ড. উত্তম কুমার দাস : আমার এক শিক্ষক জানতে চেয়েছেন এনজিওদের ক্ষেত্রে শ্রম আইন প্রযোজ্য হবে কি না? সবার সুবিধার্থে উত্তরটি এখানে পেশ করছি-
আমাদের দেশে শ্রম-নিয়ন্ত্রণ (Regulation of employment relations) এবং চাকরী-সংক্রান্ত বিষয়ে মুলতঃ দু’ধরনের আইন প্রযোজ্য- সরকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা, ১৯৮৫ এবং অন্যদের জন্য বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (এবং তার বিধিমালা, ২০১৫)।
এছাড়া প্রতিষ্ঠানভেদে তাদের নিজস্ব বিধিমালা থাকতে পারে; যেমন- সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ পুলিশ ইত্যাদি।
শ্রম আইন কাদের কাদের জন্য প্রযোজ্য তা ঐ আইনের প্রথম অধ্যায়ে বলা হয়েছে। আবার কাদের জন্য এই আইন প্রযোজ্য হবে না তাও আইনের ধারা ১-এ বলা হয়েছে। ১(৪) ধারার (ঘ)- তে যে সব প্রতিষ্ঠান বা তার শ্রমিকদের উপর শ্রম আইন প্রযোজ্য হবে না তার মধ্যে রয়েছে- “(ঘ) অসুস্থ, অক্ষম, বৃদ্ধ, দুঃস্থ, প্রতিবন্ধী, পরিত্যাক্তা মহিলা বা শিশু, অথবা বিধবাদের চিকিৎসা, যত্ন বা সেবার জন্য পরিচালিত কিন্তু মুনাফা বা লাভের লক্ষ্যে পরিচালিত নহে, এই-রূপ কোন প্রতিষ্ঠান;”
তবে তা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করা ও শিল্প-সম্পর্কের ক্ষেত্রে। অন্য ক্ষেত্রে নয়। (অর্থাৎ অন্য ক্ষেত্রে শ্রম আইন প্রযোজ্য হবে)।
আর কোন এনজিও (বা বেসরকারী সংগঠন) মুনাফা করাসহ ব্যবসা-বাণিজ্যে নিয়োজিত থাকলে তার ক্ষেত্রে শ্রম আইন (ও প্রাসঙ্গিক অন্যান্য আইন) সরাসরি প্রযোজ্য হবে।
আবার শ্রম আইনেরই ৩ ধারায় বলা হয়েছে, যে সকল প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে (শ্রম আইন) প্রযোজ্য নয় সে সকল প্রতিষ্ঠান উক্ত আইনের প্রদত্ত কোন সুযোগ-সুবিধার চেয়ে কম সুযোগ-সুবিধা দিয়ে কোন নীতি, বিধি-বিধান, হাউজ-পলিসি করতে পারবে না।
অর্থাৎ এর ব্যাখায় বলা যায়, যদি কোন এনজিও মুনাফা করে না এমন কোন কার্যক্রমে
[ধারা ১(৪)(ঘ)] যুক্ত থাকে তাহলেও তারা পরোক্ষভাবে শ্রম আইনের আওতায় পড়বে- তাদের শ্রমিক ও কর্মীদের নিয়োগ এবং চাকরী- নিয়ন্ত্রণ করা সংক্রান্ত বিষয়ে।
অর্থাৎ এক কথায়, কোন এনজিও মুনাফা করুক আর না করুক তাতে কর্মরত ব্যক্তিদের চাকরী ও নিয়োগ-সংক্রান্ত নিজস্ব বিধি-বিধান করার ক্ষেত্রে শ্রম আইনের আওতায় তা করতে হবে। আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় কোন দায়মুক্তি না থাকলে আন্তর্জাতিক এনজিও বা সংস্থার ক্ষেত্রেও এই ক্ষেত্রে শ্রম আইন প্রযোজ্য হবে।
যেমন- তাদের শ্রমিক ও কর্মীদের ছাঁটাই, বরখাস্ত, চাকরীচ্যুতি, পদত্যাগ, অবসর প্রভৃতির ক্ষতিপূরণ ও সুযোগ-সুবিধা শ্রম আইন অনুযায়ী দিতে হবে।
কোন প্রতিষ্ঠানের ক্ষতিপূরণের ও সুযোগ-সুবিধার পরিমাণ শ্রম আইন নির্দেশিত বিধানের চেয়ে বেশী হলে সমস্যা নেই; কম হলেই শ্রম আইন প্রদত্ত (নুন্যতম) মানদণ্ড মানতে হবে।
এর দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট নিয়োগকারীর। আর এহেন বিধি-বিধান শুধু সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান তৈরি করলেই হবে না। আইন-বিধি নির্ধারিতই ভাবে সরকারের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর থেকে তার অনুমোদন নিতে হবে। ২০১৫ সনের ১৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা চালু হওয়ার পর এক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়েছে। অমান্য করার ক্ষেত্রে শ্রম আইনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা রয়েছে।
আর কে শ্রমিকের সংজ্ঞার আওতাও পড়বে তা তার পদবী দেখে নয়, বরং তার কাজের ধরণ বিবেচনায় নির্ধারিত হবে বলে আমাদের উচ্চ আদালত থেকে সিদ্ধান্ত রয়েছে।
এনিয়ে কোন মতান্তর হলে সংশ্লিষ্ট আদালত (এই ক্ষেত্রে শ্রম আদালত) তার সমাধান দিবেন।
(মতামত লেখকের নিজস্ব, এর সঙ্গে তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক সংশ্লিষ্টতার কোন সম্পর্ক নেই )।
দ্রষ্টব্য: এই লেখা শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে তৈরি। আপনার সমস্যার জন্য সংশ্লিষ্ট আইন দেখুন এবং এই বিষয়ে অভিজ্ঞ আইনজীবীর সংগে পরামর্শ করুন।
লেখক : এডভোকেট, সুপ্রীম কোর্ট অব বাংলাদেশ, ই-মেইলঃ [email protected]
মতামত লিখুন :