Logo

আইনী-পর্যালোচনাঃ শ্রম আইন- অসদাচরনের তদন্ত ও বরখাস্ত

RMG Times
শনিবার, জুন ৩০, ২০১৮
  • শেয়ার করুন

ড. উত্তম কুমার দাস: বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (২০১৩ সনের সংশোধনীসহ) কোন শ্রমিকের বিরুদ্ধে কি-ভাবে অসদাচরণের অভিযোগ উত্থাপন করতে হবে এবং কি-ভাবে তার সুরাহা করতে হবে তার বিধান দিয়েছে। এর সঙ্গে রয়েছে বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫।

কোন কোন বিষয় অসদাচরনের আওতায় পড়বে তা শ্রম আইনের ২৩(৪) ধারায় তালিকাবদ্ধ করা হয়েছেঃ

(ক) ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আইনসঙ্গত বা যুক্তিসঙ্গত আদেশ না মানা। তা কোন শ্রমিকের এককভাবে কিংবা সংঘবদ্ধ হয়ে অবাধ্যতা।

(খ) মালিকের ব্যবসা বা সম্পত্তি চুরি, আত্মসাৎ, প্রতারণা বা অসাধুতা।

(গ) শ্রমিকের নিজের বা অন্যের চাকরী সংক্রান্ত বিষয়ে ঘুষ নেয়া বা দেয়া।

(ঘ) ছুটি-ছাড়া অভ্যাসগত অনুপস্থিতি অথবা ছুটি না নিয়ে এক সঙ্গে ১০ দিনের বেশী অনুস্থিতি।

(ঙ) অভ্যাসগত দেরীতে অনুপস্থিতি।

(চ) প্রতিষ্ঠানে প্রযোজ্য কোন আইন, বিধি বা প্রবিধানের লঙ্ঘন।

(ছ) প্রতিষ্ঠানে উচ্ছৃঙ্খল বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা, অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর।

(জ) কাজে-কর্মে অভ্যাসগত গাফিলতি।

(ঝ) অনুমোদিত চাকরী সংক্রান্ত, শৃঙ্খলা বা আচরণসহ, যে কোন বিধির অভ্যাসগত লঙ্ঘন।

(ঞ) মালিকের অফিসিয়াল রেকর্ডের রদবদল, জালকরণ, অন্যায় পরিবর্তন, উহার ক্ষতিকরণ বা হারিয়ে ফেলা।

তবে কোন শ্রমিক উপরের যে কোন অপরাধ করলেও নীচের ধাপসমূহও পালন না করে তাঁর বিরুদ্ধে অসদাচরণের দায়ে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যাবেনা [শ্রম আইনের ২৪(১) ধারা]। অবশ্য পালনীয় ধাপসমূহ হ’ল-

(ক) লিখিতভাবে অভিযোগ করা।

(খ) সংশ্লিষ্ট অভিযোগের একটি কপি অভিযুক্তকে দেয়া এবং তার জবাব দেয়ার জন্য অন্ততঃ সাতদিন সময় দেয়া (সাত কর্ম- দিবস নয়)।

(গ) শুনানীর সুযোগ দান।

(ঘ) মালিক ও শ্রমিকের সম-সংখ্যক প্রতিনিধি নিয়ে তদন্ত কমিটির তদন্তে অভিযুক্ত দোষী সাব্যস্ত হওয়া।

(ঙ) মালিক বা ব্যবস্থাপক বরখাস্তের আদেশ অনুমোদন করা।

আরএই তদন্ত ৬০ দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে। এখানে আইনের উদ্দেশ্য হ’ল অভিযুক্তকে যাতে করে ঝুলিয়ে না রাখা হয় সে জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।

অসদাচরনে অভিযোগে অভিযুক্ত কোন শ্রমিককে তদন্ত সাপেক্ষে সাময়িক বরখাস্ত করা যাবে। তবে অভিযোগের বিষয় আদালতে বিচারাধীন থাকলে সাময়িক বরখাস্ত করা যাবেনা। আর সাময়িক বরখাস্তের মোট  মেয়াদ ৬০ দিনের অধিক হবে না।

