস হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, বাস্তিল ডে আয়োজনে নিস শহরে হামলায় নিহতদের জন্য অস্ট্রেলিয়া শোকাহত।
মঙ্গোলিয়ায় অবস্থানরত চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং এক বিবৃতিতে সব ধরনের সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানান এবং ফ্রান্সের নিস শহরে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। এদিকে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে নিস হামলায় আহতদের মধ্যে দুজন চীনা নাগরিক থাকার কথা বলা হয়েছে।
নিস হামলার কয়েক ঘণ্টা পরই এক সংবাদ সম্মেলনে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ নিস শহরে নিহতদের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জ্ঞাপন করেন। তিনি জানান, আহতদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ আরো বলেন, ফ্রান্সে সন্ত্রাসী হামলার হুমকি মোকাবিলায় পুলিশের সঙ্গে ১০ হাজার সেনাসদস্য থাকবে। একই সঙ্গে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে পুলিশকে সহায়তার আহ্বান জানান তিনি।
মতামত লিখুন :