তার মানে কোন ক্ষেত্রে সাময়িক বরখাস্ত ৬০ দিনের বেশী হলে তা অবৈধ হবে- সংশ্লিষ্ট অভিযুক্ত শ্রমিক এই মর্মে অনুযোগ দিতে এবং তাঁকে অবিলম্বে পুনর্বহালের দাবী করতে পারবেন।

এখানে কিছু বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা দাবী রাখে। কোন ফৌজদারী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড যেমন চরম শাস্তি তেমনি একজন চাকরীজীবী তথা শ্রমিকের জন্য বরখাস্ত চরম দণ্ড। তাই অসদাচরনের অভিযোগ আনয়ন, তদন্ত, বরখাস্ত-আদেশ অনুমোদন এবং জারীর মাধ্যমে তা কার্যকর করা- সকল ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা এবং ন্যায় বিচারের নীতি অনুসরণ করার কথা বলা হয়েছে। প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন মামলার রায়ে মাননীয় উচ্চ আদালত এসব সিদ্ধান্ত ও পরামর্শ দিয়েছেন। তবে এর জন্য কোন সরল-ফর্মুলা নেই। সংশ্লিষ্ট ঘটনার প্রেক্ষাপট ও কার্যকারণের নিরিখে তা করতে হবে।

যিনি অভিযোগ আনবেন, আইনের আলোকে তার সুরাহা ও শাস্তি বিধান (যদি আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হয়) তার দায়িত্ব।

এক্ষেত্রে যদি দেখা যা যে অভিযোগ আনয়ন, তদন্ত বা শাস্তি বিধান- এর কোন পর্যায়ে আইনের বিধান কিংবা ন্যায় বিচারের নীতি অনুসরণ করা হয়নি তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে ন্যায় বিচারের জন্য আদালতের দারস্থ হতে পারেন।

একটি উদাহরণ দেই- অভিযোগ আনয়নের দিন থেকেই অভিযুক্ত শ্রমিককে সাময়িক বরখাস্ত করা হ’ল এবং তাঁকে কারখানায় আসতে নিষেধ করা হ’ল। তার মানে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত। কিন্তু দেখা গেল- যে তারিখে তদন্ত নোটিশ ইস্যু করা তার পর দিনই সকাল ১০ টা কিংবা ১১ টায় তদন্ত কমিটি তদন্তে বসার কথা; তাও আবার প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়ে! 

ন্যায় বিচারের নিরিখে প্রশ্ন আসবে- নোটিশটি কখন জারী হ’ল এবং কি- ভাবে? অভিযুক্ত ব্যক্তি তার নিজের প্রস্তুতি, তার পক্ষে কাগজপত্র বা সাক্ষী যোগাড়ের জন্য যথেষ্ট সুযোগ পেলেন কি না?

আর এখন আইন ও বিধিমালা যেভাবে তাতে অভিযুক্ত শ্রমিককে তদন্ত কমিটিতে তার নিজের প্রতিনিধি মনোনয়ন দেয়ার সুযোগ দিতে হবে এবং তা তার লিখিত প্রস্তাবক্রমে করতে হবে। মালিকপক্ষ কাউকে মনোনয়ন দিয়ে তাতে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকের সায় নিলে তা আইন ও বিধিসম্মত হবেনা।

লেখক: এডভোকেট, হাইকোর্ট বিভাগ, সুপ্রীম কোর্ট অব বাংলাদেশ।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এটি কোন পূর্ণাংগ আইনী সমাধান নয়। প্রাপ্ত ঘটনার আলোকে মতামত মাত্র। আপনার কোন সমস্যা থাকলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ কোন আইন জীবীর পরামর্শ নিন। সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন থাকলে আমাদের লিখে জানাতে পারেন; সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ আইনজীবীরা মতামত বা পরামর্শ দিবেন, আর তাসম্পূর্ণ বিনা-খরচে।

[email protected]।